শনিবার, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৩

দৌলতপুরে ৩৭ গ্রামের ১লাখ মানুষ পানিবন্দি

ষ্টাফ রিপোর্টার : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পানিতে উপজেলার দুই ইউনিয়ন রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারির ৩৭টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১লাখ মানুষ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামান্য ত্রান বিশাল অংশের মানু
ষের হাতে পৌছে দিলেও চাহিদার তুলনায় তা একেবারেই নগন্য বলে দাবী বন্যা কবলিত মানুষের। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ওই এলাকার লাখো মানুষের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। অনেকেই অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার দুই ইউনিয়নের ৩৭টি গ্রামের মধ্যে সব ক’টি গ্রাম এখন অথৈ পানিতে সয়লাব। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির ফসল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চিলমারী এলাকার পদ্মা নদীর কুলবর্তি মানুষেরা। মূল পদ্মা নদীর রাজশাহীর বাঘা উপজেলা সীমান্তবর্তি কুষ্টিয়ার চিলমারী এলাকায় নদী ভাঙ্গনে প্রতি দিনই সেখানকার চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। দুই মাস আগ থেকে পদ্মার মারাত্বক
ভাঙ্গন শুরু হলে সেখান থেকে যারা চিলমারীর বিভিন্ন স্থানে ঘর বাড়ি নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল তারা আবার নতুন করে বন্যার কবলে পড়েছে। অনেক স্থানে দেখা গেছে নদী ভাঙ্গন থেকে আশ্রয় নেয়া মানুষেরা কোমর ও গলা পানিতেই বসবাস করছে। সেখানকার আবাল বৃদ্ধা, নারী-পুরুষ ও শিশুদের চোখে মুখে অজানা বিষাদের ছাপ। বিশেষ করে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়া মানুষেরা গত দু মাস ধরেই সংগ্রাম করে দিনাতিপাত করছে। বর্তমান এই এলাকার মানুষজনের এক মাত্র বাহন নৌকা আর টিনের তৈরী ছোট ডিঙ্গি নৌকা। চিলমারী উদয় নগর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম সিকদার ঈদুল ফিতরের দিন পদ্মার ভাঙ্গনে পড়ে ঘর বাড়ি নিয়ে সরকার পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে নিজের জমিতে নতুন করে মাথাগোজার ঠাঁই নেন। এর কয়েক দিনের মধ্যে বন্যার পানিতে সেই স্থান তলিয়ে যায়। এখন স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও নাতী-নাতনী এবং গরু ছাগল নিয়ে স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। বাড়ি ঘর সামলাতে আর প্রয়োজন মেটাতে সব সময় তাকে থাকতে হয় পানির মধ্যে। বৃদ্ধ কৃষক নুরুল ইসলাম এবং তাঁর স্ত্রী আমেনা খাতুন জানান, ৫০ বিঘার বেশি জমি। ৮বিঘা জমিতে আউশ ধান ছিল, ৩বিঘা পাট এবং অন্যান্য ফসল ছিল। সব কিছুই পানিতে তলিয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনের রেশ কাটতে না কাটতেই বন্যার পানি সব কিছুই এলোমেলো করে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নদী ভাঙ্গন এবং বন্যার পানিতে অভ্যস্ত কিন্তু এভাবে সব ফসল দীর্ঘ দিন পানিতে তলিয়ে থাকতে দেখিনি। শুধু আমি নই, এলাকার সকল কৃষকের একই পরিনতি। বাজুমারা গ্রামের কৃষক রাশেদুল হক রানা জানান, মানুষের প্রধান ফসল আউশ ধান। এবার সেই আউশ ধান এক চিমতে কেউ ঘরে তুলতে পারেনি। তিনি বলেন, বন্যায় আমার ৬০ বিঘা আপেলকুলের বাগান স¤পূর্ণ পানির নীচে। আউশ ধান ছিল ৪০বিঘা জমিতে আর পাট ছিল ১৬ বিঘা। ইতিমধ্যে ২বিঘা জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। এই ফসল দিয়েই আমাদের পরিবারের সারা বছরের ব্যয় নির্বাহ করতে হয় কিন্তু এই অবস্থায় আগামীতে আমরা কিভাবে উঠে দাঁড়াব সেটাই ভেবে কুল পাচ্ছি না। প্রতি বছরই নদীর পানি প্রবেশ করে স্থায়ী থাকে মাত্র ৮/১০ দিন। কিন্তু এবার সেই আষাঢ় মাসের শুরুতে নদীর পানি এলাকায় ঢুকেছে এখন পর্যন্ত পানি বেড়েই চলেছে। আর পলি জমিতে বালু জমায় আগামীতে এলাকায় ফসলহানীর সম্ভবনা বেশি রয়েছে। ইউপি সদস্য আজু মে¤॥^ার জানান, চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী,চর বাহিরমাদী,বাজুপাড়া,তেমাদিয়া,পুর্বচর রামপুর,কৃষ্মপুর,উত্তর চক রাজাপুর, সৌদিপাড়া, কাজী বিলমারী, দক্ষিণ বাজুপাড়া, জোতাশা, পুর্ব আগমনীর ঘাট, উদয়নগর, সাতের মোড়সহ ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখানকার সব বাজারঘাট পানির নীচে। মানুষজন নৌকা আর টিনের তৈরী ডিঙ্গির উপর নির্ভর করছে। ইতিমধ্যে পানিতে ডুবে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। আউশ ধান, পাট, সবজি বাগান, নার্সারী বাগান তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক শত পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এলাকার কাঁচা রাস্তা গুলোর আর কোন চিহ্ন নেই। চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ জানান, এলাকার মানুষ একমাত্র কৃষির উপর নির্ভরশীল। শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষক এবং ২০ ভাগ মানুষ দিন মজুর। আউশ এখানকার সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ফসল, কিন্তু সেই আউশ এবার কৃষকের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এলাকার কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে মাজা ভেঙ্গে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে এখানকার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের জন্য শুধু সাহায্য নয়, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে এলাকাবাসীকে বাঁচাতে দীর্ঘ মেয়াদী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও জানান, সরকারী ভাবে সামান্য সাহায্য পেয়ে তা ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বিতরণ করেছি। কিন্তু আরো সাহায্য প্রয়োজন। পানি নেমে যাওয়ার পর এলাকায় ভয়াবহ মহামারীর আশংকা করে তিনি জানান- এ ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে একাধিক চিকিৎসা ক্যাম্প এবং ওষুধ প্রয়োজন। তাছাড়া-নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের বাঁচাতে চিলমারীতে একটি আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরী হয়ে পড়েছে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন জানান, দৌলতপুর উপজেলার দুই ইউনিয়নের বন্যা দূর্গতদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এখানকার মানুষ যাতে করে কষ্টে না থাকে সেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন