মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০১৪

অধ্যাপক আবু তাহির মুহাম্মদ মুছলেম উদ্দিনের ইšেতকাল ॥ জাতি হারালো তার শ্রেষ্ঠ সন্তান

 ॥ অধ্যাপক ড. মোহাঃ তোজাম্মেল হোসেন ॥

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের প্রবীন শিক্ষক, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবীদ, লেখক,জ্ঞান তাপস ও নিবেদিত প্রাণ গবেষক অধ্যাপক আ ত ম মুছলেম উদ্দিন গত ২ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যার পর ইন্তেকাল করেছেন ( ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহের রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়ে ছিল ৮৮ বছর। তিনি দুই ছেলে ও স্ত্রীসহ দেশ বিদেশে অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সুবাকাঙ্খি রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় হারালো একজন মেধাবী, নিষ্ঠাবান ও আদর্শ শিক্ষক।অধ্যাপক আ ত ম মুছলেম উদ্দিন ১ ফেব্রুয়ারী ১৯২৯ খ্রি. ফেনী জেলার উত্তর চাড়িপুর গ্রামে এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তৎকালীন মুসলমি ঐতিহ্য অনুসারে পারিবারিক পরিবেশেই প্রাথমিক পর্যায়ের পড়ালেখা শেষে নোয়াখালীর সোনাপুর ইসলামীয়া মাদরাসা, ফেনী সিনিয়র মাদরাসায় (বর্তমানে আলীয়া মাদরাসা) প্রায় দশ বছর পড়া শুনা করেন। অত:পর কলকাতা আলীয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৪৪ খ্রি. তিনি অত্র মাদরাসা থেকে ১ম বিভাগে ৩য় স্থান অধিকার করে কামিল পাশ করেন। ১৯৪৬ খ্রি. তিনি হুগলী ইসলামীক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ১ম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আই এ পাশ করেন।১৯৪৯ খ্রি. তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ও ইসলামীক স্টাডিজ বিভাগ থেকে (আরবী বিষয়ে) ১ম শ্রেনীতে ২য় স্থান অধিকার করে বি এ অনার্স পাশ করেন। ১৯৫০ খ্রি. একই বিভাগ থেকে ১ম শ্রেনীতে ২য় স্থান অধিকার করে এম এ পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৩ খ্রি. উর্দূ ফার্সী বিভাগ থেকে উর্দূতে এবং একই বিভাগ থেকে ১৯৭৩ খ্রি.কৃতিত্বের সাথে এস.এ পাশ করেন। ছাত্র জীবনে মেধার স্বাক্ষর রেখে তিনি চাকরি হিসেবে শিক্ষকতাকেই বেছে নেন। সরকারী বেসরকারী কলেজ মিলিয়ে প্রায় ১৫ বছর কাল চাকরী করে ১৯৬৭-১৯৭২ খ্রি. ঈর্যন্ত বাংলা একাডেমীতে চাকরী করেন। ১৯৭২ সালের জুন মাসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ০৫.০৭.১৯৮৩ - ০৪.০৭.১৯৮৬ খ্রি. পর্যন্ত তিনি উক্ত বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বিভাগ থেকে নিয়মিত চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করলেও আমৃত্যু তিনি উক্ত বিভাগের অনারারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।অধ্যাপনার পাশাপাশি মরহুম মুছলেম উদ্দিন দেশী বিদেশী অনেক সেমিনারে অংশ গ্রহন করেন। ১৯৮৭ খ্রি. মরক্কোর কেজ এ অনুষ্ঠিত আন্তজার্তিক সম্মেলনে অংশ গ্রহন করেন এবং বাংলাদেশে আরবী শিক্ষা শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ১৯৯৮ খ্রি. করাচীতে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বাংরাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ গ্রহন করে “মুসলীম বিশ্বে আরবী শিক্ষার প্রয়োজনীযতা” শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন। দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত জার্নালে তার কিছু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিজে পিএইচডি না করলেও অনেক এমফিল ও পিএইচডি গবেষনার তত্বাবধায়ক ছিলেন। ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত অনেক গ্রন্থেই তার লেখা প্রবন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে ইসলামী বিশ্বকোষ। বাংলা ভাষায় আরবী সাহিত্যের ইতিহাস লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার লেখা ‘আরবী সাহিত্যের ইতিহাস’ ( জাহেলি যুগ থেকে উমাইয়াদের পতন পর্যন্ত) বইটি একটি মৌখিক গ্রন্থে পরিনত হয়েছে।ঊ্যক্তিগত জীবনে তার ছেলে মেয়েদের অকাল মৃত্যু এক মর্মান্তিক ঘটনা। তার ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে বর্তমানে ছেলে বেঁচে আছেন বাকী ৬ জন অকাল মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন। হৃদয়ে এ গভীর বেদনা নিয়েও তিনি নিষ্টার সাথে বিভাগের দায়িত্ব ও গবেষনা কর্ম চালিয়েছেন। তিনি দিবারাত্রি প্রায় বেশিরভাগ সময়ই আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তার ঢাকাস্ত কাজিপাড়ার বাসার নিচ তলা মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করতেন। তার সাথে আমার অনেকবার নামাজ পড়ার সুযোগ হয়েছে।তার মৃত্যুতে জাতি একজন নিবেদিত প্রাণ, গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ হারালো। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন...আমীন।
[লেখক: অধ্যাপক ড. মোহাঃ তোজাম্মেল হোসেন, সভাপতি আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।]


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন