সোমবার, মার্চ ২৪, ২০১৪

দৌলতপুরে বিএনপিসহ তিন প্রার্থীর ভোট বর্জন


কেন্দ্র দখল ব্যালট বাস্ক ছিনতাই নিয়ে সংর্ঘষ, পুলিশের গুলিবর্ষণ, ২ গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০ : আ’লীগ প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক জাল ভোট

আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিবর্ষণ, দুজন গুলিবিদ্ধ ও ৫ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনার পর ভোট একটি কেন্দ্রে আধাঘন্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে প্রশাসনের সহায়তায় পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এছাড়া উপজেলার অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীরা দখলে নিয়ে ব্যাপক জাল ভোট প্রদান করে। এদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ফিরোজ আলম মামুনের হেলিকপ্টার প্রতীকের পক্ষে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে বিএনপি, জাসদ ও জাতীয় পার্টির তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শহিদ সরকার মঙ্গল (দোয়াত-কলম) দুপুর ২টায়, জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী শরিফুল কবির স্বপন (কাপ-পিরিচ) বেলা আড়াইটায়, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সমর্থিত প্রার্থী আলী আকবর (টেলিফোন) বেলা সাড়ে ১১টায় এবং ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল জলিল বিকাল সাড়ে ৩টায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তারা আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ভোট বর্জনের এ ঘোষণা দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় উপজেলার বাহিরমাদি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র দখলে নেয়ার চেষ্টাকালে আওয়ামী লীগ সর্মথিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফিরোজ আল মামুন ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শহিদ সরকার মঙ্গলের কর্মী-সর্মথকদের মধ্যে সংর্ঘষ বেধে যায়। এ সময় কেন্দ্রের ভেতর দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। পুলিশও তাদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ ২০-২৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। ত্রিমুখী এ সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজন গুলিবিদ্ধ এবং ৫ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৭ জন আহত হয়। গুলিবিদ্ধরা হলেন স্থানীয় ছাত্রদল নেতা সোহেল সরদার (২৬) ও পুলিশের মোবাইল টিমের গাড়ি চালক সোহাগ (১৮)। গুলিবিদ্ধদের কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পায়ে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল নেতা সোহেল সরদারকে পুলিশ আটক করেছে। তাকে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সংঘর্ষের সময় বাহিরমাদি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রায় আধাঘন্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা গিয়ে পুনরায় চালু করেন। দৌলতপুর পাইলট হাইস্কুল কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ফিরোজ আল মামুনের লোকজনের হামলায় উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক শের আলী সবুজ, দৌলতপুর সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেল মোহাম্মদ গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা বিএনপি নেতা দেল মোহাম্মদকে লাঠিসোটা দিয়ে এলোপতাড়ি পিটিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। মানিকদিয়াড় কেন্দ্রে হাবু মন্ডল নামে এক বিএনপি কর্মীর হাত ভেঙে দিয়ে সরকারি দলের কর্মীরা। কয়েকটি
ভোট কেন্দ্রে সরেজমিনে ঘুরে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি কম এবং কেন্দ্রগুলো পুরোপুরি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ফিরোজ আল মামুনের লোকজনদের দখলে থাকতে দেখা গেছে। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা বিএনপির সমর্থিতদের পথে পথে বাধা দেয়ায় তারা ভোট দিতে আসতে পারেনি। এছাড়া সরকারি দলের কর্মীরা আগেই ফিরোজ আল মামুনের হেলিকপ্টার প্রতীকে সিল মেরে নেয়ায় বহু ভোটার ভোট দিতে গিয়ে ফিরে এসেছে। উপজেলার মানিকদিয়াড় গ্রামের শুকুর আলী বলেন, দুুপুরের দিকে ভোট দেয়ার জন্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখি আমার ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। তাই ভোট না দিয়ে ফিরে আসি।  উপজেলার ১২৬ কেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশ কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ফিরোজ আল মামুনের পক্ষে ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্টদের দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপিসহ অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের এসব ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির মহোৎসব চালিয়ে চালিয়ে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১৭টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এছাড়া বিপুল সংখ্যক পুলিশের মোবাইল টিম কেন্দ্রগুলোর আশপাশে টহল দেয়। সার্বক্ষনিক প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেও সকাল থেকে ভোটগ্রহণের শেষ সময় পর্যন্ত অধিকাংশ কেন্দ্র আওয়ামী লীগ কর্মীরা দখলে নিয়ে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে সিল মেরে নিলেও কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন