বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৩

ইবির আইন ভঙ্গ করে প্রভোস্টের অনুমতি ছাড়াই আবাসিক হলে পুলিশের নিস্ফল তল্লাশি : আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা


রাশেদুন নবী রাশেদ, ইবি প্রতিনিধি-
 ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রভোস্টদের অনুমতি ছাড়াই বিশ্বদ্যিালয়ের আইন ভঙ্গ করে নিস্ফল তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে তিন শতাধিক পুলিশ গতকাল বিকেল ৫ টার দিকে হঠাৎ করে আবাসিক হলগুলো ঘিরে ফেলে। তিন ঘন্টা ব্যাপী তল্লাশি চলাকালে পুলিশ আবাসিক হল থেকে কাউকে গ্রেফতার কিংবা কোন কিছু উদ্ধার করতে পারেনি। শান্ত পরিবেশে আকস্মিক ভাবে হলে শত শত পুলিশের প্রবেশের ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। শহীদ জিয়াউর রহমান হল ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট হলে প্রবেশের জন্য পুলিশ তাদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন।পুলিশ ও প্রত্যাক্ষদর্শী সূত্র মতে-গতকাল বিকেল ৪টার দিকে আকস্মিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে তিন প্লাটুন বিজিবি অবস্থান নেয়। একই সাথে র‌্যাব ও ডিবির একাধিক গাড়ি মেইনগেটে অবস্থান নিলে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তের মধ্যে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও শৈলকুপা থানা থেকে তিন শতাধিক পুলিশ মেইন গেটে এসে উপস্থিত হয়। বিকেল ৫টার দিকে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে পুলিশ ও ডিবির তিন শতাধিক পুলিশ ছাত্রদের আবাসিক এলাকা ঘিরে ফেলে। শতশত পুলিশ সাদ্দাম হোসেন হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হল ও লালন শাহ হলে ঢুকে যায়। এসময় সাদ্দাম হোসেন হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শাহজাহান মন্ডল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান উপস্থিত থাকলেও শহীদ জিয়াউর রহমান হল ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট উপস্থিত ছিলেন না। তিন ঘন্টা ধরে হলগুলোতে তল্লাশি চালানো হলেও পুলিশ কোন অবৈধ আগ্নেঅস্ত্র কিংবা ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি। সন্ধার পরে জিয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. রূহুল আমিন ভ’ইয়া উপস্থিত হয়ে ক্ষোভের সাথে বলেন, কি কারনে কার নির্দেশে হলে অভিযান চলছে আমি কিছুই জানিনা। হঠাৎ করে ছাত্ররা আমাকে ফোন দিয়ে জানায় হলে পুলিশ ঢুকেছে। আমার হলে অভিযান চলছে অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। আবাসিক হলে পুলিশ ঢুকতে হলে হল প্রভোস্টের অনুমতি নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু আজ এটি লঙ্ঘিত হলো।’ ’আমি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। ক্যাম্পাসে খুললে শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে সিন্ধান্ত নিব।এছাড়া ওই হলের ছাত্ররা অভিযোগ করে বলেন-‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা হল প্রশাসনের কোন ব্যক্তির উপস্থিতি ছাড়াই পুলিশ হঠাৎ করেই হলের চার তলায় উঠে যায়। ছাত্রদের সাথে ঔদ্ধত্ব মুলক আচরন করে। ।লালন শাহ হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি ছাত্র উপদেষ্টাকে বারবার অনুরোধ করেছি আমার হলের পরিবেশ শান্ত। আমার হলের পরিবেশ নষ্ট করেবেন না। তিনি ওয়াদা দিয়ে পরে আমার এবং হলের আবাসিক শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতেই হলে পুলিশি তল্লাশি চালিয়ে ছাত্রদের হয়রানি করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। তিনিও ক্যাম্পাসে এসে সিন্ধান্ত নেওয়ার কথা ব্যক্ত করেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত পরিবেশে হল প্রভোস্টোর অনুপস্থিতে কেন হলে হলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে ছাত্রউপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি হল প্রভোস্টের অনুমতি নিয়েছি। কি কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন হঠাৎ অভিযান চালাচ্ছে সেটা আমি জানিনা। কিন্তু তার সামনে জিয়া হলের প্রভোস্ট তাকে কেন বিষয়টি জানানো হয়নি প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন-‘গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে হলে তল্লাশি চালিয়েছি। চারটি হলের অর্ধশতাধিক কক্ষে তল্লাশি করে আমরা কোন অবৈধ অস্ত্র পাইনি। কোন ছাত্রকে গ্রেফতারও করা হয়নি।’
প্রক্টর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন-‘সকাল থেকে ক্যাম্পাস স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু দুপুরের পরে পুলিশের উধর্বতন কর্তৃপক্ষ হলে তল্লাশি চালানোর অনুমতি চাইলে আমরা সহযোগীতা করেছি। পুলিশ কোন অবৈধ অস্ত্র ও নাশকতা সৃষ্টির কোন সারঞ্জাম পায়নি। তল্লাশির পর ক্যাম্পাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে।’ হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া তল্লাশির বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে অপারগাতা প্রকাশ করেন।শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক প্রফেসর ড. ইকবাল হোসাইন বলেন, এটি দুঃখ জনক ও উদ্বেগ জনক যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয এটি সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান সুতরাং এখানে যদি কোন নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় তার জন্য প্রক্টর ও হলের প্রোভোষ্ট রয়েছে। কিন্তু তাদের তাদের অনুমতি না নিয়ে পুলিশ হলে তল্লাশী চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত ও অস্থীতিশীল করার জন্য এবং আইন ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মর্যদা অক্ষুন্য ও অসম্মান করেছে। শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। শিক্ষক সমিতির জরুরী সভা আহব্বান করে সিন্ধান্ত নিব।
এব্যাপারে ইবি ছাত্রদলের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে প্রসাশনের সামনে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায় অথচ তাদের গ্রেফতার না করে ছাত্রদের হলে প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে তল্লাশী চালিয়ে সাধারন শিক্ষার্থীদের যে হয়রানি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে এর জন্য ছাত্র দলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানায় ।এঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন গ্রীণফোরাম, জিয়াপরিষদ, ছাত্রশিবির, ও সচেতন মহল নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিমের সরকারের নিকট যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।এদিকে হলে তল্লাশি শেষে সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ আবাসিক এলাকা ছেড়ে চলে গেলে ক্যাম্পাসের মেইনগেট ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীরা বেশ কয়েকটি হাত বোমার বিষ্ফোরণ ঘটায়। ফলে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন