মঙ্গলবার, অক্টোবর ০১, ২০১৩

২০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের সরকারী করনের প্রতিশ্র“তি

স্টাফ রিপোর্টার : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ সরকারী করণ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। আগামী ৫ অক্টোবর কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে এক জনসভায় ভাষন দিবেন তিনি। সরকারের শেষ সময়ে ২০ বছর আগে দেওয়া প্রতিশ্র“তি নিয়ে আবারও নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছে খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে সরকারি দলের উর্দ্ধতন নেতাদের সাথে বৈঠকসহ নানামুখী কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই। বর্তমানে ৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স সহ উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে বিজ্ঞান, বানিজ্য ও কলা বিভাগ চালু আছে এখানে।
১৯৬৮ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়ার এস ডিও ইয়াহিয়া সাহেব ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় প্রায় সাড়ে ছয় একর সরকারী জমির উপর এ কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কুষ্টিয়া শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত এ কলেজটিতে বর্তমান ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। ঐতিহাসিক পেক্ষাপটে ১৯৭১ সালে ৩ মার্চ এই কলেজ চত্বরেই তৎকালীন সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত জাতীয় পতাকা সর্ব প্রথম উত্তলিত হয়। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর হতে বেশ কয়েকবার সরকারী করনের উদ্যোগ গ্রহন করা হলেও তা কার্যকর হয়নি আজও। দেশের সমস্ত বৃহত্তর জেলা শহরে (সাবেক ১৯ জেলা) উচ্চ মাধ্যমিক ও অনার্স শ্রেনীর জন্য ৩ কিংবা ততোধিক সরকারী কলেজ থাকলেও ব্যতিক্রম রয়েছে কুষ্টিয়াবাসীর ক্ষেত্রে। এখানে কুষ্টিয়া সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও সরকারী গার্লস কলেজই ভরসা। এ কারনে কুষ্টিয়া সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতক ডিগ্রী, অনার্স ও মাষ্টার্স কোর্সের পাশাপাশি এখনো উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয় এক প্রকার বাধ্য হয়েই। বর্তমানে ১৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স, ৬টি বিষয়ে প্রিভিয়ার্স ও ১৩ টি বিষয়ে মাষ্টার্স কোর্সসহ উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ হাজার। এতে আবাসন সংকটের পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। এ সমস্ত দিক বিবেচনা করে কুষ্টিয়ার সাধারন জনগনের দাবীর প্রেক্ষিতে বিগত সময়ে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃদ্বয় ও স্থানীয় সাংসদরা এ কলেজটি সরকারী করনের বারবার প্রতিশ্র“তি দিলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া আসনের সবকয়টিতেই আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থী জয়লাভ করায় চাওয়া পাওয়ার হিসাব হচ্ছে নতুন করে।
১৯৯৩ সালে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ মাঠে এক জনসভায় আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুষ্টিয়াবাসীর দাবীর সাথে একাত্মতা ঘোষনা করেন এবং ক্ষমতায় গেলে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ সরকারী করনের ওয়াদা করেন। এছাড়াও তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে তৎকালীন সময় মহান জাতীয় সংসদে এই কলেজটি সরকারীকরণের জোড়ালো দাবী তোলেন। কিন্তু ১৭ বছরেও এ প্রতিশ্র“তি আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি কুষ্টিয়া সদর আসনের সাংসদ কে এইচ রশিদুজ্জামান দুদু মহান জাতীয় সংসদে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজকে সরকারী করনে দাবী তুললে বিষয়টি সংসদীয় কার্যপ্রনালিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে মর্মে একটি চিঠি কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজে আসলে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে কুষ্টিয়াবাসী। কিন্তু আকস্মিকভাবে কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য অসুস্থ্য হয়ে পড়লে বিষয়টি বেশী দূর যেতে পারেনি। একইভাবে ১৯৯২ সালে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে বিএনপির এক জনসভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের নিকট কলেজটি সরকারী করনের দাবী তুললে তিনি পর্যায়ক্রমে অনুমোদনের আশ্বাস দেন। বিগত জোট সরকারের আমলে সদর আসনের সাংসদ আলহাজ্ব অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দীন মহান জাতীয় সংসদে এ কলেজটি সরকারী করনের দাবী উত্থাপন করেছিলেন। সে সময় নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও এক সময় হাওয়ায় মিলিয়ে যায় আশার বানী।
বর্তমানে কুষ্টিয়া শহরের কেন্দ্রস্থল এন এস রোড সংলগ্ন স্থানে ৬.৬৮৪ একর জমির উপর ৯৫ কক্ষ বিশিষ্ট বিশাল অবকাঠামো নিয়ে দাড়িয়ে আছে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ। সরকারী করনের যথেষ্ট সহায়ক পরিবেশ থাকলেও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সরকারী নীতি নির্ধারনীর অভাবে এ সুযোগ থেকে প্রতিবারই বঞ্চিত হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন