বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১১, ২০১৪

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ায় অধিকারের র‌্যালী ও সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার : ১০ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। এদিনটি পালনে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এর কুষ্টিয়া জেলাস্থ মানবাধিকার কর্মীরা র‌্যালী ও সমাবেশ করেছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় অধিকার’র কর্মীরা শহরের থানা মোড়স্থ বক চত্বর থেকে র‌্যালী বের করে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে কুষ্টিয়া পৌরসভার বিজয় উল্লাস চত্বরে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধিকার এর কুষ্টিয়া জেলা মনিটর মানবাধিকার কর্মী হাসান আলী, ইউপি সদস্য সীমা খাতুন প্রমুখ। এসময় বক্তারা বলেন, এমন একটি সময় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা একটি উদ্বেগজনক অবস্থানে গিয়ে পৌঁচেছে। বর্তমান সরকার গত ৫জানুয়ারী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগনের ম্যান্ডেট ছাড়াই রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে। রাষ্ট্র শক্তির কাছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকির মধ্যে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এছাড়া সংখ্যালঘু নাগরিকদের ওপর হামলা ও নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাও অব্যাহত আছে। সরকার সমর্থিত ছাত্র ও যুব সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র লীগ ও যুবলীগ রাজনীতিতে সহিংসতা ও দুর্বৃত্তায়নের মূল কেন্দ্রে অবস্থান করছে। মত পক্র াশ ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হচ্ছে। নিবর্তনমূলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০০৯ ও ২০১৩) এখনও বলবৎ আছে এবং আইনটি মানবাধিকার রক্ষাকর্মী, সাংবাদিক ও স্বাধীনচেতা মানুষের বিরুদ্ধে সরকার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারে বিভিন্ন ধরনের বিধি নিষেধ আরোপ করে সরকার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে এবং নিবর্তনমূলক ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে ভিন্ন মতালম্বীদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। বিচার বিভাগকে নিয়šণ¿ করার জন্য সংসদ সদস্যদের হাতে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মানবাধিকার সংগঠনসহ বেসরকারি সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ‘বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন ২০১৪’ নামে একটি আইনও মন্ত্রী পরিষদ চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এই আইন মানবাধিকার সংগঠন ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে অতি মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত এবং বিশেষ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সংগঠিত হবার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার ব্যবস্থা করবে, যা বাংলাদেশের সংবিধান এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার রক্ষাকর্মীদের অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।  অধিকার তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থেকেছে এবং ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-প্রকৃতি, রাজনৈতিক মত পার্থক্য; অর্থনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে চলেছে। অধিকার কোন বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় না এবং সব সরকারের আমলেই অধিকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থাকায় নিগৃহীত হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের তথ্যানুসন্ধান করার কারনে ২০১৩ সালের ১০ অগাস্ট অধিকার এর সে?েটারি আদিলুর রহমান খানকে সাদা পোষাকধারী গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা তুলে নিয়ে যেয়ে পরে আটক করে এবং তাঁকে ও অধিকারের পরিচালককে যথাক্রমে ৬২ দিন ও ২৫ দিন জেলে বন্দি করে রাখে। এরপর থেকে অধিকার ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার রক্ষাকর্মীরা প্রতিনিয়ত
সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক নজরদারীতে রয়েছেন এবং চরমভাবে হয়রানীর সম্মুখীন হচ্ছেন। ২০১৪ সাল থেকে অধিকার এর সমস্ত চলমান প্রকল্পের অর্থছাড় দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্ত এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। অধিকার মনে করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটাতে বাংলাদেশের জনগণকে সংগঠিত হওয়া এবং সব ধরনের মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তাই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিটি মানবাধিকার কর্মীসহ জনগণকে সোচ্চার হতে হবে এবং ভিকটিম পরিবারগুলোসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন