বুধবার, ফেব্রুয়ারী ২৬, ২০১৪

বিচারের বাণি নিভৃতে কাঁদে

মিরপুরে আলোচিত জোনাকী হত্যার ৩ বছরেও বিচার পাইনি পরিবার  

স্টাফ রিপোর্টার : কুষ্টিয়ার মিরপুরে আলোচিত জোনাকী হত্যা মামলার তিন বছর অতিবাহিত হলেও আজও তার কোন কুল কিনারা হয়নি। এ নিয়ে নিহত জোনাকীর পরিবারে দেখা দিয়েছে নানা সংশয় আর হতাশা। বর্তমানে হত্যা মামলাটি কুষ্টিয়া কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। যার মামলা নং-মিস ৩২/১১। মামলার প্রধান আসামী জোনাকীর স্বামী সাইফুল, তার বাবা আবু শামা, সাইফুলের প্রথম স্ত্রী নাসিমা খাতুন, চাচা মুনজিল হোসেন, বোন বন্যা খাতুন। বর্তমানে এ মামলার প্রধান আসামী সাইফুল জামিন নিয়ে বাইরে রয়েছে। অন্য আসামীদের মধ্যে সাইফুলের বোন বন্যা খাতুন দেশের বাইরে পলাতক। জানা যায়, ২০১০ সালে মিরপুর উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের কাদেরপুর গ্রামের আবু শামার ছেলে সাইফুলের সাথে মিরপুর পৌর সভার সুলতানপুর গ্রামের লুৎফর রহমান বাচ্চুর ছোট মেয়ে জোনাকী খাতুনের বিয়ে হয়। প্রথম স্ত্রী থাকার পরেও জোর পূর্বক সাইফুল দ্বিতীয় বিয়ে করে জোনাকীকে। বিয়ের পর থেকে দিন যতই বাড়তে থাকে সাইফুল ততই বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কারনে অকারনে জোনাকীর উপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। ধারা বাহিক চলতে থাকে জোনাকীর উপর নির্যাতন। সাইফুলের অমানুষিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে মারা যায় জোনাকী। সুত্র জানায়, ২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী সকালে জোনাকীর স্বামী সাইফুল, শশুর আবু শামা, সাইফুলের প্রথম স্ত্রী নাসিমা খাতুন, চাচা মুনজিল হোসেন, বোন বন্যা খাতুন লোহার রড, দরজার হুক, কাঠের বাঠাম দিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধকরে হত্যা করে। পরে ওই দিন বিকেলে সাইফুল জোনাকীর পরিবারকে জানায় সে বিষ খেয়ে আতœহত্যা করেছে। জোনাকীর পরিবার তাৎক্ষনিক ভাবে বিষয়টি জানতে পেরে সাইফুলের বাড়ীতে উপস্থিত হয়। সেখানে গিয়ে জোনাকীকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। এসময় নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন থাকলেও আসামীরা এ হত্যার ঘটনাকে আতœ হত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারী হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে আসলে তৎকালিন মিরপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা (এস আই) লিয়াকত আলী জোনাকীর মায়ের কাছ থেকে দু’টি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরে একটি হত্যা মামলার জন্য অপরটি পোষ্ট মর্টেমের অনুমতির জন্য লাগবে বলে জানায় তার পরিবারকে। মেয়ের মৃত্যু শোকে বিহবল জোনাকীর মা সাদা কাগজ দুটিতে স্বাক্ষর করেন। পরে জানতে পারে স্বাক্ষর করা কাগজে একটি অপমৃত্যু অপর স্বাক্ষরটি সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করা হয়েছে। পরবর্তিতে মিরপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে গেলে মামলা না নিয়ে জোনাকীর পরিবারকে ফিরিয়ে দেয়া পুলিশ। পরে নিহতের পরিবার কুষ্টিয়া কোর্টে মামলা করেন যার নং-মিস ৩২/১১। মামলার পর কোর্ট এ ব্যাপারে মিরপুর থানার কাছে প্রতিবেদন চাইলে থানা আসামীদের বাঁচাতে একটি মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করে। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামীদের বিরুদ্ধে কোন সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যায়নি। পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও সুরত হাল রিপোর্টে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। জোনাকীর পরিবার অভিযোগ করেন, হত্যার সময় জোনাকীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। বিষয়টি সে সময় প্রাথমিক ভাবে সুরতহাল রিপোর্টে পুলিশ উল্লেখ করেন। পরে সাইফুলের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রিপোর্টটি পাল্টে ফেলে জোনাকীর মৃত্যুকে আতœহত্যা বলে একটি বানোয়াট রিপোট তৈরী করায়। সাইফুলের অর্থের জোরে পরাজিত হয়ে পড়েছে অসহায় পরিবারটি। জোনাকী নিহত হবার পর থেকে তার পরিবারের লোকজন, আত্মীয় স্বজন এবং শুভাকাঙ্খিরা হত্যার বিচার চেয়ে সাংবাদিক সম্মেলন, মানব বন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করেন। কিন্তু তিন বছর অতিবাহিত হলেও আলোচিত জোনাকী হত্যার বিচার হয়নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন