বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১১, ২০১৪

কুষ্টিয়ায় হানাদার মুক্ত দিবস আজ

হাওয়া প্রতিবেদক ॥ ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়াবাসীর স্মরণীয় দিন। দীর্ঘ আন্দোলন, ত্যাগ তিতিক্ষা ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর জেলার সংগ্রামী মানুষ  কুষ্টিয়াকে মুক্ত করেছিলেন। কুষ্টিয়াকে মুক্ত করায় জেলাবাসী আনন্দিত ও গর্বিত। প্রতি বছর বিজয়ের মাসে ঘুরে আসে এ দিনটি। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন পেশার মানুষ। কুষ্টিয়া প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে এ দিবসটি পালন করবে।   তথ্যসুত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে সমগ্র বাংলাদেশের সীমান্ত ও দেশের অভ্যান্তরে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ গেরিলা যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী চরমভাবে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। পাক হানাদার বাহিনী দেশের অভ্যান্তরে গেরিলা যুদ্ধের কারণে বিপদাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। শুধু শহর ছাড়া সমস্ত অঞ্চল ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। ৬ ডিসেম্বর ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে তারপরই বাংলাদেশে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিমিত্র যৌথ বাহিনীর আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনী পর্যুদস্ত হতে থাকে। যৌথবাহিনী একের পর এক থানা, মহকুমা ও জেলা দখল করে চলে। এরই অংশ হিসাবে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর সম্পূর্ণরুপে শক্রমুক্ত হয়। যৌথ বাহিনী ঝিনাইদহ মহকুমা দখল করে একটি গ্র“প কুষ্টিয়া অভিমুখে রওনা হয়। অন্য দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত দল চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা পোড়াদহ হয়ে শহরের সন্নিকটে এসে উপস্থিত হয়। কুষ্টিয়াকে মুক্ত করতে যেখানেই শত্র“ সেখানে যুদ্ধ করে চলে মুক্তিযোদ্ধারা। কুষ্টিয়া শহরকেও শত্র“মুক্ত করতে শহরকে অবরোধ করে রাখে। এমতাবস্থায় পাক হানাদার বাহিনীরা ভারী অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতি গোপনে কুষ্টিয়া শহরের দক্ষিণে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কের চৌড়হাসে বিটিসির নিকট জিকে ক্যানেলের ব্রীজ এর উত্তর পাশে ক্যামফ্লাশ করে এ্যামবুশ বা ফাঁদ পেতে রাখে।  পাক হানাদার বাহিনী ফায়ার ওপেন করে ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২টি ব্রীজ উড়িয়ে দেয় । শুরু হয় তুমুল আকারে যুদ্ধ। বাঙালীদেতর বীর দর্পে যুদ্ধের মুখে পাক হানাদার বাহিনী কুষ্টিয়া শহর থেকে পালিয়ে ভেড়ামারা হয়ে হাডিঞ্জ ব্রিজ অভিমুখে রওনা হয়। সেখানে বাঙালেিদর হাতে অনেকে নিহত হয়। বিমান থেকে বোম্বিং ও গুলি বর্ষণ করে কুষ্টিয়ার হাডিঞ্জ ব্রীজের ২টি স্প্যান ভেঙে ফেলে। কুষ্টিয়াবাসীর বীর দর্পে যুদ্ধের ফলে পাকহানাদার বাহিনী অনেকেই নিহত হয়, অনেকেই পালিয়ে যায়। বহু ত্যাগ তিতিক্ষা আর অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে, বহু মা বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে  কুষ্টিয়া শহরসহ সমগ্র কুষ্টিয়া জেলা শক্রুমুক্ত হয়। কুষ্টিয়ার সমস্ত অফিস আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাধীন দেশের বিজয়ী পতাকা তুলে পতপত করে উড়িয়ে কুষ্টিয়াকে হানামুক্ত করে।  এ দেশকে মুক্তিযোদ্ধা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বিজয় আনলেও বিজয়ের প্রকৃত স্বাদ পায়নি মুক্তিযোদ্ধারা। অনেকেই আজ তারা অত্যান্ত
মানবেতর অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। যুদ্ধের সেই দিনগুলির কথা আজও বাঙালীদের অন্তরে সাড়া জাগায়। বাঙালীদের বীরত্বের কারণে যে বিজয় অর্জন হয়েছিল তার সুফল মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনে আসেনি। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সকল দিক বিবেচনা করে তাদের দাবী দাওয়া ও অধিকার বাস্তবায়ন করবেন এ প্রত্যাশা মুক্তিযোদ্ধাদের। হানাদার বাহিনীর হাতে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র আর বাঙালীদের ছিল দৃঢ় মনোবল। বাঙালীরা যদি তাদের মোকাবিলা না করতো তাহলে হয়তো এ বিজয় অর্জিত হতোনা। স্বাধীন দেশের পতাকাও উড়ানো সম্ভব হতোনা।  বহু ত্যাগ তিতিক্ষা আর সংগ্রামে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে এবং বহু মা বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে  সমগ্র কুষ্টিয়া জেলা শক্রুমুক্ত হয়েছিল। যাদের আত্ম-ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভ্রোম রাষ্ট্রের সূচনা হয়েছিল। জাতি যুগ যুগ ধরে তাদের স্মরণ করবে। তাদের অধিকার আদায়েও সরকার তৎপর হবে এ প্রত্যাশা সকলের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন