শুক্রবার, মার্চ ০৭, ২০১৪

উপজেলা নির্বাচন ও আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা

মাহমুদ শরীফ : বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে একটি ব্যাপার সহজেই লক্ষ্য করা যাবে যে, সকল ক্ষেত্রেই জনপ্রিয়তা এসেছে বিশেষ কোন কাজ কিংবা ঘটনার কারনে। সেই জনপ্রিয়তা মূলতঃ দুই ভাবে অর্জিত হতে পারে। এক, ভালো বা প্রসংসনীয় কিছু প্রতিষ্ঠার জন্য। দুই, মন্দ বা নিন্দনীয় কোন কর্মকান্ডের জন্য। শেষের বিষয়টিকে জনপ্রিয়তা বলা হলেও সেটার কিন্তু অহংবোধ করার মত বিন্দুমাত্র অধিকার বিশ্ব সমাজ কিংবা দেশ দেয়নি। কেউ দান করে দানবীর হওয়ার মত জনপ্রিয়তা লাভ করে ধন্য হয়। আবার কেউ অন্যের ধন-সম্পদ জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে ডাকাত সর্দার হওয়ার মত জনপ্রিয়তা অর্জনে সফল হয়ে থাকে!! বর্তমান সময় জনপ্রিয়তা জাহির করার সময়ও বটে। আর এই জনপ্রিয়তা জাহির করা যায় বিভিন্ন মিডিয়ায় নিজের ঢোল নিজেই কিংবা দলীয় ভাবে পিটিয়ে। আবার সর্বস্তরের জনগনের মনের কথা, পছন্দ, চাওয়া-পাওয়া, প্রত্যাশা সবই যাছাই কিংবা ঝালাই হয় নির্বাচন বা ভোটের মাধ্যমে। বাংলাদেশে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া বেশ জোরে জোরেই বইছে। দুই পর্যায়ের নির্বাচনী হাওয়ায় কাদের জনপ্রিয়তা কতটুকু তার প্রমান মোটামুটি দেশবাসীসহ বিশ্ব সমাজ সজাগ দৃষ্টি ফেলে অবলোকন করছে। আপাতত দৃষ্টিতে দুই পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনে প্রমানিত হয়েছে কোন রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা কতটুকু আছে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের চেয়ে বিএনপি ও তাদের জোট এগিয়ে আছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।বিভিন্ন মিডিয়ার বদৌলতে বিশ্ববাসী দেখেছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আবার তারা উপজেলা নির্বাচনও প্রত্যক্ষ করছে। এই উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ভয়ে আওয়ামীলীগ সারা দেশে কি এবং কত রকম হামলা মামলা আর সন্ত্রাস চালিয়েছে তার হিসেব মেলা ভার। পত্রিকায় পাতা উল্টালেই ভুরিভুরি প্রমান পাওয়া যাবে। অন্যদিকে ভোটের দিন কারচুপি কত প্রকার এবং কি কি সেটারও প্রমান দিয়েছে সরকার দলীয় ক্যাডার, আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন আর প্রশাসন। ভোটের দিনের চিত্র দেখে মনে হয়েছে দেশের যত আইন হয়েছে সবই বিরোধী দলের শায়েস্তা করার জন্য। আর আওয়ামীলীগের জন্য সব কিছুই আইনের উদ্ধে। তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা মাথায় বেঁধে খুন করলেও মাফ, কারণ তারা দেশপ্রেমিক সেজেছে পতাকা জড়িয়ে। কিন্ত যাদের অন্তরে শতভাগ দেশপ্রেম রয়েছে তারা অপরাধ না করলেও কত রকম অপরাধের আসামী সেটার হিসেব নেই। পতাকা পুড়ানো, শহীদ মিনার ভাঙ্গা, বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া বা অন্য কোন ভাবে ক্ষতি সাধনের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে জেলে ঢুকানো, এসবই উপজেলা নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার কৌশল এটা সচেতন জনগন ও প্রকৃত দেশপ্রেমিকরা সহজেই বুঝে গেছে। কিন্ত বুঝলেই কি? প্রতিবাদ করলেই মামলার খড়গ। অথবা প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, পাকিস্থান চলে যান।আসলে সত্য হলেও তিক্ত যে, নিজেরাই অপকর্ম করে অন্যের উপর দোষ চাপানো যাদের স্বভাব কিংবা মজ্জাগত চেতনা, তাদের দ্বারা অনেক কিছুই (অপকর্ম) করা সম্ভব। কেননা, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়া আর কুপিয়ে বিশ্বজিৎকে খুন করলেও ওরা সোনার ছেলে। আর যাদের কাছে কিছুই পাওয়া যায়না, তারা অস্ত্র মামলার আসামী। রিমান্ড যাদের পান্তা ভাত। রিমান্ডের নামে নির্যাতন করে পঙ্গু বানানো নিত্য ব্যাপার। হায়রে শপথ নেওয়া প্রশাসন!উপজেলা নির্বাচনে হাজারো রকম ভোট কারচুপি করেও আওয়ামীলীগ বিএনপি থেকে বেশী জায়গায় বিজয়ী হতে পারেনি। এ পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯দলীয় জোট থেকে ১১৬জন চেয়ারম্যান ও ২১৬ জন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। পক্ষান্তরে আওয়ামীলীগ জোট ৮০ টি চেয়ারম্যান ও ১২০ টি ভাইস চেয়ারম্যান পদে অনেকটা ডাকাতি করে জয়ী হয়েছে। এক্ষেত্রে গৃহ পালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ২ জন চেয়ারম্যান ও ৮জন ভাইস চেয়ারম্যানে বিজয়ী হয়েছে। কিন্ত জামায়াতে ইসলামী এক্ষেত্রে ২১টি চেয়ারম্যান পদ ও ৭৭টি ভাইস চেয়ারম্যানের আসনে বিজয়ের মালা পরেছে। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, যদি সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হত তাহলে এর ফলাফল যে আওয়ামীলীগের পক্ষে আরো কত খারাপ হত তার হিসেব কি আওয়ামীলীগ করেছে ? হয়তো করেনি। কারণ, কোন ভদ্রলোক যে আওয়ামীলীগ করেনা বা করতে পারেনা একথা দিবালোকের মত সত্য। ভদ্র লোকেরা কখনো ভুল করে আওয়ামীলীগের সাথে থাকলেও সম্বিৎ ফিরে এলেই ভুলের প্রাশঃচিত্ত করতে উদ্দোগী হয়। উপজেলা নির্বাচনের আগে-পরে অব্যহত হামলা মামলা নির্যাতন জ্বালাও পোড়াও খুন গুম করেও যখন জনগনকে ঠেকানো সম্ভব হচ্ছেনা, তখন কি আর বলতে হবে আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা কোথায় গিয়ে পৌছেছে? তলানীতে। আবার যাদেরকে নিয়ে আওয়ামীলীগের সব ক্ষেত্রে সিরিজ গলাবাজি, সেই জামায়াতে ইসলামীর নেতারা উপজেলা নির্বাচনে কি করে বিজয়ী হচ্ছে ? উহ! কষ্টে আওয়ামীলীগের বুকটা বুঝি ফেটে গেল! বলি এত মামলা-হামলা আর নির্যাতনের কী দরকার ? যদি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তাহলে নির্বাচন কেন ? সংসদে বিল এনে তা পাশ করিয়ে
ঢাকার দুইটি সিটি করপোরেশন আর ৬৪টি জেলা পরিষদের মত উপজেলাতেও প্রশাসক নিয়োগ দিলেই সব চুকে যেত। তাহলে মাঝে নির্বাচনের নাটক করে কোটি কোটি টাকার অপচয় হতোনা। দেশবাসী আর বিশ্বও দেখতো না কাদের কতটুকু জনপ্রিয়তা রয়েছে। প্রমানিত হতোনা আমার ছেলে চোর- অসৎ! বিশ্ব কিন্তু ঠিকই জেনে গেছে বাংলাদেশে বর্তমানে গণতন্ত্রের নামে নব্য স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। সব জনপ্রিয়তার কিস্তিমাত হচ্ছে রামতনুদের। কারণ প্রকৃত জনপ্রিয়তা বলতে যা বুঝায় সেটা ওরা পায়নি। পেয়েছে জনপ্রিয়তার নামে জনগনের তীব্র ঘৃনার প্রতিদান। অজনপ্রিয়তাকে অবৈধ ক্ষমতার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা বানিয়ে প্রচারের কসরত চালানো যায়, তবে সেটা বেশি দিনের জন্য নয়।ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে আর জোর করে মসনদ দখলে রাখতে যত প্রকার ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন, একদিন সত্য বেরিয়ে যাবেই। কালো মেঘ সূর্যের কিরণকে বেশিক্ষন ঢেকে রাখতে পারেনা। পরিপক্ষ বীজ দানা উর্বর মাটি পেলে গজাবেই। সংসদ নির্বাচনের পর জনগন উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো সতর্ক করে দিয়েছে জোর করে জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়না। সংসদ নির্বাচনে জনগন প্রথম বার লাল কার্ড দেখিয়েছিল। তার পরেও মাঠ ত্যাগ না করে আওয়ামীলীগ জোর করেই দেশ নিয়ে খেলছে। জোর করে যে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়না বর্তমান বিশ্বে এর প্রমান ভুরি ভুরি। এদেশের জনগন সব সময়ই স্বাধীনচেতা। ১৭৫৭র পরে ৪৭, ৫২, ৭১, ৯১তে জনগন দেখিয়েছে তাদের ক্ষমতা। জনগন এবার উপজেলা নির্বাচনে পুনরায় লাল কার্ড প্রদর্শন করে গত দিনের কথা স্মরন করিয়ে দিয়েছে। এবারেও যদি মাঠ ত্যাগ না করে তবে আইন ভঙ্গের কারণে বিভাগীয় সাজা কত কঠোর হতে পারে তার কি ধারণা করা যাবে ? আসলে দেশ ও জনগনকে ভালোবেসে তাদের জন্যই মূলতঃ কাজ করে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে হয়। সত্যিকারের জনপ্রিয়তা পেতে চাইলে সংখ্যাগোরিষ্ট জনগনের ভাষা বুঝতে হবে, জনগনের প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে হবে। জোর করে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে গেলে অজনপ্রিয়তা নামের কম্বল এসে ধরা দেবে। তখন কম্বল ছেড়ে দিলেও কম্বল কিন্তু আওয়ামীলীগকে ছাড়বেনা।সর্বপরি উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে হাজারো কারচুপি করেও যখন প্রমানিত হলো আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা তলানীতে পৌছে গেছে। সে কারনে আর দেরি নয়- যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে জনগনের কাতারে শামীল হওয়া যাবে, ততই জনগন ও আওয়ামীলীগের জন্য মঙ্গল বৈকি!




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন