সোমবার, ফেব্রুয়ারী ০৪, ২০১৩

এক বছরেও ফিরে আসেনি ইবির অপহৃত দুই শিবির নেতা : স্বজনদের আহাজারি থামেনি

রাশেদুন নবী রাশেদ, ইবি প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রশিবির নেতা দাওয়া এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ মার্স্টাসের মেধাবী ছাত্র ওয়ালীউল্লাহ ও আল-ফিকহ বিভাগ চতুর্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র আল মুকাদ্দেস গুমের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। গত বছরের ৪ই ফেব্র“য়ারী সাভারের নবীনগর থেকে তাদের হানিফ পরিবহণ থেকে নামিয়ে নেয় র‌্যাব-৪ এর পরিচয় দিয়ে। তার পর থেকে আজও কোন সন্ধান মেলেনি তাদের। নিখোঁজের এক বছর চলে যাওয়ার পরও আজও আহাজারী থামেনি স্বজনদের। সূত্র মতে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল-মুকাদ্দাস গত ২ ফেব্র“য়ারী ও অর্থ সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ ৩ ফেব্র“য়ারী ব্যাক্তিগত কাজে ঢাকায় যায়। উভয়ে ঢাকায় কাজ শেষে ৪ ফেব্র“য়ারী রাত সাড়ে ১১টায় হানিফ এন্টার প্রাইজের কল্যাণপুর কাউন্টার থেকে
ক্যাম্পাসে আসার উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহ-৩৭৫০ নম্বর গাড়ীর টিকেট বুকিং দেয়। তারা গাড়ীর সি-১ ও সি-২ সিটে বসে ক্যাম্পাসে রওনা দেয়। গাড়ীটি রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মাঝামাঝি সময়ে নবীন নগর পৌঁছালে র‌্যাব-৪ এর পরিচয় দিয়ে গাড়িটি থামানো হয়। এসময় র‌্যাবের পোশাকধারী ও সাদা পোষাকধারী ৮-১০ জন ব্যক্তি গাড়িতে উঠে আল-মোকাদ্দাস ও ওয়ালিউল্লাহকে গাড়ী থেকে নামিয়ে নিয়ে যায় বলে গাড়ীর সুপার ভাইজার নিশ্চিত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্র অপহৃত হওয়ার সংবাদ ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পরলে মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। তাদের মুক্তির দাবিতে প্রায় দুই মাস ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা বিরাজ করে। উদ্ধারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ, মৌন মিছিল ও প্রশাসন ভবনে বিক্ষোভ সামবেশসহ কর্মসূচি পালন করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আল মুকাদ্দাস ও ওয়ালীউল্লাহর বৃদ্ধা পিতা-মাতা সন্তানের খোজে প্রায় দুই মাস ধরে ঢাকায় র‌্যাবের হেড অফিস সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অফিসে ধরনা দেন। এ নিয়ে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক লেখালেখি আলেচনা-সমালোচনা ঝড় ওঠে। তাদের উদ্ধার চেয়ে হাইকোর্ট থেকেও রুল জারি করা হয়। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার ও এ্যামেনেষ্টি ইন্টারনেশনালসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাও এ ঘটনার সাথে র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত বলে অভিযোগ করে তাদের মুক্তির দাবি করে। কিন্তু বার বারই র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের অপহরণের বিষয়টি অস্বীকার করে এড়িয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক আন্দোলনের মুখে অপহৃতদের উদ্ধারের বিষয়টি অগ্রগতি হলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াছ আলী নিখোঁজ হওয়ার সাথে সাথে ওয়ালি ও মুকাদ্দাসের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
অপহরনের এক বছর পুর্ন হয়ে গেলেও স্বজনদের আহাজারি আজও থামেনি। আল মুকাদ্দাস ও ওয়ালীউল্লাহর বৃদ্ধ পিতা মাতা ও আত্মীয় স্বজনরা আজও জানেনা তারা বেঁছে আছে না মারা গেছে। জানেনা কি অপরাধ ছিল তাদের সন্তানের। কোন অপরাধে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে অধ্যয়ন করা অবস্থায় তাদেরকে গুম করা হল। যদি কোন অপরাধ করে থাকে তা হলে কেন তাদেরকে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার করা হলো না?
অপহৃত আল-মুকাদ্দাস পিরোজপুর জেলার সদর থানার ২ নং কদমতলি ই্উনিয়নের খানাকুনিয়ারী গ্রামের মাওলানা আব্দুল হালিমের বড় সন্তান এবং ওয়ালীউল্লাহ ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার সোলজালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোলজালিয়া গ্রামের মাওলানা ফজলুর রহমানের ছেলে ।
ওয়ালী উল্লার বন্ধু মোঃ সাইফুল ইসলাম জানায়, ওয়ালী উল্লাহ বিভাগে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট ছিল। সে কোন অপরাধ করতে পারে এটা আমরা সহপাঠিরা কেউ বিশ্বাস করিনা। রাজনৈতিক কারনেই তাকে গুম করা হয়েছে।
আল মুকদ্দাসের বন্ধু মোঃ জামিরুল ইসলাম জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতির অঙ্গনে আলোচিত মূখ আল মুকাদ্দাস আনন্দ বিনোদন দিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। সে অনেক ইসলামী গান ও রম্য নাটক রচনা করেছে। আজ আমরা সবাই আছি আল মুকাদ্দাস নাই এ কষ্ট কাউকে ভাষায় প্রকাশ করার নয়।
অপহৃত ওয়ালীউল্লাহ ও আল-মুকাদ্দাস স্মরণে আজ ৪ ফেব্র“য়ারী আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছ আল-ফিকহ বিভাগ ও দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন