সোমবার, অক্টোবর ০৭, ২০১৩

হিলি সীমান্তে বেড়েই চলেছে নারী-শিশু পাচার ও অবৈধ অনুপ্রবেশ

দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে ভারত ও বাংলাদেশে লোক যাতায়াত বৃদ্ধি পেয়েছে।এই সুযোগে স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় পাচার হয়ে যাচ্ছে নারীওশিশু-কিশোররা। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সীমান্তরক্ষীদের হাতে দু’একজন ধরা পড়লেও সিংহ ভাগই পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। উপজেলার হিলি সীমান্তের চিত্রটা এমনি যে, হিলির বুক চিরে বয়ে যাওয়া রেল লাইনটাই ভাগ করে রেখেছে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত। দুই সীমান্তের হাট বাজারের নামও হিলি , যার মৌজা আর জেলার নাম একই। এলাকার ঘনবসতি এতটাই কাছাকাছি যে, এক লাফে রেল লাইনটা পার হলেই যাওয়া যায় ভারত। আর দাললের মাধ্যমে মানুষের মাঝে মিশে অনায়াসে চলে যাওয়া যায় ভারত অভ্যন্তরে। এসব সীমান্তে বসবাসকারীদের সাথে রয়েছে দালালদের সখ্যাতা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারীÑশিশু-পুরুষ এনে সীমান্তের নিদিষ্ট দালালদের পছন্দমত বাড়িতে রাখা হয়। পরে সুযোগ বুঝে জনপ্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে বিজিবির কিছু অসাধু সদস্যকে ম্যানেজ করে পার করে দেয়া হয় সীমান্তের ওপারে। দালাল চক্রটি দেশের বিভিন্ন জেলার অভাবি অঞ্চলে গিয়ে বিভিন্ন বয়সী ছেলে মেয়ে ও কিশোরদের ভারতে ভালো কাজ দেবার কথা বলে হিলি সীমান্তে নিয়ে আসে এবং পাচার করে দেয় ভারতে। হিলি সীমান্তের চেকপোষ্ট, চুরিপট্রি রেলগেট, ষ্টেশন এলাকা, বালুরচর, ডাববাগান,এসব এলাকা দিয়ে এসব লোক পারাপার হয়ে থাকে । আর এসব অবৈধ পারাপারের অন্তরালে পাচার হয়ে যায় অনেক নারীও শিশু-কিশোররা। তেমনি দিল্লির ইট ভাটায় কাজ নিয়ে দেবে বলে ডেকে আনে দালাল চক্রের সদস্যরা, ভারতে পাচার করে দেওয়ার সময় স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় বিজিবি সদস্যরা নুরুজ্জামান
নামের এক যুবকসহ ৬ জন নারী ও পুরষকে আটক করে। গ্রেফতারকৃত নুরুজ্জামান হোসেন জানান,তার বাড়ী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায়। কালাম নামের এক দালাল তাদের এলাকা থেকে বহু লোককে ভারতে কাজ দেবার কথা বলে এখানে এনেছে। তাকেও তারা ইট ভাটায় কাজ দেবার কথা বলে নিয়ে আনে। পরে ভারতে নিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবি’র হাতে আটক হয়েছে। হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় বিজিবির হাতে উদ্ধার হওয়া গার্মেন্টস কর্মী স্মৃতি আকতার জানান, বেড়ানোর কথা বলে তার প্রেমিক হিলিতে নিয়ে আসে। পরে শাঁখা-সিঁদুর পরিয়ে ভারতে পাচার করে দেওয়ার সময় বিজিবি সদস্যরা তাকে উদ্ধার করার পর জানতে পারে তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ১৪ বছর বয়সের রবিউল ইসলাম বলতে পারে না তার পূর্ণ নাম ঠিকানা। সে ৪ বছর বয়সে হিলি সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে ভারতে যায় । পরে ধরা পড়ে যায় পুলিশের হাতে। ৪ বছর জেল খাটার পর সে সহ ১৮ জন ভারতের শোভায়ন হোম থেকে পালিয়ে এসে আবার ধরা পড়ে সীমান্তে বিজিবর হাতে। এ দিকে পবিত্র ঈদ উল আজহা ও দুর্গা পুর্জা উপলক্ষে হিলি সীমান্তে চোরাচালানসহ বৃদ্ধি পেয়েছে অবৈধ অনুপ্রবেশ । হাকিমপুর থানা অফিসার ইনচার্জ আহসান হাবিব জানান, বিজিবি গত ৩ মাসে হিলি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে শ’ খানেক নারী-শিশু-পুরুষকে উদ্ধার দেখিয়ে মামলা করেছে। হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাজা মুদ্দিন জানান, হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতে পাসপোটধার্রী যাত্রী পারপার হয়ে থাকে। তবে ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টের পার্শ¦বতী এলাকা দিয়ে অবৈধ পথেও লোক পারপার চলছে এমন অভিযোগ তাদের কাছেও রয়েছে। হাকিমপুর উপজেলা নিবার্হী অফিসার, মো: আজহারুল ইসলাম জানান, উপজেলা আইন শৃংখলা সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় হিলি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে লোক পারপার ও পাচারের বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করা হয়। সেই সাথে দালালদের চিহিৃত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিজিবিকে জানানো হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন