বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১৩

আবার এসেছে বসন্ত

কুদরতে খোদা সবুজ : আজ পহেলা আজ ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। কবির ভাষায়থ 'ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত।' ফাগুন হাওয়ায় দোল লেগেছে বাংলার প্রকৃতিতে। ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে বাংলার সবুজ প্রান্তর। রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত গানের আকুতি যেন ছড়িয়ে পড়েছে চরাচরেথ 'ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/আমার আপনহারা প্রাণ/আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ/তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/তোমার অশোকে কিংশুকে/অলক্ষ্যে রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে...'. সত্যি সত্যি অকারণ সুখের পুলকে বসন্ত যেন সুখের হাওয়ায় দুলিয়ে দেয় বাঙালির হৃদয়। উদাসী হাওয়ার পথে পথে আমের মুকুল ঝরার গন্ধ নিয়ে এসেছে বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন। শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজেছে এখন প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ ছোট কচি পাতা। ধীরগতিতে বাতাসের বয়ে চলা জানান দিচ্ছে নতুন কিছুর। আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিষেক হলো ফাল্গুনের, ঋতুরাজ বসন্তের। শীতে খোলসে ঠুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। পলাশ, শিমুল গাছে লেগেছে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে মধুর বসন্তের সাজ-সাজ রব। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে অনেকেই গুনগুন করে গেয়ে উঠছেনথ 'মনেতে ফাগুন এলো...'. আগুন রঙা এ ফাল্গুনে অশোক-পলাশ-শিমুল শুধু প্রকৃতিতেই উচ্ছ্বাসের রঙ ছড়ায় না, বরং ছড়ায় আমাদের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রক্তরঙিন পুষ্পিত রক্তের স্মৃতির ওপরও। তাই ফাগুন এলেই আগুন জ্বলে মনে; তাই ফাগুন এলেই কোকিল ডাকে বনে। বাংলার বন এখন উজাড় হলেও এই কংক্রিটের নগরীতে কোকিলের কুহু ধ্বনিত হয় ফাল্গুনের আগমনী সামনে রেখে। ফুলের মঞ্জরিতে মালা গাঁথার দিন বসন্ত কেবল প্রকৃতিকেই রঙিন করেনি, রঙিন করেছে আবহমানকাল ধরে বাঙালি তরুণ-তরুণীর প্রাণও।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিককালের বাউল কবির হৃদয় পর্যন্ত বারবার দুলিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। সে জন্যই বসন্ত বাতাসে বন্ধুর বাড়ির ফুলের সুবাসে মন আনচান করে বাউল কবিরও। সেই মন কেমন করা অনুভবে বাঙ্ময় ঋতুরাজের আগমনী দিনে আজ আনন্দের হাট বসবে অগ্রসর তরুণ-তরুণীদের মনে। তাদের যেন আজ কোথাও আর হারিয়ে যেতে নেই মানা। বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে, খোঁপায় গাঁদা, পলাশসহ নানা রঙের ফুল গুঁজে তরুণীরা বেরিয়ে পড়বেন। ছেলেরা লাল-হলুদ, বাসন্তী রঙ পাঞ্জাবি আর ফতুয়ায় নতুন করে নিজেদের সাজিয়ে নেমে আসবে পথে। একদিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আর পহেলা ফাল্গুন মিলে এ উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
নিষ্পাণপ্রায় এ কংক্রিটের জঙ্গলে সবুজ প্রাঙ্গণ ফুলে ফুলে উচ্ছল-উজ্জ্বল বাসন্তী হাওয়ায়। কোকিলের কুহুস্বরে মুখর পরিবেশে মন যেন কোনো উদাসলোকে হারিয়ে যেতে চায়। মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে বসন্ত জানিয়ে দিয়ে যায় সত্যি সত্যি সে ঋতুর রাজা। বসন্তের প্রথম দিনে আজ নানা আয়োজনে আলোড়িত হবে। তরুণ-তরুণীরা মাতিয়ে রাখবেন সারাদিন। বিভিন্ন স্থান মুখর থাকবে। মোবাইল ফোনে এসএমএস আদান-প্রদান, ফেসবুক, টুইটার, হাইফাইভ, অরকুট প্রভৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে বরণ করা হবে ঋতুরাজ বসন্তকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন