শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৩

জমির সংকটে শিল্প কারখানা স্থাপন ব্যাহত হলেও কুষ্টিয়া বিসিকের সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে

হাওয়া ডেস্ক : জমি সংকটের কারণে কুষ্টিয়ার বিসিকে যখন শিল্প কল-কারখানা গড়তে চরমভাবে হিমসিম খাচ্ছে ঠিক তখনী বিসিক এলাকার জায়গা বিক্রির মহৌৎসবে মেতে উঠেছে এক শ্রেনীর কুচক্রী ব্যক্তিবর্গ। বিসিক এলাকার ধানী জমি ভরাট করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চক্রান্তে উঠে পড়ে লেগেছে। জমির সংকটে শিল্প কারখানা স্থাপন ব্যাহত হলেও কুচক্রীদের নগ্ন থাবায় কুষ্টিয়ার বিসিকের সম্পত্তি হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বিসিকের কোন রকম নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে কুচক্রীরা মাটি ভরাট করে আবাসিক বসতবাড়িসহ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এ বিষয়টি প্রতিকার করা না হলে কুষ্টিয়ার বিসিক একদিকে যেমন জায়গা হারাবে। অন্যদিকে নতুন নতুন কলকারখানায়ও আর গড়া সম্ভব হবে না। সুত্রমতে, শিল্প প্রতিষ্ঠানের উজ্জল সম্ভাবনা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিল্প কারখানার অনুকুল পরিবেশ থাকায় বেকার সমস্যা, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কুষ্টিয়া শহরের কুমারগাড়া এলাকায় ১৯৬৭ সালে বিসিক শিল্প নগরী স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। ওই সময় সাড়ে ১৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠা করা হয় বিসিক শিল্প নগরীর। মোট ৮৬টি প্লটের মধ্যে ৫টি প্লটে বিসিক শিল্পনগরীর অফিস স্থাপন করা হয়। অবশিষ্ট ৮১টি প্লট শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিসিক শিল্পনগরীর কার্যক্রম যখন শুরু করা হয় তখন বিসিক শিল্প এলাকা কুমারগাড়ায় কোন বসতি ছিল না। সেখানে ছিল নর্দমা, খালা খন্দকে ভরা। পৌর এলাকার ময়লা আবর্জনা সেখানে ফেলা হতো। বন জঙ্গলে ভরা ছিল ওই এলাকা। বিসিক শিল্পনগরীর কার্যক্রম শুরু হলে কুষ্টিয়ার কিছু ব্যবসায়ীরা সেখানে শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলেন। ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা শুরু করলে পরবর্তীতে ব্যবসায়ী সুপ্রসিদ্ধ শিল্প কলকারখানা হিসাবে বিসিক শিল্প নগরী সুনাম অর্জন করে। বর্তমানে বিসিকের ২৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ২১টি ইউনিট উৎপাদন করা হচ্ছে। উৎপাদনরত ইউনিটগুলোর বিস্তৃতি ও পরিসর বেড়ে যাওয়ায় বরাদ্দযোগ্য সকল প্লট ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। এরপর দিনের পর দিন কারখানা ও জমির চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকার প্রতিবছর বিআরবি গ্র“পসহ কুষ্টিয়া বিসিক শিল্প নগরী হতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও শিল্প এলাকার কোন উন্নয়ন করতে পারেনি। জায়গার অভাবে স্থাপন করা যাচ্ছে না নতুন নতুন কল-কারখানা। ফলে বেকার সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে কুষ্টিয়া বিসিকের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে। দিনের পর দিন নিত্য নতুন দ্রবাদি ও পণ্য সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে ৪টি খাদ্যজাত ও সহজাত শিল্প, ২টি বস্ত্র শিল্প, ১টি কাগজবোর্ড ও মুদ্রণ শিল্প, ২টি চামড়া ও রাবার শিল্প, ৩টি রসায়ন ভৈজষ ও সহজাত, ৫টি প্রকৌশল শিল্প, ২টি বৈদ্যুতিক শিল্প, ২টি পাট ও পাটজাত শিল্প ও পলি ব্যাগ শিল্পের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে। অন্যান্য পণ্য সামগ্রীর মধ্যে বৈদ্যুতিক তার তৈরির সব ধরনের কাঁচামাল, টেলিফোন রিচিভার বোর্ড টিউব লাইটের সরঞ্জাম, জি আই পাইপ, আখ মাড়াই কল, মোটর সাইকেলের পার্টস, পিন্টিং প্যাকেজিং, ছাতার কাপড়, ষ্ট্রিল সামগ্রী, এ্যালমিনিয়ামের তৈজসপত্র, ইলেকট্রিক কেবল, নন ফেরাস,সেমাই, ভোজ্য তেল। এছাড়াও নর্দান জুট ম্রানুফ্যাকচারিং কোং লিঃ ইউনিটের উৎপাদিত কার্পেট তৈরির সুতালী আমেরিকা জাপান, মিশরে রপ্তানী করা হয়। বিআরবি পণ্য সামগ্রী সারা বিশ্বে রপ্তানী করে গোটা বিশ্বে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্প নগরীর উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বিদেশে রপ্তানী করে বছরে প্রায় শত কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। সরকারও বছরে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে থাকে। কুষ্টিয়ার বিসিকে জায়গা বাড়ানোর জন্য শিল্পোদোক্তারা দীর্ঘদিন দাবী করে আসছিলো। কুষ্টিয়ায় বিনোদনের জন্য একটি পার্ক করার দাবীও ছিলো এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। এখন বিনোদনের জন্য পার্কতো দুরের কথা বিসিক এলাকার জায়গা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। জায়গার অভাবে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলো বিসিকের মধ্যে স্থাপিত বিভিন্ন কলকারখানার মালিকরা। তারা অভিযোগ করেন বিসিকের জায়গা না থাকায় এখানকার কলকারখানার বর্জ্য ফেলানোর কোন জায়গা নেই। পানি নিষ্কাষণেরও কোন ব্যবস্থা নেই। ড্রেনেজ না থাকায় কলকারখানার মালিকরা বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে দীর্ঘদিন। এমনকি বিসিকের মধ্যে এম আর এস ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ এর পাশে স্থাপিত সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটিও বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। পানি নিষ্কাষনের কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় তারাও অনেক বার পরিবেশ অধিদপ্তরসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে অপরিকল্পিতভাবে দোকান-পাট, হোটেল,ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানহ আবাসিক ঘরবাড়ি গড়ে তোলায় সেখানকার সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। পানি নিষ্কাষনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে বিসিকের পানি বের হতে পারছেনা। সেখানকার এক ফসলী ও দোফসলী জমির ফসলও জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।স্থানীয়রা জানায়, এখানে এক ফসলী ও দোফসলী আবাদ হয়। বিসিকের বিভিন্ন সমস্যার কারনে বিসিকের জন্য জায়গা অধিগ্রহণের কাজ শুরু করলে জমির মালিকরা বিসিকে জায়গা দেওয়ার জন্য তারা রাজী হয়। বিসিক ৪৬ একর জায়গা অধি গ্রহণের কাজ শুরুও করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ইতিমধ্যে ওই জায়গার দিকে নজর পড়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিবর্গের। তারা জমির মালিকদের কাছে অনেক চেষ্টা ও প্রলোভন দেখিয়ে জায়গাগুলো কিনতে শুরু করেছে। বেশ কিছু জায়গা ক্রয় করে সেখানে বাউন্ডারী গেড়ে বালি ভরাটের কাজ শুরু করেছে। মেশিন দিয়ে এখন জায়গা সমান করা হচ্ছে। শিল্পসমৃদ্ধ এ এলাকায় আবাসিক স্থাপনা তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে কতিপয় ব্যক্তিবর্গ। শিল্প কলকারখানা এলাকার মধ্যে কোন আবাসিক স্থাপনা না গড়ে তোলার ব্যাপারে নিয়মনীতি থাকলেও সেগুলোর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে স্বার্থান্বেষী ওই মহলটি বিসিক এলাকার মধ্যে আবাসিক গড়ে তোলার কাজ করছে। ওই চক্রটির ইন্ধনেই সেখানে কতিপয় ব্যক্তি সেতু এনজিওর স্থাপনা এবং আবাসিক গড়ে তুলেছে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব স্থাপনা গড়ে তোলায় একদিকে বিসিকের মধ্যে স্থাপিত কলকারখানার যেমন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি বিসিকের জায়গাও হাত ছাড়া হচ্ছে। ফলে জায়গার অভাবে বিসিকের মধ্যে আর নতুন কলকারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। কুষ্টিয়ার এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার একদিকে যেমন রাজস্ব আয় করছে। অপরদিকে এ জেলার প্রায় ১০ হাজার বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প কল-কারকারখানা ব্যবসা বাণিজ্যের উজ্জল সম্ভাবনাময় এ জেলায় পণ্য সামগ্রীর চাহিদার কারণে শিল্পোদ্যোক্তারা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার ঝোঁক বাড়লেও বিসিক শিল্প নগরীতে জমির অভাবে তা গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বেকার সমস্যা সমাধানে ও নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনে বিসিক শিল্প নগরীর জমি যাতে হাত ছাড়া না হয় সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এ দাবী জেলার সুশীল সমাজ ও জেলার শিল্পদোক্তাদের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন