বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ২০, ২০১৪

ঝিনাইদহের চার উপজেলায় নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ

ইউপি চেয়ারম্যানসহ দু’জনের কারাদণ্ড, ভোট বর্জন, বৃহস্পতিবার হরতাল

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ॥ ভোট বর্জন, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে ঝিনাইদহের ৪ উপজেলার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বুধবার সকালে উৎসবের মধ্যে দিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রগুলোতে তেমন ভোটার উপস্থিতি না থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সকাল ১১টার সময় শৈলকুপা শহরের কবিরপুর নিজ বাসভনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জন ও বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধা হরতাল পালনের ঘোষণা দেন বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী রাকিবুল হাসান খান দিপু। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ীলীগ সমর্থিত প্রার্থী মোশারফ হোসেন শিকদাদের লোকজন ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে জাল ভোট প্রদান, ব্যালট পেপার ছিনতাই, এজেন্টদের বের করে দেওয়া এবং কর্মীদের মারপিট করছে। এছাড়া ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনার পর শৈলকুপার থানার ওসি আনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সকালে ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের কারণে শৈলকুপার মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। এদিকে ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও ভয় ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালত ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দোগাছি ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা ফয়জুদ্দীন মোল্লাকে ৩ মাসের কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এছাড়া কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীরামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারকে লাঞ্চিত ও জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট শাহিনুর রহমান আতিয়ার রহমান নামে এক যুবককে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করে।পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল ৯টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজারে ভোটকেন্দ্রে আসার সময় আওয়ামীলীগের কর্মীরা বিএনপি সমর্থকদের উপর হামলা করে। এ সময় উভয় দলের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে মাধবপুর গ্রামের আওয়ামীলীগ কর্মী আলী আজগর, একই গ্রামের মফিজ, চান্দেরপোল
গ্রামের রফিকুল, পুড়োবেতাই গ্রামের আশাদুল, বিএনপি কর্মী নাছির উদ্দীন, নাজমুল ও আবুল কালাম আহত হন। একই সময় গান্না ইউনিয়নের রঘুনাথপুর কেন্দ্রে বিএনপি কর্মীদের উপর আওয়ামীলীগ সমর্থকরা হামলা চালালে দুর্গাপুর গ্রামের কিতাবদি, তোয়াজ উদ্দীন, আব্দুল হান্নান, সুপ্রাদ আলী, আব্দুল জব্বার ও বাবলু মিয়া আহত হন। সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার মামুনশিয়া গ্রামে বিজিবির টহল দলের সামনে আওয়ামীলীগ কর্মীদের হামলায় ফারুক ও আব্দুল কুদ্দুস আহত হন। এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের খাজুরা ভোট কেন্দ্রে ভোট দিসে আসার সময় যুবদল নেতা লোকমান হোসেন ও মঙ্গল মিয়াকে পিটিয়ে আহত করে। এদিকে ঝিনাইদহ কেসি কলেজ ভোট কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও ভোটার তালিকা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ সময় জেলা বিএনরি নেতা শাহজাহান আলী আহত হন।সকালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাঞ্চননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্রে সরকার দলীয় সমর্থকদের হামালায় তিন জন আহত হয়েছে। এসময় মিলন নামে বিএনপি সমর্থক চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল আলিমের এজেন্টকে বের করে দেয়। ঝিনাইদহ পৌর এলাকার পবহাটি ও উদয়পুর ভোটকেন্দ্রে ৫ বিএনপি সমর্থককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষরা। এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলায় নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুবর্ণসারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলণ্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাকোবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়তালিয়ান দাখিল মাদ্রাসা, সাহাপুর ঘিঘাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেলাট দৌলতপুর দাখিল মাদ্রাসা, হাট বারো বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বার্ফা মঙ্গল পৈতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমারহাটি দাখিল মাদ্রাসা, ঝন-ঝনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাগরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাজদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৬টির অধিক ভোট কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। ঝিনাইদহের চারটি উপজেলায় নির্র্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৮৮টি আর ভোটার ছিল ৮ লাখ ৪০ হাজার ৮১৪ জন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন