মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০১৩

কি শাস্তি হতে পারে জামায়াতের?


সাজেদুল হক:
কি শাস্তি হতে পারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর? কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে দলটির বিরুদ্ধে? মুক্তিযুদ্ধের
বিরোধিতাকারী এ দলটি কি নিষিদ্ধ হচ্ছে? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনের সংশোধনীতে দল বা সংগঠনের বিচারের বিধানযুক্ত হওয়ার পর সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে এসব প্রশ্ন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জটিলতা এখনও শেষ হয়নি। কারণ ট্রাইব্যুনালস আইনে দল বা সংগঠনকে বিচারের আওতায় আনা হলেও এসব দল বা সংগঠনের কি শাস্তি হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। দু’টি প্রশ্ন নিষ্পত্তির প্রয়োজন রয়েছে। আইনে কোন দলের শাস্তির কথা বলা নেই, বলা রয়েছে ব্যক্তির শাস্তির কথা। তাছাড়া, শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বা এ ধরনের অন্য কোন দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনের ২০(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে অথবা অপরাধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এ ধরনের অন্য কোন শাস্তি দিতে পারে, যা ট্রাইব্যুনাল সঠিক মনে করে। আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনের ৩ ধারায় সংশোধন করে দল ও সংগঠনকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু আইনের ২০(২) ধারায় কোন সংশোধনী আনা হয়নি। তিনি বলেন, ওই ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড অথবা কারাদণ্ড দিতে পারে। এখন জামায়াতের কি মৃত্যুদণ্ড হবে না কারাদণ্ড হবে? দলের তো এ ধরনের শাস্তি হওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, যেমন কোন ক্লাবের বিরুদ্ধে মামলা হলে ক্লাবটির জরিমানা করা যেতে পারে, ক্লাব নিষিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু ক্লাবের তো আর মৃত্যুদণ্ড হতে পারে না। কোন দল বা সংগঠনের বিচার করতে হলে ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে হবে বলেও মত দেন তিনি। সংশোধনীতে মামলা নিষ্পত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগকে সময় বেঁধে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সংসদের এখতিয়ার রয়েছে। সংসদ চাইলে যে কোন আদালতেরই মামলার কার্যধারা ঠিক করে দিতে পারে। অন্যদিকে, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর জার্মানিতে ব্যক্তির পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের জন্য ন্যাৎসি পার্টিকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল। সংগঠনটির সঙ্গে জড়িতদেরও বিচারে শাস্তি হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের দু’টি রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতসহ বিভিন্ন সংগঠনকে দায়ী বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়েছে জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মামলায়। তবে ট্রাইব্যুনাল আইনে কোন দল বা সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান না থাকার কথাও বলা হয়েছিল সে রায়ে। যে রায়ে বলা হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করে এবং এতে অংশ নেয়। তবে স্বল্প সংখ্যক বাঙালি ও বিহারী, অন্যান্য পাকিস্তানপন্থি, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল- যেমন জামায়াত ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ, মুসলিম লীগ, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি, কাউন্সিল মুসলীম লীগ, নেজামী-ই ইসলামী পার্টি পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় এবং তাদের সহযোগিতা করে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর লেখা ‘সানসেট অ্যাট মিডডে’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীদের ডাকা হতো আলবদর; জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজাম-ই ইসলামী দলের কর্মীদের বলা হতো আল শামস, উর্দুভাষী বিহারিরা পরিচিত ছিল আল মুজাহিদ নামে। জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য পাকিস্তানপন্থি দল বাঙালিদের হত্যার জন্য আধা-সামরিক বাহিনী গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। রায়ে ২০১০ সালের ১লা জুলাই দি ইকোনমিস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের অনেক ইসলামপন্থি দলের সমর্থন লাভ করেছিল। এর মধ্যে জামায়াতও রয়েছে যারা এখনও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দল। তাদের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের দ্বারা আল-বদর বাহিনী গঠিত হয়েছিল। তবে ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, কোন দল বা সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের আইন নীরব রয়েছে। [ তথ্য: মানবজমিন]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন