শনিবার, জানুয়ারী ১৯, ২০১৩

ইবিতে ছাত্রদলের ৫৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রশাসন ও ছাত্রলীগের দুইটি মামলা


ছাত্রদল সভাপতিসহ ১০ নেতাকর্মীকে জেলে প্রেরণ


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের উপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রলীগ বাদী হয়ে ইবি থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছে। ইবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তৌফিকুর রহমান হিটলার বাদী হয়ে ইবি ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে দন্ডবিধির ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬, ৩৬০, ৩৭৯, ১১৪ ধারা এবং বিষ্ফোরক মামলার ৩ ও ৪ ধারায় এই মামলা (মামলা নং-৮) দায়ের করে। মামলার আসামী হিসেবে আটককৃত ইবি ছাত্রদলের সভাপতি ওমর ফারুক, সহ-সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রিপন, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক আরিফুল ইসলামসহ ১০ জন ছাত্রদল নেতাকর্মীকে জেলে পাঠানো হয়েছে।  এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আক্তারুল ইসলাম জিল্লু বাদী হয়ে অজ্ঞাত সংখ্যক ব্যক্তিকে আসামি করে ইবি থানায় একটি মামলা (মামলা নং-৯) করেছে।  পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডার সজিব গুলি চালানোর ছবি দেশের অসংখ্য জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন ও ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি পুলিশের অস্ত্র ছাত্রলীগের কেউ ছিনিয়ে নেয়নি। সংঘর্ষের সময়
পুলিশ গুলি চালিয়েছে। সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগ ক্যাডার সজিবের বহণ করা অস্ত্রটি কার এবং তা উদ্ধারের জন্য পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন-‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।’
এবিষয়ে জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও ইবির সিনিয়র শিক্ষক প্রফেসর ড. এমতাজ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন-‘ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আমার বাসায় অশ্রয় নিয়েছে এমন অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নির্দেশে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা যৌথ ভাবে আমার বাসায় ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। আমার বাসার কাজের ছেলে আনিসকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। তিনি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন এটি ভবিষ্যতের জন্য আমাদের কাছে শিক্ষা হিসেবে থাকলো।
এদিকে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত ইবি ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক সবুরে নিশান সৌরভকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা ও হেড-নেক সার্জারী বিভাগের ৩০৩ নং ওয়ার্ডে ১৭ নং বেডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আহত সৌরভের নাক, মুখ ও চোখের উপরের অংশে ২০টি সেলাই দেয়া হয়েছে। সে ডান চোখে ভালভাবে দেখতে পাচ্ছেনা ও কথা বলতে পারছেনা। আহত সৌরভকে গতকাল শুক্রবার ইবি ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল হাকিম সরকার, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি আব্দুল কাদের জুয়েল ও সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব দেখতে গিয়েছেন।
ইবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাইমিনুল ইসলাম সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম রাশেদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আগামী সোমবারের মধ্যে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সভাপতি ওমর ফারুকসহ আটককৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। একই সাথে ছাত্রদলের উপর হামলার ঘটনায় উস্কানী ও প্রত্যক্ষ মদদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি জানানো হয়েছে। দাবি পুরণ না হলে মঙ্গলবার থেকে সর্বাত্মক ছাত্রধর্মঘটসহ কঠোর আন্দোলনের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। উদ্বুত পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সকল দায়ভার বহন করতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন-‘উদ্বুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমি সকল শিক্ষক সংগঠনের সাথে আলোচনা করে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামীকাল সকল শিক্ষক সংগঠনের সাথে মতবিনিময় করা হবে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. ইকবাল হোসেন বলেন- ‘ক্যাম্পাসে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কোন নিরাপত্তা নেই। বিশ্ববিদ্যায় প্রশাসন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে চুড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাই কোন শিক্ষক শনিবার ক্যাম্পাসে যাবেন না। ভিসি যদি শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে বসতে চান তা হলে কুষ্টিয়া শহরে আসতে হবে।’


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন