মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০১৩

ব্লগসহ শতাধিক অনলাইন গোয়েন্দা নজরদারিতে

হাওয়া ডেস্ক : ব্লগসহ শতাধিক অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে। এর মধ্যে ৩০টি ব্লগ কঠোর নজরদারিতে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ইস্যু নিয়ে যারা এসব ব্লগ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করছেন তারাও রয়েছেন গোয়েন্দা নজরদারিতে। সন্দেহভাজন ব্লগারের সংখ্যা এখন প্রায় ১০ হাজার। বিভিন্ন ব্লগে যারা সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে তারা । [মানবজমিন]
গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণের আওতায়। খোঁজ নেয়া হচ্ছে- তারা কোন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত কিনা। বেশ কিছু ব্লগারকে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কয়েকটি ব্লগ বন্ধে বিটিআরসিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ‘সোনার বাংলা’ ব্লগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়ে বলেছে- জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের দেয়ার রায়ের পর থেকেই এ নিয়ে কাজ করছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন একটি টিম। এ টিমে রয়েছেন অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার আসাদুজ্জামান, সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। শাহবাগ স্কয়ারের আন্দোলন জোরদার হওয়ার পাশাপাশি গতিশীলতা বাড়তে থাকে এ টিমের তৎপরতায়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শিবিরের একটি সাইবার স্পেশাল টিম বেশ কয়েকজন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টকে হিট লিস্টে রখেছে। তারা বিভিন্ন ব্লগ ও ফেসবুকে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন জানান, সাইবার ক্রিমিনালদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখাতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে যাতে আইনি কাঠামোর কোন লঙ্ঘন না হয় তা খেয়াল রাখছি। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষের গোপনীয়তা যাতে নষ্ট না হয় সে বিষয়টিকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছি। এ কারণে এখনই কারও নাম প্রকাশ করছি না। তবে প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে অপরাধ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তা মিডিয়াকে জানাবো। আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই আমরা ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো পর্যবেক্ষণ করছি।
সিনিয়র সহকারী কমিশনার আসাদুজ্জামান জানান, শাহবাগের আন্দোলনকে যারা ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বা অন্যায়ভাবে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে তাদের নিয়েও আমরা কাজ করছি। অনলাইন এবং অফ লাইন দু’টি বিষয়কেই গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, ব্লগ বন্ধ করাটাই শেষ নয়। এটা কেবল রোগের প্রাথমিক চিকিৎসামাত্র। যারা অনলাইনে অপপ্রচার চালিয়ে রাষ্ট্র ও সরকারের ক্ষতি করছে তাদের আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। ব্যক্তি বিশেষে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহের পর্যায়ে আছি। পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ শেষ হলে প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করবো। পরে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখনও আমরা সরাসরি কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করিনি। আমাদের চেষ্টা চলছে। বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, যারা গুজব সৃষ্টি করে দেশকে অশান্ত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম জানান, ৮-১০টি ব্লগে মানবতাবিরোধী ইস্যু নিয়ে বেশি লেখালেখি হচ্ছে। কেবল লেখালেখির ভিত্তিতেই আমরা আইনগত ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি না। কারণ, মত প্রকাশের অধিকার সবার আছে। যাদের লেখালেখি রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে মনে করছি আমরা কেবল তাদের তালিকা করছি। সমাজ জীবনে তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখছি। তিনি জানান, যেসব ব্লগ নিয়ে আমরা কাজ করছি সেসবের বেশির ভাগ হলো- আমার ব্লগ, প্রথম আলো ব্লগ, সোনার বাংলা, সামহয়্যার ইন ব্লগ, বিডি ব্লগ, বকলম, নাগরিক এবং সচলায়তন ব্লগ। এর মধ্যে শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার পর সোনার বাংলা ব্লগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, শিবিরের সাইবার স্পেশাল টিম বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ব্লগ মনিটরিং করে জামায়াত-শিবিরবিরোধী ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এরা শিবিরের হিট লিস্টে রয়েছে। উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন ওরফে শুভ। গুরুতর আহত হয়েছেন আসিফ মহিউদ্দিন। শুক্রবার রাতে পল্লবীস্থ তার নিজ বাড়ির পাশ থেকে শুভর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ১৪ই জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় আসিফ মহিউদ্দিনের ওপর অতর্কিত হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর তিনি যোগ দেন শাহবাগ স্কয়ারের আন্দোলনে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন