শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ০৮, ২০১৩

ঝিনাইদহের ১৩২টি ইটভাটাতেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

শাহনেওয়াজ খান সুমন : ঝিনাইদহে ১৩২টি ইটভাটায় চলতি মৌসুমেই এক কোটি ৩২ লাখ মণ কাঠ পোড়ানো হবে। এর মধ্যে ১০৭টি ভাটার কোনো অনুমোদন নেই। ২৫টি ভাটার মালিক অনুমোদন নিলেও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন কাঠ। ইটভাটা মালিকদের ভাষ্য, কাঠ দিয়ে ভাটা চালানোর জন্য তাঁরা প্রশাসনের বিভিন্ন তহবিলে টাকা দিয়ে থাকেন। ভাটার মালিকদের একটি সূত্র জানায়, নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে জুনের মাঝামঝি পর্যন্ত চলে ইট পোড়ানো মৌসুম। সাধারণত এক চিমনির ভাটায় মৌসুমে ২৫ থেকে ৩০ লাখ ও দুই চিমনিতে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট পোড়ানো যায়। গড় হিসাব অনুযায়ী এ বছর ঝিনাইদহের প্রতিটি ভাটায় ৫০ লাখ করে ইট পোড়ানো হবে। ভাটার মালিকদের হিসাব অনুযায়ী, এক লাখ ইট পোড়াতে দুই হাজার মণ কাঠ প্রয়োজন। সেই হিসেবে ৫০ লাখ ইটে পোড়াতে লাগবে এক লাখ মণ কাঠ। আর ১৩২টি ভাটায় পুড়বে এক কোটি ৩২ লাখ মণ কাঠ। এর পুরোটাই জোগাড় হবে বন কেটে যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক মাসুদ আহমেদ সঞ্জু।
জেলা বন কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন জানান, ভাটা স্থাপন বা ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়। এ ছাড়া ১২০ ফুট উঁচু চিমনি তৈরির নিয়ম রয়েছে। ব্যারেল চিমনি কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। গ্রামের মধ্যে, ফসলি জমিতে বা জনবসতি এলাকায় ভাটা স্থাপন দণ্ডনীয়। জ্বালানি কাঠ পোড়ানো যাবে না বলে অঙ্গীকার নিয়ে ভাটার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু জেলার অধিকাংশ ভাটায় এসব নিয়ম মানা হচ্ছে না। আর জনবলের অভাবে তাঁরা সব সময় অভিযান পরিচালনা করতে পারেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দখলপুর এলাকায় স্টন ব্রিকস ও বিজলী ব্রিকস নামের দুটি ভাটার মধ্যে করাতকল ব্যবহার করে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। একইভাবে সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়ায় খাঁন ব্রিকসেও করাতকল বসিয়ে কাঠ পোড়ানো চলছে। সদর উপজেলার কালীচরণপুরের এনএস ব্রিকসের মধ্যে রয়েছে করাতকল। চলছে কাঠ কাটা আর ব্যবহার হচ্ছে ভাটায়। কালীগঞ্জ উপজেলার নরেন্দ্রপুরের কেএসবিএম ব্রিকস করাতকল বসিয়ে কাঠ পোড়াচ্ছে।
একাধিক কাঠ ব্যবসায়ী জানান, আরও কয়েকটি ভাটায় করাতকল আছে যা সবার নজরে আসেনি। রামনগরে অবস্থিত পাল ব্রিকসের অংশীদার আবদুর রহমান জানান, কাঠ ছাড়া কয়লা দিয়ে ইট পোড়াতে লাভ খুব একটা থাকে না। তা ছাড়া কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে কাঠ পাওয়া যায়। কয়লা কিনতে হলে নগদ টাকার প্রয়োজন। আরেক ভাটামালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাঁরা স্থানীয় প্রশাসনকে খুশি রেখে ভাটা চালান। চলতি বছর প্রতিটি ইটভাটা থেকে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে প্রশাসনকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিছু জরিমানাও করা হয়। পরে অভিযান পরিচালনাকারী দল ফিরে এলেই আবার চলে ভাটা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। আরও অভিযান চালানো হবে। করাতকল থাকলে সেগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ অঞ্চলের পরিদর্শক আজাহারুল ইসলাম জানান, লোকবল না থাকায় তাঁরা অভিযান চালাতে পারছেন না। তবে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহের মধুপুরে অবস্থিত এনএস ব্রিকস ভাটার মধ্যে করাতকল বসিয়ে কাঠ পোড়াচ্ছে মর্মে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু অন্য করাতকলগুলোতে অভিযান চালায়নি প্রশাসন।
জেলা বন কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন জানান, করাতকল বসাতে হলে বন বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন। আর ভাটার মধ্যে কখনো করাতকল বসানোর অনুমোদন দেওয়া হবে না, যাঁরা করেছেন তাঁরা অবৈধভাবেই করেছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন