শনিবার, ডিসেম্বর ২০, ২০১৪

ভুক্তভোগী মহল চায় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ

কুষ্টিয়া মাদকে সয়লাব নেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের নজরদারি

স্টাফ রিপোর্টার : প্রায় সব ধরনের মাদকে এখন ভাসছে কুষ্টিয়া। ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইন, মদসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিঘে বিক্রি হচ্ছে কুষ্টিয়ায়। শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নেত্বত্বে লাভজন অবৈধ মাদকের ব্যবসায় অনেকেই গাড়ি বাড়ি বহু অর্থের মালিক। এ সব অবৈধ মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রশাসন বড় ধরনের অভিযান কখনও চোখে পড়েনি। যার কারনে এখান মাদক বেচা কেনার নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে বেশ পরিচিত শহরের কলিশংকর পুর, শহীদ উজ্জল তাহেরি রোড়, হাউজিং, কুঠিপাড়া, আমলাপাড়া, মিলপাড়া সহ বেশ কয়েকটি স্থান। এসব মাদকদ্রব্য দমনে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থাকলেও কুষ্টিয়ায় মাদক নিয়ন্ত্রণে তাদের কোন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। বরং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জেলার সুশীল সমাজ। জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলা শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকা মাদকদ্রব্যে সয়লাব হলেও মরণ নেশা প্রতিরোধে তেমন
একটা মাথাব্যথা নেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অধিকর্তাদের। হাত বাড়ালেই যে কোন মাদকদ্রব্য খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে অহরহ। মনে হয় কুষ্টিয়া শহর এখন মাদকের হাটে পরিণত হয়েছে। শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্পটে মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা এমন রূপ নিয়েছে যে, প্রতিরোধ ও দমনকারী প্রতিষ্ঠান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নিজেই যেন অকেজো ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি স্পটের চিত্র চরম ভয়াবহ। কুষ্টিয়া শহর ও শহরতলীর প্রায় শতাধিক স্পটে মাদকসেবী, মাদক বিক্রেতাদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। কুষ্টিয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দু’জন কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই সকল মাদক স্পটে মাদক ব্যবসায়ীরা বীরদর্পে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এ সকল মাদক স্পট থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে থাকে বলে জানিয়েছে খোদ মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া উপ-অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন এবং পরিদর্শক মো. মফিজ উদ্দিন বিশ্বাসের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া শহরসহ আশেপাশের এলাকা ফেন্সিডিল, হেরোইন, ইয়াবা, রেকটি ফাইট স্পিরিট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। তবে ওই দু’জন কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছে। জানা গেছে, কুষ্টিয়ার সীমান্ত দিয়ে নানা কৌশলে মাদকদ্রব্য ঢুকছে। প্রতিদিই সীমান্ত দিয়ে নানা কৌশলে মাদকদ্রব্য ঢুকছে। বিজিবি ও প্রশাসনের কঠোর ভূমিকার পরও মাদক চলে আসছে ভারতের ওপার থেকে। মাদকের ভয়াল থাবায় ধ্বংস হচ্ছে জেলার যুব সমাজ। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে জেলার সুশীল সমাজ। তথ্য সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় সীমান্তে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ৪৬ কিলোমিটার এলাকা বিস্তৃত। এর মধ্যে ১৮ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া। বাকি ২৮ কিলোমিটার ‘অরক্ষিত’ উন্মুক্ত। সীমান্তের ২৮ কিলোমিটার অরক্ষিত-উন্মুক্ত জায়গা দিয়েই প্রতিদিন পানির মতো চলে আসছে মাদক, ভারতীয় পণ্য। সীমান্তে এ চোরাচালান রোধে বিজিবি ও বিএসএফ প্রায়ই বৈঠক করলেও কোন ফল হয়নি। উন্মুক্ত জায়গা দিয়ে শুষ্ক মওসুমে পায়ে হেঁটে সীমান্ত পার হয়ে এবং বর্ষাকালে নৌকায় করে মাদক পাচার করছে। বিজিবি ও প্রশাসনের কঠোর ভূমিকার পরও ‘অরক্ষিত’ সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রতিদিনই ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন ও বলবর্ধক বড়িসহ নানা নেশাদ্রব্য ঢুকছে। উপজেলায় প্রায় অর্ধশত স্থানে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হয়। অপরদিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বিভিন্ন স্পটে মাদক ব্যবসা চলছে। এছাড়াও পোড়াদহের বিভিন্ন স্থানে মাদক ব্যবসা করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। কুষ্টিয়ায় মাদকদ্রব্যের প্রধান সিন্ডিকেট হিসাবে পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনকে বেছে নিয়েছে। রাতে ও দিনে বিভিন্ন ট্রেনে সীমান্ত থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলো থেকে অবাধে মাদকদ্রব্য আসছে। এছাড়াও দলবদ্ধ ভাবে মাদক সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা দ্রুততার সহিত মাদক ব্যবসায় ব্যবহার করা হয় মোটর সাইকেল,সিএনজি অটো-রিকসাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে। এর মধ্যে ফেন্সিডিল, মদসহ বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় ওষুধ দেদারছে চলে আসছে। এছাড়াও আসছে ভারতীয় নিম্নমানের সার। পোড়াদহের আমদানীকৃত মাদকদ্রব্য শহরকে মাদক দ্রব্যের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা মাদক ব্যবসায়ীদের দখলে থাকায় প্রতিদিন এ জেলার ভিতরে ধেয়ে আসছে মাদকদ্রব্য। এসব মাদক দ্রব্য পেড়াদহের বিভিন্ন স্পটে হরেক রকম স্টাইলে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে মাদক ব্যবসায়ীরা কৌশল পরিবর্তন করছে। তারা মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে গাঁজা, মদ, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্যাদি বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে। যানা যায়, পৌর এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে সন্ধ্যার পর থেকে বসে সব রকমের মাদক বেচা কেনা হাট। যার ফলে সে সব এলাকায় মাতালদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যা হলে মোটর সাইকেল করে অবৈধ মাদক বেচা কেনার হাট বসে অলিগলিতে। এতে এলাকার লোকজন চলাফেরা করতে রিতীমত হিমশিম খেতে হয়। দীর্ঘ দিন থেকে পৌর এলাকার কাটাই খানার মোড়, নিসান মোড়, বজলুর মোড়, কালিশংকরপুর, থানাপাড়া, মজমপুর গেইট সহ বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাদকের অবৈধ হাট বসায়। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক এলাকার বাসিন্দারা জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা রাতারাতি লাখোপতি বনে যাচ্ছে। কিছু ভায়নক মাদক ব্যবসায়ীরা উল্লেখযোগ্য, ৭নং ওয়ার্ড এলাকারা মাছেদুল, ক্রাইম জোন খ্যাত বড় বাজার এলাকার রাজারহাট বিহারী কোলনী, রজবআলী খান চৌধুরী রোড ও তার আশ পাশ এলাকার শাহীন, সাধন, মাইকেল, রহিমের ছেলে ফয়সাল, ষ্টেশন রোডের ইকবাল, দেশওয়ালী পাড়ার শিবুয়া, ধুপাপাড়ার গোপেলের ভাই ফাতু, ছেউরিয়ার ময়েজ ও রশন, লালন একাডেমীর অন্তু, আড়–য়াড়ার অশিত, আড়–য়াপাড়ার মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে আবু সাহিম নয়ন, আমলাপাড়ার বাদল, স্বপন, কুঠিপাড়া তালতলার সানো, ঘোরার ঘাট এলাকার ওলিদ, হিরি কানা বউ প্রমুখ।  সবমিলে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে দেদারছে মাদক বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অজ্ঞাত কারণে নীরব ভূমিকাাপালন করায় মাদকে ভয়াল থাবা জেলাবাসীকে গ্রাস করতে চলেছে। মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা প্রতিরোধে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি টাস্কফোর্স অভিযান অব্যাহত থাকলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান চোখে পড়ে না তেমন একটা।জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মামলার সংখ্যা অতি নগন্য হলেও পক্ষপাতদুষ্ট তদন্তের কারনে অনেক মামলা বিচারের কাঠগড়া পর্যন্ত আসার আগেই তদন্তের নামে প্রাথমিক পর্যায়েই শেষ হয়ে যায়। মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা প্রতিরোধে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি টাস্কফোর্সের অভিযানে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিনষ্ট কিংবা ধ্বংস করার ঘটনা নিয়েও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানামুখি অভিযোগ। কুষ্টিয়াকে মাদকমুক্ত করতে হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ থাকতে হবে। পক্ষপাত দুষ্ট না করে সকলের ব্যাপারে সমান পদক্ষেপ নিলে জেলার আইনশৃঙ্খলার যেমন উন্নয়ন হবে তেমনি মাদকমুক্ত সমাজ গঠন হবে বলে মন্তব্য করেন জেলার সুশীল সমাজ। তাই মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কুষ্টিয়া মাদকমুক্ত হবে বলে জানান কুষ্টিয়াবাসী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন