শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৩

ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি খ্যাত লালন প্রেমিক শরীফুল শেখ ভালো নেই

  মনির উদ্দীন মনির, ভেড়ামারা : ভালো নেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি খ্যাত শরীফুল শেখ। ইত্যাদির অনুষ্ঠানের পর আর্ন্তজাতিক বাউল সম্মেলন, ভারতের ভুপাল রাজ্যে ৩ দিনব্যাপী সার্ক সুফী সম্মেলন সহ কয়েকটি দেশী বিদেশী আর্ন্তজাতিক মানের অনুষ্টানে যোগ দেওয়ার পরই থমকে গেছে তার জীবন। বহু প্রতিভার এই শিল্পীর জীবন এখনও আটকে আছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার অঁজোপাড়া গাঁয়ের কুচিয়ামোড়া পান হাটে। মরমী সাধক লালন শাহ্’র জীবন দর্শন বুকে ধারন করে তিনি লালনের গান, লালনের অপূর্ব ছবি এঁকে বিশ্বের দরবারে লালন শাহ্ কে অন্য এক মর্যাদায় আসীন করতে চান। হতে চান মানবতাবাদী একজন মানুষ।“মানুষ ভোজলে সোনার মানুষ হবি” বাউল সম্রাট লালন ফকিরের এই মূল মন্ত্রেই দীক্ষা লাভ করেছে শরীফুল শেখ। সে একজন প্রকৃত লালন প্রেমিক। ভবের লালনকে বুকে ধারণ করে গেয়ে চলেছেন লালনের অসংখ্য গান। শিল্পীর তুলি দিয়ে লালন’র জীবন দর্শন এঁকে প্রচার করছেন লালনের মহত্ব। বোঝাতে চাইছেন লালন ফকির কোন জাতের ছিলেন না। তিনি ছিলেন সকল মানবের। স্বল্প সময়ে লালন ফকিরের ছবি ভেড়ামারা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে এঁকে লালন’র জীবন দর্শন প্রচার করে চলেছেন। চরম হতদরিদ্র শরীফুলের রয়েছে অনেক প্রতিভা। লালনের গান গাওয়া, লালন ছাড়াও বিশ্বের বরেণ্য ব্যক্তিদের ছবি আঁকা তার নেশা। তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ৫’শ মৌলিক গান রচনা ও কবিতা লিখেছেন। সুরও তিনিই দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি মঞ্চে সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করে মানুষের মনের মনি কোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। লালন শাহ্ কে গভীর ভাবে তুলে ধরেছেন তার লিখনিতে। বহু প্রতিভার এই শিল্পীর জীবনচিত্র ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে তুলে ধরেন হানিফ সংকেত। যা বিগত ২০০৯ সালের ৩০ অক্টোবর রাতে বিটিভি তে প্রচারিত হয়। এ অনুষ্ঠানে শরীফুল শেখ’র হাতে তুলে দেওয়া হয় ১ লক্ষ টাকার চেক। ইত্যাদি’র কল্যানে ওই বছরই তিনি আর্ন্তজাতিক বাউল সম্মেলন কেন্দ্রে যোগ দেন। ২০১১ সালের শেষের দিকে বাউল সম্রাট লালন শাহ্’র জীবনীর উপর সার্ক সূফী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ভারতের ভুপাল রাজ্যে। ৩ দিন ব্যাপী ওই অনুষ্ঠানে “মনের মানুষ” সিনেমার কন্ঠ শিল্পী আব্দুল লতিফ শাহ্’র সহযোগী হিসেবে শরীফুল শেখ ওই সম্মেলনে যোগ দেন।  কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউপির আড়কান্দি গ্রামের নূরুল ইসলাম’র পুত্র শরীফুল শেখ। দারিদ্রতাকে জয় করতে ছোট বেলা থেকেই কর্মে জড়িয়ে পড়েন। জীবন জীবিকার তাগিদে নানা পেশায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলে সংগ্রাম চালাতে থাকেন। সে কাজ নেয় স্থানীয় কুচিয়ামোড়া পান হাটে। পেশাভিত্তিক মূল কাজ এটিই। শ্রমিক হিসেবে কাজ করে প্রতিদিন ২’শ টাকা আয় করেন। সপ্তাহে তিনদিন চলে তার কাজ। যা পান তাই দিয়েই কষ্ট আর সংগ্রাম করে চলে তার জীবন সংসার। দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে ২০০০ সালে রায়টা হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি পাশ করেন। হাড়ভাঙা খাটুনি, কঠোর অধ্যবসায় আর লালন প্রেমকে সঙ্গী করে ২০০৩ সালে বিজেএম কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। পরে সেখানেই বি.এস.এস. পাশ কোর্সে ভর্তি হয়ে ২০১০ সালে ফাইনাল পরীক্ষা দেন। এবং দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। শরিফুল শেখ বলেন, আমি লালনের ভক্ত। লালনের গান আর লালনের ছবি এঁকে মানুষকে মুগ্ধ করা আমার নেশা। লালন’র জীবনাদর্শ বুকে ধারণ করে মানব প্রেমে আমার জীবন উৎস্বর্গ করতে চাই। নিজেকে মানবতাবাদী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে চাই। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির কল্যানে আমি দেশী-বিদেশী কয়েকটি আর্ন্তজাতিক মানের অনুষ্টানে যোগ দেওয়া ছাড়াও প্রতি বছর লালন একাডেমীর নিয়মিত শিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করার সুযোগ পেয়েছি। উপস্থাপনাও করছি। তিনি মরমী সাধক লালন শাহ্’র জীবন দর্শন প্রচার করে বিশ্বের দরবারে লালন শাহ্ কে অন্য এক মর্যাদায় আসীন করতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চান। তবেই তিনি প্রতিভাকে আরও বিকশিত করে তার লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন