বৃহস্পতিবার, মার্চ ০৬, ২০১৪

কুষ্টিয়া চিনিকলে ৪০ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত চাষিদের পাওনা সাড়ে ১০ কোটি


আশরাফুল ইসলাম অনিক ॥ চিনিকলে আখ মাড়াইয়ের দৃশ্য কুষ্টিয়া চিনিকলের চলতি মাড়াই মওসুমে আখচাষিদের পাওনা ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চিনি বিক্রি না হওয়ায় মিল কর্তৃপক্ষ চাষিদের পাওনাসহ মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের দুই মাসের বেতন পরিশোধসহ মিলের বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে পারছে না। যেকোনো সময় চাষিদের পাওনার দাবিতে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। গত দুই মওসুম ও বর্তমান মওসুমে উৎপাদিত দেড় হাজার মেট্রিক টন অবিক্রীত চিনি মিলের গোডাউনে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে বড় একটি অংশ চিনি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে কুষ্টিয়া চিনিকল কর্তৃপক্ষ মারাত্মক চাপের মুখে রয়েছে। এ দিকে সারা দেশের সব চিনিকলের একই অবস্থা হওয়ায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা অনেকটা নিরূপায় হয়ে পড়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, সরকারের ভ্রান্তনীতিতে চিনি শিল্প ক্রমান্নয়ে রুগ্ণ হয়ে পড়ছে। দেশের চাষিরা দীর্ঘ দিন পর যখন মিলে আখ সরবরাহের দিকে সুনজর দিতে শুরু করেছেন ঠিক সেই মুহূর্তে চাষিসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের মধ্যে অশনি সঙ্কেত বাজছে। মিল
কর্তৃপক্ষ সুগার মিলের উৎপাদিত চিনি বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে কয়েক দফা দাম কমানোর পর সর্বশেষ ৫০ টাকা কেজি থেকে ৪০ টাকা কেজি দর নামিয়ে এনেও কোনো রকমের সুবিধা করতে পারছে না।বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি চিনিকলের কাঁচা চিনি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ৩৬-৩৮ টাকায়। সেখানে চিনিকলের উৎপাদিত চিনি ৪০ টাকা দরে কেউ কিনছে না। আবার মিলের নির্ধারিত ডিলাররা কোনো রকমের চিনি ক্রয়ে আগ্রহ প্রদর্শন করছেন না বলে জানা গেছে।কুষ্টিয়া চিনিকলে সরেজমিন দেখা গেছে, মিলে আখ মাড়াই চলছে। বহু পুরাতন কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটি লেগেই থাকে। এক ঘণ্টা চললে আধা ঘণ্টা মাড়াই বন্ধ থাকছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই। তারপরও কুষ্টিয়া চিনিকল চলতি মাড়াই মওসুমে ৮০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৫০০ মেট্রিক টনের কাছাকাছি চিনি উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদিত এই বিপুল চিনির এক কেজিও বিক্রি হয়নি। বরং ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ মাড়াই মওসুমের অবিক্রীত পাঁচ হাজার ৬২০ মেট্রিক চিনি মিলের গোডাউনে পড়ে রয়েছে।মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুদর্শন মল্লিক বলেন, মিলের চাষিরা স্বপ্রণোদিত হয়ে মিলে আখ সরবরাহ করছেন। এখনো অনেক আখ মাঠে রয়েছে যা মিলে সরবরাহ করবে চাষিরা। চাষিদের সহযোগিতা পাচ্ছি কিন্তু চাষিদের পাওনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছি। তিনি জানান, চাষিদের পাওনা সাড়ে ১০ কোটি টাকার বেশি হবে। চিনি বিক্রি না হওয়াতে চাষিদের টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। এ ছাড়া মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন দুই মাস বন্ধ রয়েছে। মোলাসেস বিক্রি চলছে। তা দিয়ে একান্ত প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে হচ্ছে। এ দিকে মিল এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, আখচাষিদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে। কিছু দিন আগেও যে চাষিকে দিয়ে আখচাষ করানো যায়নি সেই চাষিরা আখচাষে এগিয়ে আসার পরও আখের পাওনা না পেয়ে সবাই যেন অুখশি।বাংলাদেশ আখচাষি কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আক্কাস আলী জানান, টাকা না পেয়ে চাষিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি জানান সারা দেশে একই অবস্থা। তারপরও আমরা মিল কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে পাওনা আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। কুষ্টিয়া চিনিকলে অবিক্রীত চিনির পরিমাণ সাড়ে ১০ মেট্রিক টনেরও বেশি। যার বাজারমূল্য টাকার অঙ্কে ৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। দিন দিন চিনির পরিমাণ বাড়ছে, কিন্তু চিনি বিক্রি হচ্ছে না। গত দুই মওসুমের চিনি অনেক আগে থেকেই নষ্ট হতে শুরু করেছে। মিলের গোডাউনে পুরাতন চিনির বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।স্থানীয়রা জানান, বেসরকারিভাবে উৎপাদিত চিনির বাজারমূল্য কম হওয়ায় দেশি চিনি কেউ কিনছে না। আবার মন্ত্রণালয় থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত খোলাবাজারে চিনি বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় মিল কর্তৃপক্ষ খোলা বাজারে চিনি বিক্রি করতে পারছে না। তবে শিগগিরই উৎপাদিত চিনি বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা হবে বলে অনেকে আশা করছেন।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন