রবিবার, জানুয়ারী ০৪, ২০১৫

মহামানব হযরত মুহাম্মাদ সাঃ এর মহানুভবতা

॥ আব্দুম মুনিব ॥

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও মহামানব। তিনি পৃথিবীর মানুষের সামনে যে আর্দশ ও কর্মপদ্ধতি তুলে ধরেছেন জাতিধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ আজ তা মনে প্রাণে স্বীকার করে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-ই পৃথিবীর অন্যান্য নবী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিলেন। এই মহামনবের মহানুভবতার নজির রয়েছে অসংখ্য, বেচে থাকা কালীন সময়ে তিনি তার কাজের মাধ্যমে এর এক একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যার ক্ষুদ্র অংশ বিশেষ আলোচনা হল। মক্কার কাফিরদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) হিজরত করে মক্কা থেকে মদিনা গমন করেন। তিনি মদীনায় একটি শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করেন, কিন্তু তখনও নবীজি কর্তৃক মক্কা বিজয় হয়নি। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইসলাম প্রচার করার কারণে মক্কার কুরাইশরা নবীজি এবং তাঁর বংশ হাশিম বংশের লোকদের একঘরে করে রেখেছিল। সে সময় শিশু বাচ্চাদের খাবারের জন্য ক্রন্দন, আহাজারি বা বৃদ্ধদের দুর্ভোগ দেখে মক্কার অমুসলিমগণ সামান্যতম করুনা প্রদর্শন করেনি। নব্য মুসলিমগণ খাবারের অভাবে গাছের পাতা,ছাল,পশুর চামড়া সিদ্ধ করে খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেছেন। বাইরের
থেকে কেউ যেন তাঁদের খাবার কোনভাবেই সরবরাহ না করতে পারে অমুসলিমরা তার জন্য সব কিছু করেছিল। দীর্ঘ ৩টি বৎসর মুসলিমগণ এরকম অসহায় অবস্থায় ছিল। এসময় ইয়ামামার গভর্ণর শামামা নবীজি এবং নওমুসলিমদের সেই কষ্টের কথা ভেবে মক্কায় খাবার এবং সব্জি সরবরাহ বন্ধ করে দেন। আর এদিকে মক্কা ছিল পাথুরে এলাকা, স্থানীয়ভাবে খুব বেশী খাদ্য উৎপাদিত হত না, এখানকার প্রয়োজনীয় খাদ্যের প্রধান যোগানদাতা ছিল ইয়ামামা প্রদেশ। খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় মক্কার সমস্ত মানুষ মহাবিপদের মধ্যে পরে যায়,তারা নিরুপায় হয়ে নবীজির কাছে এ বিষয়টি জানালেন। নবীজি এ ঘটনা শুনে ইয়ামামার গভর্ণর কে এরুপ করতে নিষেধ করলেন এবং অনতিবিলম্বে খাদ্য সরবরাহ পূর্বের ন্যায় চালু করতে বললেন । শামামা নবীজির আদেশ শুনে দ্রুত পূর্বের ন্যায় মক্কায় খাবার সরবরাহ শুরু করেন ।
হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এমন অসংখ্য মহানুভবতার প্রমান পাওয়া যায়। কাফিরদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য তিনি হিজরত করে মক্কা থেকে মদিনা গমনের কিছুদিন পর অনাবৃষ্টি এবং খরার কারণে মক্কায় প্রবল দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। মক্কার চারদিকে খাবারের জন্য প্রবল হাহাকার । খাদ্যের অভাবে মানুষ মৃত পশু,পশুর চামড়া খাবার হিসাবে গ্রহণ করতে বাধ্য হল। মক্কার প্রতাপশালী এবং ধর্নাঢ্য আবু সুফিয়ান তখনও মুসলিম হননি এবং ইসলামের প্রবল বিরোধীদের একজন ,তিনি জানতেন যে ,নবীজি দোয়া করলে কবুল হয়। তাই তিনি গোপনে মদিনায় যেয়ে হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর সাথে দেখা করেন এবং মক্কায় খাদ্যের অভাবে তাঁর আত্মীয়-স্বজনগণ খাদ্যের অভাবে কষ্ট করছেন একথা জানিয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে বলেন । নবীজি আবু সুফিয়ানের কথা শুনে তাঁকে কিছু না বললেও মক্কায় বৃষ্টির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। দোয়া কবুল হয় মক্কায় বৃষ্টি পানি পরে এবং মক্কার মানুষ কষ্ট থেকে রক্ষা পায়। অপর একটি ঘটনায় পাওয়া যায়, মদিনায় উদিয়মান মুসলিম শক্তিকে ধক্ষংস করার জন্য মদিনার ইহুদি এবং মক্কার কাফিরদের ষড়যন্ত্রের কারণে মুসলিমদের প্রথম যুদ্ধ যা বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত। এমন সময়ের ঘটনা এটি। মক্কার কাফিরগণ তাদের সৈন্যদল মদিনার কাছেই সমবেত করেছে, এ সময় একটি মুসলিমদের পানির কূপে পানি খেতে আসে মক্কার এক কাফির সৈন্য ,সে জোর করেই এ কূপ থেকে পানি পান করবে, এমন অবস্থায় কূপে উপস্থিত মুসলিমগণ তাকে বাধাদেয় ,এ সময় নবীজি ঘটনাটি দেখে মুসলিমদের ঐ কাফির যুবককে পানি পান করতে বাধা দিতে নিষেধ করেন এবং তাকে পানি পান করার জন্য দিতে বলেন। এমন মহানুভবতার নিদর্শন একমাত্র রাসুল সাঃ কাছ থেকেই পাওয়া যায়, মক্কা বিজয়ের দিন মিথ্যা ভয়ে লোকজন পালাচ্ছিলো। মহানুভব আদর্শ রাষ্ট্র নায়ক দেখলেন, এক বৃদ্ধা অতিকষ্টে তার মালপত্র নিয়ে চলছে। তিনি বৃদ্ধার মালপত্র নিজে বহন করে গন্তব্যে পৌঁছে দিলেন। এসময় বৃদ্ধা জানালো সে মুহাম্মদের ভয়ে মক্কা ছেড়ে পালাচ্ছে। পরে বৃদ্ধা বললো, কে বাবা তুমি এত ভাল লোক? রাসূল (সা.) বললেন, যার ভয়ে তুমি পালাচ্ছ, আমি সেই আব্দুল্লার পুত্র মুহাম্মদ। বৃদ্ধার জুজুর ভয় কেটে গেলো। সে আদর্শ রাষ্ট্র নায়কের মহানুভবতায় ইসলামে দাখিল হলো।
সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে সমাজ ব্যবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তা নরহত্যা, মদ্যপান, ব্যভিচার, জুয়াখেলা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা এবং অন্য অমানবিক ও ঘৃণ্যকর্মে পরিপূর্ণ ছিল। মাত্র দশ বছরের মধ্যে সর্ব বিষয়ে অধঃপতিত একটি জাতিকে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক দিক দিয়ে তিনি অসাধারণ শক্তিশালী করতে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, সাহস, বিভিন্ন বিষয়ে দূরদৃষ্টি, ধৈর্য, অধ্যবসায় প্রভৃতি গুণাবলি সমগ্র মানবজাতির সামনে আদর্শের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। তিনি ছিলেন সবার প্রিয় একজন অনাথ, একজন আদর্শ স্বামী, একজন স্নেহপরায়ণ পিতা, একজন সফলকাম ব্যবসায়ী, একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সংস্কারক, একজন হৃদয়গ্রাহী ধর্মপ্রচারক, একজন সহিষ্ণু হিজরতকারী, একজন সাহসী যোদ্ধা, একজন সুদক্ষ সেনানায়ক, একজন দয়ালু বিজেতা, একজন কর্মক্ষম প্রশাসক, একজন নিরপেক্ষ বিচারক, একজন আদর্শ আইন-প্রণেতা, মহান রাজনীতিবিদ এবং অসাধারণ যোগ্যতাসম্পন্ন শাসনকর্তা। তিনি আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)। আদর্শ রাষ্ট্র শাসকের সবগুলো গুণাবলী শুধু তাঁর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এবং এক অপরিহার্য বাস্ততা। তাই তিনি একজন সফল শাসক এবং শাসকদের নায়ক। তাঁর রাষ্ট্র শাসনের সমালোচনার দুঃসাহস কেয়ামত পর্যন্ত কেউ করতে পারবেনা। তিনি সফল না হয়ে পারেন না, কারণ তিনি ছিলেন আল্লাহর ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সূরা আহযাবের ২১নং আয়াতে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, “নিশ্চয়ই রাসূলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।” ইহা তাঁর সার্বিক জীবন নিয়ে আল্লাহর সাক্ষ্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন