মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ০২, ২০১৪

বাঙালীর ঘরে ঘরে হরেক রকম পিঠা তৈরির উৎসব চলে দিন রাত

কালের বিবর্তনে ও কর্ম চাঞ্চল্যের কারণে বর্তমানে পিঠা বানিজ্যিক রুপ লাভ করছে

আশরাফুল ইসলাম : শীতের ঐতিহ্যবাহী রকমারি পিঠা রসময় করে তোলে বাঙালীকে। পৌষ মাসে পিঠা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে আরও উলাস বাড়ে মায়ের বকুনি খেয়ে। গ্রামের শীতের সকালে নানা রকম পিঠা তৈরি হয়। পিঠা তৈরির মাধ্যমে গ্রামের মহিলাদের শৈল্পিক কুশলতার পরিচয়ও পাওয়া যায়। শীতের সকালে খেজুরের পাটালি গুড় দিয়ে তৈরি করা গরম ভাপা পিঠা নরম রোধে বসে খাওয়ার আনন্দ গ্রাম্য জনগোষ্ঠীর অজানা নয়। খেজুর রসের পায়েস বাঙালী জনগোষ্ঠীকে রসময় করে তোলে আরো। শীতের ঐতিহ্যই ধরে রেখেছে বিভিন্ন রকমারি পিঠা, পুলি, পায়েশ। এ সময় বাঙালীর ঘরে ঘরে হরেক রকম পিঠা তৈরির উৎসব চলে দিন রাত। এতে পিছিয়ে নেই এ অঞ্চলের ফুটপাথের পিঠা তৈরির কারিগররা। কাকডাকা ভোর থেকে শরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে পিঠা বেচাকেনার কার্যক্রম। কালের বিবর্তনে ও কর্ম চাঞ্চল্যের কারণে বর্তমানে পিঠা  বানিজ্যিক রুপ লাভ করছে । মানুষ ফুটপাথের দোকান থেকে পিঠা কিনে নিজেও খাচ্ছেন সন্তানদেরও খাওয়াচ্ছেন। তবুও সচ্ছল অসচ্ছল প্রায় প্রতিঘরেই শীতের পিঠা তৈরির রীতি আজও চালু আছে। আগের সেই ঐতিহ্য এখনও চালু আছে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে। তাই শীতের বিভিন্ন পিঠা এখনও হারিয়ে যায়নি কালের আবর্তে।  ঘরে ঘরে এমনকি গ্রামের হাটবাজার থেকে শরু করে রাস্তার পাশের ফুটপাতে চলে নানা রকম পিঠা বেচা কেনা। শীতকালে জীবিকা নির্বাহের জন্য হতদরিদ্র মানুষের অল্প পুঁজিতে চলে পিঠা বেচাকেনার ব্যবসা। ফুটপাথের এসব তৈরি পিঠা খেতেও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার
মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এসব পিঠা বিক্রেতার রোজগারও হয় ভাল। পিঠা বিক্রির কাজে পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির গৃহিণীরাও যুক্ত থাকেন তাদের সঙ্গে। আবার অনেকেই আলাদা দোকান সাজিয়ে পিঠা বিক্রি করে থাকেন। শীতের এ সময়ে শহর ও গ্রাম অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ভাপা পিঠা, দুধ চিতই, চিতই, পুলি পিঠা, নকশি পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, তেল পিঠা, মেরা পিঠাসহ হরেক রকমের পিঠা তৈরি কাজে ব্যস্ত থাকেন গৃহিণীরা। এতে শীতের বাহারি নকশি করা পিঠার হারিয়ে যেতে বসেছে। পাশাপাশি ভবিষ্যত প্রজন্ম হারাচ্ছে পিঠা তৈরির কৌশল। কুষ্টিয়া শহরের কাটাখানার মোড় ,কলেজ মোড় ,হাসপাতাল মোড়,হাউজিং কদম তলার মোড়,নিশান মোড়,মিলপাড়া, থানার মোড়,থানাপাড়া বিভিন্ন মোড়ে, জিকের ঘাট সহ শহরের বিভিন্ন অলি গলিতে পিঠা বিক্রয় হয়ে থাকে। জৈনিক পিঠা বিক্রেতা শাহিনা জানান, শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে দিন মজুরি ছেড়ে তিনি ফুটপাথে পিঠা তৈরি করেন। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা ও মেরা পিঠা (গুটি পিঠা), তৈরি করে প্রতিটি পিঠা ২টাকা থেকে ৫ টাকা করে বিক্রি করে থাকেন।  প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত লাভ করে থাকেন। পিঠা বানানোর কাজে তাকে সাহায্য করেন তার স্ত্রী। পিঠার চাল ঢেঁকিতে গুঁড়ো করে দোকান সাজিয়ে বসেন। বর্তমানে পিঠা বিক্রি করে সচ্ছলভাবে চলে তাঁর সংসার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন