মঙ্গলবার, এপ্রিল ০৮, ২০১৪

কুষ্টিয়াসহ দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত

খালিদ হাসান সিপাই :

কুষ্টিয়াসহ দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহ চলছে। ভ্যাপসা গরম আর তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় আরো কয়েকদিন এই অসহনীয় অবস্থা চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। তারা বলছে, এ সময় সূর্য পৃথিবীর খুব কাছাকাছি চলে আসে এবং তীব্র গরম অনুভূত হয়। বৃষ্টি না হওয়ায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। মাঝারি তাপপ্রবাহের পাশাপাশি বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি এই অতিরিক্ত গরমের অন্যতম কারণ। তীব্র রোদে পুড়ছে জন-প্রান্তর। ভ্যাপসা গরমে অতিস্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। বেড়েছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ।  চিকিৎসকরা বলছেন, এই গরমে বেশিক্ষণ খোলা স্থানে থাকলে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। তাদের মতে, ভ্যাপসা গরমে দেহ থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়। এ কারণে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে এবং প্রয়োজনে খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে।অন্যদিকে তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। রাতে এবং দিনে ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই। গরমে ঘরে বাইরে কোথাও এতটুকু স্বস্তি নেই সাধারণ মানুষের। পথ চলতে একটু স্বস্তির আশায় অনেকেই কিনছেন রাস্তার পাশে বিক্রি করা ঠা-া পানীয়। ফুটপাতে বিক্রেতারা বরফ দেয়া ঠান্ডা সরবতের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। গ্রামাঞ্চলের মাঠ-ঘাটও ফেটে হয়েছে চৌচির। এই অবস্থায় লোকজনের প্রত্যাশা এক পশলা বৃষ্টির। কিন্তু চৈত্রের তাপদাহে সেই কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা নেই। এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, আরো দুই তিনদিন তীব্র তাপদাহ বিরাজ করবে। বৃষ্টি হলে ভ্যাপসা গরম ও তাপদাহজনিত দুর্ভোগ কিছুটা কমে আসবে। দেশে স্বাভাবিকভাবে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে তীব্র দহন থাকে। গত বছরের তুলনায় এবার গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। গত বছর এই মাসে বৃষ্টির পরিমাণ কিছু বেশি ছিল। সারাদিন তীব্র রোদ ছিল। তাই প্রচ- গরমে ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া লোকের সংখ্যা ছিল খুব সামান্য। এ অঞ্চলে প্রতি বছর প্রচ- শীতের পাশাপাশি প্রচ- গরম পড়ে। তাই শিশু ও বয়স্কদের গরম মোকাবেলায় বাড়তি প্রস্তুতি দেখা যায়। এরমধ্যে রাজশাহীতে তীব্র গরমে ও লোডশেডিংয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।  গরমের কারণে দেশজুড়ে এমন তাপদাহে ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, জ্বর, আমাশয়, জন্ডিস ও পানিবাহিত রোগসহ নানা রোগবালাই। হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর ভিড়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তীব্র গরম ও শীতে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে এখনই এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে চিকিৎসাবিদরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে প্রতি বছর এ সময়টায় সিজনাল কিছু রোগের প্রার্দুভাব দেখা দেয়। শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা এর শিকার হয়ে থাকে। এই গরম ও তাপদাহে শিশুদের বাইরে না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তিনি বলেন, ভ্যাপসা গরমে দেহ থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়। এ কারণে শরীরের পানিশূন্যতা হ্রাসে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে এবং প্রয়োজনে খাবার স্যালাইন খেতে হবে। এদিকে তাপদাহ বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। লোডশেডিং শুরু হয়েছে দিন-রাতে কমপক্ষে ৫-৭ ঘন্টা।  এ দিকে বোরো ধান এখন থোড়। তাই পানির প্রয়োজনটাও এখন সবচেয়ে বেশী। কিন্তু শুরু হয়েছে ভয়াবহ লোডশেডিং। এ ছাড়া বিদ্যুত বিভ্রাট এবং লো-ভোল্টেজতো চলছে নিয়মিতই। তাই কৃষকরা হয়ে পড়েছে দিশেহারা। আর বিদ্যুৎ থাকলেও সেই সাথে থাকে লো-ভোল্টেজ অথবা ভোল্টেজ আপ-ডাউন। ফলে এলাকার বোরো চাষিরা এ নিয়ে হয়ে পড়েছে চরম চিন্তাগ্রস্ত। সবে বোরো ধান থোড় ক্ষেত্র বিশেষ কাইচ থোড়। এ সময়ে সঠিকভাবে সেচ দিতে না পারলে ফসল মাঠে মারা যাবে। এরই মধ্যে ঘন-ঘন বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা কুষ্টিয়ার কৃষকদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। অপর দিকে ঋতু বৈচিত্রের ব্যাপারটি যেন এখন বলতে গেলে হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকটাই গ্রন্থগত। বর্ষায় যেমন বৃষ্টি নেই তেমনি গ্রীষ্মে ও দেখা নেই বৃষ্টির। অর্থাৎ পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে না বৃষ্টি না থাকায় তপ্ত তাপমাত্রায় মানুষের হাসফাঁস অবস্থা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই প্রকৃতির এমন বিরুপ আচরণ বলছেন বিশেষজ্ঞগণ। প্রকৃতির এমন বিরুপ আচরণে মানুষের নানা রোগব্যাধি ছাড়াও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে কৃষির।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আবহাওয়ার এ ধরণের আচরণ জলবায়ু পরিবর্তনেরই ফসল। এ জন্যই প্রকৃতি এমন বিরুপ আচরণ করে চলেছে। প্রকৃতি এখন আর স্বাভাবিক আচরণ করছে না। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্রমেই বেড়ে চলছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়ও পরিবর্তন ঘটছে। আর এ জন্যই বছরের যে সময় আবহাওয়া যেমন থাকার কথা, তা থাকছে না। ষড় ঋতুর দেশ-বাংলাদেশ, তাতে ক্রমেই পরিবর্তণ ঘটছে। ৬ ঋতুর দেশে এখন যেন ঋতু মাত্র ২ টি। গ্রীস্ম, আর শীত ছাড়া বাকি বসন্ত,শরৎ এবং হেমন্তকাল যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। তা ছাড়া গ্রীস্ম, বর্ষা এবং শীতকালেও আবহাওয়ার অস্বাভাবিকতা বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়ই বটে। আর সে জন্যই বর্ষাকাল শুরু হলেও দেখা মেলে না বৃষ্টির। খাল-বিল, নদী-নাল তো পানি শূণ্য সেই বর্ষা কাল থেকেই! এ অবস্থায় বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা।
ফলে একদিকে জনজীবন ওষ্ঠাগত। অপরদিকে অত্যাধিক তাপমাত্রার ফলে মানুষের হচ্ছে নানা ধরণের রোগব্যাধি, হাসপাতালে এখন আর ঠাঁয় নেই। বৃদ্ধা আর শিশুরাই বেশী আক্রান্ত হয়েছে নানা রোগে। তাছাড়া অপুরনিয় ক্ষতি হচ্ছে ফসলাদির।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন