বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১৩

কুষ্টিয়ার তিনটি সরকারি কলেজ নানা সমস্যায় জর্জড়িত

ষ্টাফ রিপোর্টার : কুষ্টিয়ার তিনটি সরকারি কলেজে শিক্ষক ও শ্রেণী কক্ষ সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জড়িত। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের অভাবে জোড়াতালি দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান কার্যক্রম এবং শ্রেণী কক্ষের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রমে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কুষ্টিয়া জেলা শহরে অবস্থিত সরকারি কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজ এবং মিরপুর উপজেলার আমলা সরকারি ডিগ্রী কলেজের মাধ্যমে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সরকারি কলেজে লেখাপড়া সুযোগ পাচ্ছে তবে নানা রকমের সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কুষ্টিয়া জেলার ২০ লাখ মানুষের এই জেলায় মাত্র ৩টি সরকারি কলেজ এর মধ্য কুষ্টিয়া শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ। নানান ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বাক্ষর রয়েছে এই কলেজের। ১৯৪৭ সালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজটি প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৬৯ সালে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমান এই কলেজটিতে ১৮টি বিষয়ে লেখাপড়া করান হয়। এর মধ্যে ৮টি বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী থেকে অনার্সসহ মাষ্টার্স শ্রেণী র্পযন্ত পড়ানো হয়। বিষয়গুলোর মধ্য রয়েছে বাংলা, ইংরেজী, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গণিত, হিসাব বিজ্ঞান, পদার্থ ও রসায়ন। এছাড়া ৯টি বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী থেকে অনার্স এবং পরিসংখ্যান বিষয়ে শুধু উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে পড়ানো হয়। সবকটি বিষয়েই ডিগ্রী পাসকোর্স চালু আছে।
বর্তমান সরকারের অনুসৃত জনবল কাঠামো নীতি অনুযায়ী মাত্র ৪টি বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ১২জন করে শিক্ষক আছে। পদগুলোর মধ্য রয়েছে-অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গণিত, হিসাব বিজ্ঞান। আর বাকী ১৪টি বিষয়েই মারাত্মক শিক্ষক সংকট রয়েছে।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বদরুদ্দোজা জানান, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বর্তমান কাঠামোতে কলেজের শিক্ষক প্রয়োজন ১২৩জন সেখানে শিক্ষক রয়েছে ১০৩ জন। কিন্তু কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থী অনুপাতে কলেজের শিক্ষক কাঠামো হওয়ার প্রয়োজন ১৭২জন।
তিনি জানান, বর্তমান কাঠামোতে কলেজের ৭টি প্রফেসর পদের মধ্য রয়েছে ৪টি। বাকী ৪টি প্রফেসর পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক ২৬টি পদের বিপরীতে রয়েছে ২০টি এবং শূন্য রয়েছে ৬টি, সহকারী অধ্যাপক ৩৫টি পদের মধ্য রয়েছে ৩০টি, শূন্য রয়েছে ৬টি এবং প্রভাষক পদ ৫৫টি, আছে ৪৯টি শূন্য রয়েছে ৬জন। আর বর্তমান শিক্ষার্থী বৃদ্ধির কারণে এর যে কাঠামো রয়েছে তাতে প্রতি বিভাগেই অধ্যাপকসহ অন্যান্য পদের শিক্ষক সংকট রয়েছে।
অধ্যক্ষ বদরুদ্দোজা জানান, অবকাঠামোগত নানান সমস্যায় জর্জরিত কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ। এই অঞ্চলের মধ্য নামকরা এই কলেজে প্রতি বছরই রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে ফলে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্বক ব্যহত হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, বিশেষ করে বাংলা এবং ইংরেজী বিভাগের অবস্থা নাজুক। এমনকি বাংলা ও ইংরেজীর মত আবশ্যিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও প্রচন্ড শিক্ষক সংকট রয়েছে। ২২০০০ ছাত্রছাত্রীর জন্য রয়েছে মাত্র ৫জন ইংরেজীর এবং ৭জন বাংলার শিক্ষক। এছাড়া এই কলেজের শিক্ষার্থী অনুপাতে শ্রেণী কক্ষেরও সংকট রয়েছে। তাছাড়া আবাসিক হলের সমস্যাতো আছেই। কলেজে একটি ৫ম তলা বিশিষ্ঠ একাডেমীক ভবন এবং পরীক্ষা হলের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে বলে তিনি জানান। বিশাল পরিমান শিক্ষার্থীদের জন্য ছেলেদের জন্য ১শত সীট এবং মেয়েদের জন্য ৫০সীটের হল রয়েছে। এসব হলে মাত্রারিক্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে। এই কলেজে একাডেমীক ভবন ৩টি, অডিটোরিয়াম ১টি, প্রশাসনিক ভবন ১টি ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী রয়েছে। এই লাইব্রেরীতে বইয়ের সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি বলে তিনি জানান।
এদিকে কুষ্টিয়া শহরেই অবস্থিত সরকারি মহিলা কলেজটি এ অঞ্চলের মেয়েদের মাঝে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে। এ কলেজটি ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৭৯ সালে সরকারিকরণ করা হয়। এ কলেজে মোট ১১টি বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে পড়ানো হয় এবং ৪টি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজী, দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ) অনার্স পড়ানো হয়। কলেজটিতে সরকারের অনুসৃত শিক্ষক জনবল কাঠামো কোন বিষয়েই নেই। অর্থাৎ এখানে প্রতিটি বিষয়ই শিক্ষক সংকটে জর্জরিত। তদুপরি বানিজ্য শাখায় ২০১০ সাল থেকে পাঠদান করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোন শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়নি। এখানেও শিক্ষকের পাশাপাশি রয়েছে আবাসিক ও শ্রেণী কক্ষ সংকট।
কুষ্টিয়া জেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কি:মি: দুরে আমলা সরকারি কলেজটি জেলার একমাত্র কলেজ যা উপজেলা পর্যায়ে আমলা ইউনিয়নে অবস্থিত। কলেজটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ১৯৭২ সালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মারফত আলীর নেতৃত্বে তাদেরই প্রচেষ্টায় ১৯৮৭ সালে সরকারিকরণ করা হয়। এখানে মানবিক,বিজ্ঞান ও বানিজ্য শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে এবং কলা শাখায় বি.এ ও বি.এস.এস শ্রেণীতে পড়ানো হয়। ১২টি বিষয়ের জন্য অধ্যক্ষ সহ সর্বমোট ১৮টি শিক্ষকের পদ অস্থায়ীভাবে ১৯৮৭ সালে সৃষ্টি করা হয় এবং আজও পদগুলি স্থায়ী করা হয়নি। কলেজটির জন্য নেই কোন উপাধ্যক্ষ পদ। বিজ্ঞান ও বানিজ্য শাখায় শিক্ষক শূন্যতা বছরের পর বছর ধরেই চলছে। অফিসে প্রধান সহকারি ও হিসাব শাখায় কোন জনবল নেই দীর্ঘকাল থেকে। প্রদর্শক ও কলেজ লাইব্রেরীর জন্য নেই কোন জনবল। এমনকি কলেজে নেই কোন ডে-গার্ড। সমস্যায় জর্জড়িত কুষ্টিয়ার মাত্র ৩ টি সরকারি কলেজের বেহালদশা থেকে মুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক ও শ্রেণী কক্ষ এবং আবাসিক সমস্যা দুর করে উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকার বাস্তবমুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে এলাকাবাসী আশা করছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন