বৃহস্পতিবার, আগস্ট ০৬, ২০১৫

আইন সবার জন্য সমানভাবে চলছে না : বিএনপি

হাওয়া ডেস্ক : আইন সবার জন্য সমানভাবে চলছে না বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন গতকাল বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইন এখন সবার জন্য সমান নয়। একেকজনের জন্য একেকরকম বিচার চলছে। আমরা দেখছি, একই যাত্রায় দুই ফল। আইন কারো জন্য চলে দ্রুত গতিতে, আবার কারো জন্য চলে ধীরগতিতে। আইন ও বিচার এসব সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। তারপরও আমরা বিচারকদের প্রাজ্ঞতা ও ন্যায় পরায়নতার প্রতি আস্থা রাখতে চাই। গ্যাটকো দুর্নীতির মামলায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিচারের বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির পক্ষে তিনি একথা বলেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে খাটো বা অসম্মান করে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। আজ বুধবার হাইকোর্ট গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুই আবেদন খারিজ করে স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছে। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক ও কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, শাম্মী আখতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গ্যাটকো মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে দলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান রিপন
বলেন, আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিৎ। সমানভাবে আইনের প্রয়োগ হওয়া উচিৎ। আমরা দেখছি, এক যাত্রায় দুই ফল হচ্ছে। আমরা দেখতে পাই- সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মো. এরশাদের বিরুদ্ধে কিছু মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়। সেখানে তারিখ মাসের পর মাস পরে হয়। আবার আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে, সেটার সপ্তাহে, সপ্তাহে তারিখ পড়ছে। এটা বিচারকের ব্যাপার। বিচারক মহোদয় বোধ হয় দ্রুত নিষ্পন্ন করতে চান। অন্যদিকে হুসেইন মো. এরশাদের মামলার যে বিচারক আছেন, তিনি হয়ত অনেক ধীরে সুস্থে বিচার বিশ্লেষণ ও চিন্তা-ভাবনা করে মামলাটি পরিচালনা করতে চান। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এরশাদের মামলার বিচারক বদলির পর নতুন করে মামলার কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, নতুন করে শুনার মানে হচ্ছে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা। বেগম খালেদা জিয়ার মামলার বিচারকও বদলে গিয়েছিলো। তিনি হুসেইন মো. এরশাদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের মতোই নতুন নতুনভাবে শুনতে পারতেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি- আসলে বিচারাঙ্গণে সমানভাবে সবকিছু হচ্ছে না। কেবল তাই নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, তাদের মামলাগুলো স্থগিত হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা বাতিল হয়ে গিয়েছে। নাইকো-গ্যাটকো মামলা তার বিরুদ্ধেও (শেখ হাসিনা) ছিলো, তা স্থগিত অথবা বাতিল হয়ে গেছে। এ জন্য আমরা বলছি- এক যাত্রায় দুই ফল হচ্ছে। একই স্রোতে দুটি ভিন্ন মোহনা হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখনো আমরা বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে দেশে এক অব্যবস্থা বিরাজ করছে। আজকের পত্রিকায় এসেছে, শাসক দলের এমপি বলেছেন, যারে সামনে পাইবি মাইরা ফেলা। এই হচ্ছে শাসকদের উম্মত্ততা। এতে করে দেশে নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলাকে আরো উসকে দেয়া হচ্ছে। বিরোধী দলকে দমন করে দেশে গণতন্ত্র টিকে না মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সরকার উল্টো পথে হাটছেন। নিজে গণতন্ত্রের কথা বলছেন। একটা পাতানো সংসদ করে, হাটছে উল্টো পথে। আইন-বিচার সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। ‘আমরা আর বিভাজন চাই না- জাতীয় ঐক্যমত চাই’ সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এই বক্তব্যে সাধুবাদ জানিয়ে রিপন বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন। যার যার প্রাপ্য সম্মানের কথা বলেছেন। এসব খুবই জরুরি। আমরাও একমত যে, জাতীয় নানা ইস্যুতে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া উচিৎ। কাউকে অবহেলা কিংবা কাউকে ছোট করে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায় না। সেইসাথে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে কটাক্ষ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমুর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন আসাদুজ্জামান রিপন। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই- মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনে যাদের বীরোত্তপূর্ণ ভুমিকা ছিলো, এদেশের রাজনীতি বিনির্মাণে যাদের ভুমিকা ছিলো যেসব জাতীয় নেতৃবৃন্দ সবাইকে আমরা সম্মান জানাতে চাই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মহান ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানকে খাটো করে, অসম্মান করে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা ঐক্যের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা প্রতিশোধ পরায়ন নই। সবাইকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় এই অনুষ্ঠানে সৈয়দ আশরাফের সাথে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় মীরজাফরের ভূমিকায় ছিলেন মোশতাক আর জিয়া লর্ড ক্লাইভের ভূমিকায় আসল নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে খুন করিয়েছিলেন।’

1 টি মন্তব্য: