বুধবার, মার্চ ১৯, ২০১৪

বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

কুষ্টিয়া চিনিকলের গোডাউনের দেয়াল ধ্বস : বিপুল পরিমান চিনি নষ্ট

ষ্টাফ রিপোর্টার : অতিরিক্ত চিনির চাপে কুষ্টিয়া চিনিকলের ১নং গোডাউনের দেয়াল ধ্বসে পড়েছে। এতে রক্ষিত চিনি ও গোডাউনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার সময়। এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় ও বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির করনেই এমনটি ঘটেছে বলে মনে করেন মনে করছে বিভিন্ন মহল। প্রতি বছর গোডাউন মেরামতের জন্য বাজেট বরাদ্দ থাকলেও সেই কাজ গুলো সঠিক ভাবে রক্ষনা বেক্ষনের না করায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। তাদের দাবী কোন রকম পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়–া কেন এমন একটি পুরাতন গোডাউনে বিপুল পরিমান চিনি মজুদ করা হলো। সুগার মিল সুত্রে জানা গেছে, ৬ হাজার মেট্রিক টন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন মিলের ১ নং গোডাউনে ৫ হাজার ৭’শ ৪০ মেট্রিক টন চিনি মজুদ রক্ষিত ছিল। এ গোডাউনে অবিক্রিত চিনির বস্তার চাপে হঠাৎ করেই মঙ্গলবার সকালে গোডাউনের দক্ষিন পাশের দেয়াল ধ্বসে ১ হাজারেরও বেশী চিনির বস্তা বাইরে ও ড্রেনে পড়ে যায়। ক্ষতি হয় ঐ গোডাউনের ব্যাপক অংশ। পরে চিনিকলের শ্রমিকরা বাইরে পড়ে থাকা চিনি উদ্ধার শুরু করে।
জানা গেছে, দফায় দফায় লোকসানের মুখে পতিত হওয়া কুষ্টিয়া চিনিকলের চলতি মাড়াই মৌসুমে আখচাষীদের পাওনা ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চিনি বিক্রি না হওয়াতে মিল কর্তৃপক্ষ চাষীদের পাওনাসহ মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ২ মাসের বেতন পরিশোধসহ মিলের বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে পারছে না। গত দু‘মৌসুম ও বর্তমান মৌসুমে উৎপাদিত দেড় হাজার মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত অবস্থায় মিলের গোডাউনে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে বড় একটি অংশ চিনি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর পরেও মিলের এক শ্রেনির অসাধু কর্মকর্তা ও কয়েকজন সিবিএ নেতার যোগসাজসে নতুন নতুন লোক নিয়োগ, আখ
চাষীদের সাথে খারাপ আচরন, মিলের যন্ত্রপাতি বিক্রিসহ বিভিন্ন ভাবে দূর্ণীতিগ্রস্থ অবস্থায় রয়েছে বর্তমানে মিলটি। এসব দিক মিলিয়ে নতুন করে গোডাউনের দেওয়াল ধ্বসে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবী গোডাউনের দেওয়াল ধ্বসের ঘটনা কোন ষরযন্ত্র কিনা তদন্ত করে দেখা হোক। সেই সাথে দোষী ব্যাক্তীদের শাস্তি দাবী করেছে স্থানীয়রা।
তথ্য সুত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়াসহ সারাদেশের বাজারে দেশী চিনির ব্যাপক চাহিদা সত্বেও চিনির সরবরাহ নেই। মিল কর্তৃপক্ষের অনুমদিত ডিলাররা সিন্ডিকেট করে বছরের পর বছর চিনি ক্রয় বন্ধ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ মিল কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারনে তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যাবস্থা গ্রহণ করে না। অন্যদিকে বর্তমানে কুষ্টিয়া চিনিকলে অবিক্রিত চিনির পরিমান সাড়ে ১০ মেট্রিক টনেরও বেশি। যার বাজার মুল্য টাকার অংকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। দিন দিন চিনির পরিমান বাড়ছে কিন্তু চিনি বিক্রি হচ্ছে না। বিগত দু’মৌসুমের চিনি অনেক আগের থেকেই নষ্ট হতে শুরু করেছে। মিলের গোডাউনে পুরাতন চিনির অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান- বেসরকারীভাবে উৎপাদিত চিনির বাজার মুল্য কম হওয়ায় দেশী চিনি কেউ কিনছে না। আবার মন্ত্রণালয় থেকে ৩১মার্চ পর্যমত্ম খোলা বাজারে চিনি বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় মিল কর্তৃপক্ষ খোলা বাজারে চিনি বিক্রি করতে পারছে না। এদিকে গোডাউনের ধ্বস বিষয়ে কুষ্টিয়া জগতি চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুদর্শন মলি¬ক বলেন, হঠাৎ করেই দেয়াল ধ্বসে পড়েছে। গোডাউন থেকে ছিটকে পড়া বস্তা গুলো উদ্ধার করা হচ্ছে। বেশী ক্ষতি হয়েছে গোডাউনের। এদিকে গোডাউনের এক পাশের দেয়াল ধ্বসে পড়ার কারনে ঐ গোডাউনে রাখা চিনি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। মিল কর্তৃপক্ষ দাবী করেছে এই চিনি সংরক্ষনের জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন