রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৩

ফলোআপ : এসিড সন্ত্রাস

উদ্ধতন কর্মকর্তারা তদন্ত না করলে আসামী গ্রেফতার নয়

সাংবাদিকদের কাছে বাদীকে গ্রেফতারের হুমকি দিলেন ওসি

হাওয়া প্রতিবেদক : দুর্বৃত্তদের এসিডে ঝলসে যাওয়া খোকসার নববধূ কাকলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। মামলার বাদীর অভিযোগ আসামীরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার না করে তাদের পক্ষ নিয়েছে। পুলিশের দাবি এসিড মারার ঘটনাটি সাজানো তাই উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা তদন্ত না করলে আসামী গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলার বড়ইচারা গ্রামে দুর্বৃত্তদের ছুড়ে মারা এসিডে নববধূূ কাকলী মুখের বাম অংশ, ঘার,
ডান হাত ও তার স্বামীর মুখের বাম অংশ এবং শরীরের বেশ কয়েকটি স্থান ঝলসে যায়। শুক্রবার রাতে গুরুতর আহত গৃহবধূকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তরিত করা হয়। অনেক বিলম্বে হলেও এ ঘটনায় নববধূর বাবা কামরুলের দায়ের করা মামলাটি থানা রেকর্ড করে। কিন্তু পুলিশ আসামীদের গ্রেফতারের উদ্যোগ নিচ্ছেনা। উল্টো করে পুলিশ আসামীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে বাদী অভিযোগ করেন। এসিডদগ্ধ নববধূর বাবা মামলার বাদি কামরুল শেখ বলেন, প্রতিবেশী হাবিল শেখের ছেলে হাফিজ তার মেয়ে কাকলীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। লম্পট চক্র তার মেয়ের উপর এর আগে তিন দফায় এসিড ছুড়ে মারে। প্রথম থেকেই তারা মামলা করার জন্য থানায় গিয়েছিল, পুলিশ মামলা নেয়নি। বৃহ¯পতিবার রাতে ৪র্থ বার এসিড মেরে তার মেয়ে ও জামাতার শরীর ঝলসে দেওয়ার ঘটনার পর পুলিশ মামলা নিলেও দুর্বৃত্তদের আটকের উদ্যোগ নিচ্ছেনা। দুর্বৃত্তদের ভয়ে তিনি গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আসামীরা গ্রাম জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আর মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলেও তিনি (বাদি) অভিযোগ করেন।ব্র্যাকের মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মী মুক্তি শর্মা বলেন, আগে একই মেয়ের উপর ৩ দফা এসিড হামলা হয় কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরিবারটি ক্ষতিগ্রস্থ হল। তার মতই একাধিক মানবাধিকার কর্মী পুলিশের আচরণে ক্ষুদ্ধ। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হরেন্দ্রনাথ সরকারের সাথে ফোনে কথা বলা হয়, মামলা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। পুলিশের এই অফিসার জোর দিয়ে বলেন, ঘটনাটি একটি সাজানো নাটক। আসামী গ্রেফতার না করার ব্যপারে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা তদন্ত না করলে আসামী গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছেনা। পরে অবশ্য সংশোধনী দিয়ে বলেন, তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা। সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করায় মামলার বাদিকে গ্রেফতার করা হবে এমন হুমকিও দেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, উপজেলার নিশ্চিন্তবাড়িয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষি শ্রমিক কামরুলের ৮ম শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়ে কাকলীকে বিয়ে করার জন্য প্রতিবেশী হাবিল শেখের ছেলে লম্পট হাফিজ প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এ চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে সম্প্রতি পাশের গ্রামে ছাত্রীটিকে বিয়ে দেওয়া হয়। এর পর একরাতে ঘরের বেড়া কেটে নববধূ উপর এসিড ছুড়ে মারা হয়। এতে কিশোরী বধূর ডান হাত ও গলায় সামান্য পুড়ে যায়। পরদিন গভীর রাতে দ্বিতীয় দফায় হানা দেয় লম্পটরা। তৃতীয় দফা হামলার শিকার হয় স্বামীর বাড়ি বড়ইচারা গ্রামে। বৃহস্পতিবার স্বামীর বাড়ি ঘুমন্ত নবদম্পতির উপর ৪র্থ বার এসিড হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এসিডদগ্ধ কাকলীর একটি অপারেশন করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে দাবি করেছেন ব্র্যাক মানবাধিকারের এক কর্মী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন