বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৭, ২০১৪

খোকসা থানার সোর্স যখন মাদকবিক্রেতা!

পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করছে বাসস্ট্যান্ডের সোর্স হাসান

কুষ্টিয়ার খোকসা ধীরে ধীরে সন্ত্রাসী ও মাদকের অভয়াশ্রম হয়ে উঠেছে। একের পর এক অপকর্ম আর হত্যাকান্ড ঘটলেও কোন রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে না। ঠিক এমনি সময় একটি সংগঠিত শক্তিশালী অপরাধ চক্র থানার নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্ম করে আসছে। এমনই এক পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত খোকসা বাসস্ট্যান্ডের স্ট্যাটার লোকমানের ছেলে হাসান। সে নিজেই এক মাদকসেবী। ব্লাকমেইলার হিসেবেও পরিচিত। হাসানের নামে সাধারণ জনগণের পাহাড়সমান অভিযোগ। পুলিশের গরমে মানুষকে মানুষই মনে করে হাসান। যখন ইচ্ছা সে যে কাউকেই মারধর করে। এমন আচরণ যেন হাসানই খোকসা থানার ওসি। এই হাসানকেই বিভিন্ন সময় থানার ওসি কিংবা এসআই এর ভূমিকায় দেখা যায়। কখনো হাইওয়ে রোডে ট্রাক থামিয়ে এসআই এর সাথে মাসোয়ারা আদায় করে। আবার মোড়াগাছা, ক্লাবমোড়, শিমুলিয়াসহ একাধিক পয়েন্টে মোটরসাইকেল আরোহীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। যার প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব দেয় এই হাসান।
অবশ্য খোকসা থানায় ওসি হিসেবে আলী নেওয়াজ নতুন যোগদান করার পর থানায় হাসানের যাতায়াত আগের থেকে কমে গেছে। ওসি আলী নেওয়াজ হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন।
কে এই হাসান?
উপজেলার খোকসা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের পাতেলডাঙ্গী গ্রামের লোকমানের ছেলে হাসান। প্রথমে মাঠে মজুরের কাজ করতে। পরে ৩ বছর নসিমন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। তখনই নেতৃত্ব তার বেড়ে যায়।
হাসানের উত্থান?
নসিমন চালানোর পরপরই সে নেতৃত্ব পর্যায়ে চলে আসে। সবার আলোচনায় চলে আসে হাসান। সেই থেকেই আর পিছনে তাকাবার নয়। ধীরে ধীরে পুলিশের সান্নিধ্যে চলে আসে হাসান। জমে ওটে পুলিশের সাথে দারুণ সখ্যতা। এরপর পুলিশের বিভিন্ন মিশনে হাসানও একজন সদস্য হিসেবে অংশ নেই কমান্ডো কায়দায়।
হাসানের সম্পদ কত?
নসিমন চালক থেকে একটি দামী ব্যান্ডের মোটরসাইকেলের মালিক হয়ে যায়। নসিমন চালক থেকে মোটরসাইকেল মালিক! মোটরসাইকেল এ চড়ে সে বিলাসীতা করে বেড়ায়। রাতে পুলিশের সাথে আসামী ধরতে যায়। অন্যের গাড়ী ধরে চাঁদা আদায় করলেও নিজের মোটরসাইকেলেরই কোন কাগজপত্র নেই।
হাসানের আয়ের উৎস্য কি?
নসিমন চালক থেকে এখন সে কয়েক লাখ টাকার মালিক। বর্তমানে হাসানের আর কোন কাজকর্ম করে না। থানার সোর্সগিরি করেই জীবিকা নির্বাহ হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পুলিশের কর্মকান্ডে সরাসরি হস্তক্ষেপ!
পার্শ্ববর্তী থানা কুমারখালীর একটি নিবন্ধনধারী মাদক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বিচরণ করে হাসান। খোকসা থেকে যারা মাদকদ্রব্য ক্রয় করতে যায় তাদেরকে হাসান সহযোগিতা করে। কিন্তু এই সহযোগিতার অন্তরালে সে তার নিজের আখের গুছিয়ে নিতেও ভুল করে না। সে অতি কৌশলে খোকসা থানার কয়েকজন এসআইকে আগে থেকেই তথ্য দেয়। হাসানের তথ্যমতে সেইসব পুলিশ সদস্যরা উপজেলার মোড়াগাছা হাটের অদূর থেকে সেইসব মাদকসেবীদের আটক করে। পরে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে পুলিশ। এরকম বহু অভিযোগ রয়েছে হাসান এর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় পুলিশ যখন মোটরসাইকেল আরোহীদের রেট দেয় তখনও পুলিশের ভূমিকায় দেখা যায় হাসানকে। এসময় অধিকাংশ মোটরসাইকেল আরোহীদেরই টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। আরো অভিযোগ আছে, হাসানকে থানা থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কোথায় জুয়া খেলা ও গাঁজার আসর বসে। হাসান নিয়মিত তথ্য দেয়। সেখান থেকে পুলিশ মাসোয়ারা নিয়ে জুয়ারী ও মাদকসেবীদের ছেড়ে দেয়।
এ ব্যাপারে হাসানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
খোকসা থানার অফিসার ইনচার্জ আলী নেওয়াজ বলেন, আমি খোকসা থানায় নতুন যোগদান করেছি। সবকিছু সর্ম্পকে আমি এখনও অবগত নয়। তবে আমার কাছে কোন টাউট-বাটপারের জায়গা নেই। হাসান যদি পুলিশের সোর্স হয়েই থাকে তাহলে আমি হাসানসহ আমার দপ্তরের জড়িত অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন