শুক্রবার, মার্চ ২১, ২০১৪

“উপজেলা নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মহা উৎসব করেছে আওয়ামীলীগ”



কুষ্টিয়ায় বিএনপির ডিসি অফিস ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশি বাধা ॥ প্রতিবাদে সমাবেশ ॥ স্মারকলিপি প্রদান

আব্দুম মুনিব : উপজেলা নির্বাচনে দেশব্যাপী ভোটের, সহিংসতা, ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতি, খুন, গুম ও গুপ্ত হত্যার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় বিএনপি দেশব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে কুষ্টিয়ায় ডিসি অফিস ঘেরাও কর্মসূচীতে কোর্টের প্রধান ফটকে পুলিশ বাধা প্রদান করে। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানেই এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে স্মারক লিপি প্রদান করে। এর আগে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে একটি বিশাল মিছিল শহর প্রদক্ষিন করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করতে গেলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া অতিরিক্ত পুলিশ মিছিলটি আটকে দিলে প্রধান ফটকের সামনে সমাবেশ করে। পরে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রান ও পুর্নবাসন বিষয়ক সম্পাদক জেলা বিএনপির সভাপতি কুষ্টিয়া জেলা ১৯ দলীয় জোটের আহবায়ক সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল স্মরক লিপি প্রদান করে। জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুজিবুল ফেরদাউস স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন । এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান হেলাল, শহিদুল হক, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার সাজেদুর রহমান বাবলু, কুতুব উদ্দিন আহমেদ, এমএ শামীম আরজু, কুমারখালী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড.কুতুবুল আলম নতুন, সদর থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক এসএম ওমর ফারুক, ভেড়ামারা থানা বিএনপির সভাপতি সিহাবুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি আবু দাউদ, মিরপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড.শামীম উল হাসান অপু। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক হাজী শওকত হাসান বুলবুল, প্রচার সম্পাদক কাজী আব্দুর রব দিলু, ক্রীড়া সম্পাদক আল আমিন কানাই, যুব বিষয়ক সম্পাদক মেজবাউর রহমান পিন্টু, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মুঈদ বাবুল।
এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মেহেদী রুমী বলেন, উপজেলা নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনদফা উপজেলা নির্বাচনে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী, খোকসা, মিরপুর উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ব্যালটবাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ওপর হামলা
ও ব্যাপক ভোট জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ইতোমধ্যে নির্বাচনী সহিংসতায় ১৯ দলের একাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া ধারলো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বা পিটিয়ে শতশত বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে জখম করা হয়েছে। আহত হয়েছে নারী, শিশুসহ সাধারণ মানুষ। এই নির্বাচনী সাহিংসতা ও ভোট কেন্দ্র দখলের উৎসবে প্রশাসন আওয়ামীলীগের পক্ষে কাজ করেছে।
গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বুঝতে পেরেছে জনগন তাদের সাথে নেই। আর এ কারেন উপজেলা নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যাবহার করে ভোট কারচুপি, জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখলসহ ভোট ডাকাতির মহা উৎসবে নেমেছে তারা। ইতিহাসে অন্যায়-নির্যাতন চিরদিন পরাজিত হয়েছে। নির্যাতন করে এই সরকারও বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না।
সোহরাব উদ্দিন বলেন, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের সমর্থকদের তাণ্ডবে সরকারি বাহিনীরা সহযোগীতা করেছে যা দেশের অধিকাংশ গনমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। জনগণ আওয়ামীলীগকে কতো সময় ক্ষমতায় রাখবেন বা রাখবেন না তা জনগণই সময় মতো বলে দেবে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামীলীগ মনে করেন ভারতই একমাত্র ক্ষমতার উৎস। সে জন্য তারা জনগণের চাওয়াকে না, ভারতের চাওয়াকে হ্যাঁ বলেন। তারা বাংলাদেশের মানুষগুলোকে নির্বোধ মনে করে। তিনি বলেন, সরকার দেশব্যাপী গুম ও হত্যার পাশাপাশি মানুষের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই সাথে স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্রের অবসান এবং গণতন্ত্র অবমুক্ত করতে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে। এই সংগ্রামে জনগণের বিজয় হবে এই সংগ্রামে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটানো হবে।
স্মারক লিপির পূর্ণ বিবরন দেওয়া হল ঃ চলমান উপজেলা নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত তিন দফা উপজেলা নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর ওপর হামলা ও ব্যাপক ভোট জালিয়াতির ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিন দফা নির্বাচনী সহিংসতায় ৪ জন নিহত হয়েছেন এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বা পিটিয়ে জখম করা হয়েছে বিরোধী দলীয় সমর্থক প্রার্থীসহ শত শত নেতা-কর্মীদের। আহত হয়েছে নারী শিশুসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ। এহেন নির্বাচনী সহিংসতা ও ভোট কেন্দ্র দখলের উৎসবে প্রশাসন নির্লিপ্ত থাকছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারী দলের সমর্থকদের সৃষ্ট সন্ত্রাস ও তান্ডবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে-যা দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে।
প্রতিদিন গুম, খুনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা। দেশের পৃথক পৃথক স্থানে প্রতিদিন অসংখ্য লাশ পাওয়া যাচ্ছে। সমুদ্রে, নদীতে, পুকুরে, খালে বিলে ও নির্জন লোকালয়ে মানুষের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। মৃতদেহগুলি অধিকাংশই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের। বিরোধীদলসহ সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এখন গভীর সংকটাপন্ন। রাজনীতিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, ছাত্রসহ সাধারণ মানুষ সরকারী সন্ত্রাসে প্রাণ হারাচ্ছে। সমাজে ন্যায় বিচার তিরোহিত হয়ে গেছে। সরকারী দলের সন্ত্রাসীদের অবাধ স্বাধীনতায় বাংলাদেশের সমাজে এখন ভয়ংকর খুন, জখম ও দাঙ্গাহাঙ্গামার অরাজকতা বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি উল্লিখিত ঘটনাগুলির প্রতি আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করছে। রাষ্ট্রীয় আইনানুযায়ী জনপ্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করে পরবর্তী দুই দফা উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করা এবং গুম খুন ও গুপ্তহত্যা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রিয় মহোদয়, উপরোক্ত বিষয়ের আলকে আমরা জানাতে চাই যে, সারাদেশের সাথে সাথে কুষ্টিয়া জেলাতেও ২য় দফা উপজেলা নির্বাচনে কুমারখালী, খোকসা ও মিরপুর উপজেলায় ব্যাপক কারচুপি, কেন্দ্র দখল করে ইচ্ছামত ব্যালটে সিলমারা হয়েছে। এসকল বিষয়ে নির্বাচনে দায়িত্ব প্রাপ্তদের ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযোগ জানিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এরফলে উক্ত উপজেলা সমুহে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি তাই আমরা কুমারখালী, খোকসা ও মিরপুর উপজেলায় পুনরায় নির্বাচন দাবী করছি, আমাদের দাবীর সপক্ষে যুুক্তি সমুহ।
(১) খোকসা উপজেলা ঃ খোকসা উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন যথা শোমসপুর, আমবাড়ীয়া, জয়ন্তীহাজরা ও গোপগ্রাম ইউনিয়নের ১৭টি ভোট কেন্দ্র এবং বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের বনগ্রাম স্কুল কেন্দ্র, ও খোকসা ইউনিয়নের রতনপুর স্কুল কেন্দ্রসহ ১৯টি কেন্দ্র দখল করে জনগনের ভোটাধীকার প্রদানে বাধা দিয়ে এক বিভিষিকাময় অবস্থার সৃষ্টি করে নাগরিক সমাজের প্রার্থী সৈয়দ আমজাদ আলীকে পরাজিত করা হয়েছে। ৪৪ টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৩ কেন্দ্রে নাগরিক সমাজের প্রার্থী সৈয়দ আমজাদ আলী জয়লাভ করেছেন এমতাবস্থায় আমরা মনে করি উক্ত কেন্দ্র সমুহ পূণঃ নির্বাচন দেয়া হলে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন ঘটবে। প্রসংগত উল্লেখ যে, সৈয়দ আমজাদ আলীর বিজয়ী ২৩ টি কেন্দ্রের ভোট প্রদানের হার গড়ে ৭৫ % অথচ, দখলকৃত ১৯টি কেন্দ্রের ভোট প্রদানের হার শতকরা ৯৫% প্রায়। এতেই প্রমানিত হয় যে, উক্ত কেন্দ্রে সমূহে জালিয়াতি করেই সৈয়দ আমজাদ আলীকে পরাজিত করা হয়েছে।
(২) কুমারখালী উপজেলা ঃ কুমারখালী উপজেলায় ৯৬ (ছিয়ানব্বই) টি কেন্দ্রের মধ্যে সচেতন নাগরিক সমাজের প্রার্থী নূরুল ইসলাম আনছার ৭৫(পচাত্তর) টি কেন্দ্রে জয়লাভ করেন বাকী ২১ টি কেন্দ্রে যেহেতু ভোট জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদানের মাধ্যমে জনগনের ভোটধিকার হরন করা হয়েছে। কেন্দ্র সমুহ হল কয়া ইউনিয়নের সমস্ত কেন্দ্র, জগন্নাথপুর ইউনিয়নের সমস্ত কেন্দ্র, বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম ও ভড়–য়াপাড়া কেন্দ্র, শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর ও মাজগ্রাম কেন্দ্র সদকী ইউনিয়নের বাটিকামারা কেন্দ্র। প্রসংগত উল্লেখ যে, নুরুল ইসলামের বিজয়ী ৭৫ টি কেন্দ্রের ভোট প্রদানের হার গড়ে ৬২% অথচ, দখলকৃত ২১ কেন্দ্রের ভোট প্রদানের হার শতকরা ৯৬% প্রায়। এতেই প্রমানিত হয় যে, উক্ত কেন্দ্রে সমূহে জালিয়াতি করেই নুরুল ইসলাম আনছারকে পরাজিত করা হয়েছে।
(৩) মিরপুর উপজেলা ঃ মিরপুর উপজেলা নির্বাচনে সারা উপজেলা ব্যাপি ত্রাস, কেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি। তাই আমরা মনে করি মিরপুর উপজেলায় পূণঃ নির্বাচন দিলে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন ঘটবে।
উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে আমরা মনে করি অভিযোগ সমুহ আমলে নিয়ে তদন্ত পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে জনগনের ভোটাধিকার প্রদানের সুযোগ দেয়া হউক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন