মৃত্যুর
পরে শুধু পত্রিকার শিরোনাম
হয়ে
থাকলো বিএনপি নেতা রফিকুল
সিরাজুম সালেকীন ॥ রাজধানীর ৫৬ নম্বর
ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিকুল হত্যাকান্ডে কাউকে আটক বা
হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি আইনশৃংখলা বাহিনী। ৪ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও শুধু পত্রিকার শিরোনাম হয়ে রইলেন রফিকুল। পরিবার ও বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবী আইনশৃংখলা বাহিনীর লোকেরাই
তাকে পরিকল্পিত ভাবে তাকে হত্যা করেছে। তবে প্রশাসনের দাবী
এ হত্যাকান্ডের সাথে তারা জড়িত নয়। এ দিকে রাজধানীর ৫৬
নম্বর ওয়ার্ডে লাশের তালিকা ক্রমেই বেড়ে চলছে। সর্বশেষ সেই তালিকায় আর একটি নাম উঠে আসলো। নিহতের পরিবার জানায়, বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদার ৪ জানুয়ারী শুক্রবার রাতে তাঁর শ্বশুর বাড়ি ঝিনাইদহের
শৈলকুপার আনন্দ নগর গ্রামে বেড়াতে আসেন। পরের দিন ৫ জানুয়ারী
শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাদা মাইক্রো যোগে কালো পোষাকধারী ৭/৮ জন র্যাব পরিচয়ে রফিকুল
কে শ্বশুর বাড়ি থেকে তুলে আনে। পরের দিন রাতে রফিকুলের
লাশ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আদাবাড়িয়া মাঠে খোদাই করা পুলিশ লেখা হ্যান্ডকাপ পড়া অবস্থায়
উদ্ধার হয়। পোষ্টমর্টেম রিপোর্টে
নিহত রফিকুলকে গলায় ফাঁস দিয়ে ও ভোতা জাতীয় কোন অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা
হয়েছে বলে উল্লেখ আছে। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে
বিএনপি বলছে, বিগত দিনের মত বিএনপির
আন্দোলন সংগ্রামে ৫৬ নং ওয়ার্ড থাকে ব্যাপক নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি। বিরোধী দলে আন্দোলনে ও সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছিলো। ঠিক সেই মুহুর্তে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হলো রফিকুলকে
হত্যা করে। গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু
বলেছেন, বিএনপির নেতারা অভিযোগ
করে বলেছে রফিকুলকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অপহরন করে হত্যায় করেছে। কিন্তু এ সরকারের বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নেতা অথবা
নিরপেক্ষ কোন ব্যক্তিকে বিনা বিচারে হত্যা করার নীতি নেই। এমনকি বর্তমান সরকারের চার বছরে বিএনপির কোন নেতাকর্মীদের উপর কোন অত্যাচার বা নির্যাতনের
ঘটনা ঘটেনি।
নিহত রফিকুলের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ঝরার অভিযোগ আইনশৃংখলা
রক্ষাকারী বাহিনী তার স্বামীকে হত্যা করেছে। ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী
আলম গুম হওয়ার পর প্রশাসনের লোকেরা বিনা কারনে নানা ভাবে তার স্বামীকে হয়রানী করতো। সেই সাথে আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে
ব্যাপক পরিচিতি পায় রফিকুল। সে কারনে রাজনৈতিক
প্রতিহিংসায় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
শৈলকুপা থানার ওসি আব্দুল বারী দৈনিক হাওয়াকে জানান, আজ (শুক্রবার) নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা বা অভিযোগ করা
হতে পারে বলে আমি জেনেছি। হত্যাকান্ডে কাদের
নাম থাকতে পারে মামলা হলেই বোঝা যাবে।
এদিকে রাজধানী ঢাকার প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সব সময় এগিয়ে থাকে। আর এ কারনে এই ওয়ার্ডে
অনেক নেতাকর্মীকে লাশের মিছিলে যোগ দিতে হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় যারা রাজনীতি করেন তারা প্রতি মুর্হুতে গুম
আর খুনের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। দুই বছর আগে এই এলাকার
সবচেয়ে জনপ্রিয় কমিশনার রমনা থানা বিএনপির সভাপতি, ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বিএনপির নির্বাহী সদস্য কমশিনার চৌধুরী আলম গুম হওযার পর এখনো তার কোন হদিস মেলেনি।
এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি নজরুল ইসলাম, জাসাস নেতা মিন্টু, যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম সহ অনেকেই এই ওয়ার্ডে রাজনীতি করতে গিয়ে নৃশংস ভাবে প্রতিপক্ষের
গুলিতে কিংবা ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত হয়ে নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ সেই তালিকায় আর একটি নাম উঠে আসলো। র্দীঘদিন যাবত ৫৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত
এবং বঙ্গবন্ধু হকার্স মার্কেটের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম মজুমদার সমপ্রতি
৫৬ নং ওয়ার্ডে নবগঠিত কমিটিতে সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব্ব পালন করে আসছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে আরও বলা হচ্ছে, কারা রফিকুল ইসলাম মজুমদারকে অপহরন করেছিলো। মৃত্যুর পর তার হাতে হাতকরা পরা অবস্থার দৃশ্য স্বাভাবকি ভাবে
মনে হয় তাকে প্রশাসন থেকেই অপহরন করে কুমারখালীতে নিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে
দিয়েছিল। এই নৃশংসতা দেখে তারা
বলছে দেশ কি আবার ৭৪’এ ফিরে গেলো। ১৯৭৪ সালেও এভাবে নদীর
পাড়ে বিভিন্ন খালে, জলাশয়ে রাজনৈতিক কর্মীদের
রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতো।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নাল
আবেদীন লাশ উদ্ধারের পরে মিডিয়া কর্মীদের কাছে বলেছিলেন, বিএনপি নেতা রফিকুলের লাশ পুলিশের হ্যান্ডক্যাপ পরা অবস্থায়
উদ্ধার হলেও পুলিশ এ হত্যাকান্ডে সাথে জড়িত নই। এছাড়া পুলিশ লেখা হ্যান্ডক্যাপ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। পুলিশের এমন বক্তব্যে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
কুষ্টিয়া র্যাব-১২ ও ঝিনাইদহ র্যাব-৬ বরাবরই এ ঘটনার সাথে
জড়িত নই বলে দাবী করছে। তারা বলছে র্যাবের
পোষাক পরে সন্ত্রাসীরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়া র্যাবের পক্ষ
থেকে একটি দল কাজ করছে বিষয়টির সুষ্টু তদন্তে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত ৯ টায় কুমারখালী কাচিকাটা ব্রীজ নামক স্থানে মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে কালো পোষাকপরা কয়েকজন অস্ত্রধারী একজন কে জোর করে টেনে মনোহরপুর গ্রামের আদাবাড়ী
ক্যানালের পাড়ে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের
সাথে মৃত বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলামের চেহারায় মিল থাকার কারনে গ্রামের সাধারন মানুষ
ইউপি চেয়ারম্যান কে হত্যা করা হচ্ছে ভেবে একত্রিত হয়ে অপহরন কারীদের ধাওয়া করে। অপহরনকারীরা দ্রম্নত ঘটনা স্থল থেকে পালিয়ে যায়। অপহরন কারীরা বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদারকে হ্যান্ডকাপ
পড়িয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। লাশ দেখে স্থানীয়রা
কুমারখালী থানায় খবর দেয়। পরে বিএনপি নেতা রফিকুল
ইসলাম মজুমদারের ছোট বউ আয়েশা সিদ্দিকা ঝরা থানায় এসে লাশ সনাক্ত করেন।
রফিকুল নিহতের পর পরিবারটি ব্যাপক নিরাপত্তায় ভূগছে। এখন পরিবার জুড়ে চলছে শোকের মাতম।
এটা বাংলাদেশ কেউ মরলে কারোর আসে যায়না। আর এ কারনে হত্যাযজ্ঞ করে ছাড় পেয়ে যায়।
উত্তরমুছুন