মঙ্গলবার, অক্টোবর ০১, ২০১৩

যৌন কেলেঙ্কারীর পর এবার অর্থ কেলেঙ্কারীর দায়ে ইবি ট্রেজারারের বিরুদ্ধে পদত্যাগের গুঞ্জন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড.আফজাল হোসেন ঢাবিতে যৌন কেলেঙ্কারীর পর এবার ইবিতে এসে অর্থ কেলেঙ্কারীসহ নানা অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে পরেছে। ফলে ক্যাম্পাসে চলছে তার বিরুদ্ধে পদত্যাগের গুঞ্জন।
জানা যায়, গত বছরের ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটে নিয়োগে দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অর্থ কেলেঙ্কারী, স্বজন প্রীতি, দলীয়করন সহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত তৎকালীন দুর্নীতিবাজ কর্তাব্যক্তিদের বিদায় হলেও আবারও একই কায়দায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করছে আর এক নতুন বরপত্র ড.আফজাল। তিনি ট্রেজারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুবাদে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে পরছেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম বিভাগের সভাপতি থাকাকালীন যৌন কেলেঙ্কারীসহ বিভিন্ন অভিযোগে পদ হতে অপসারিত হয়েছিলেন। নিজে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়েই তিনি ক্ষ্যান্ত হননি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তুলছেন তার দুর্নীতিবাজ বাহিনী। তার মদদ পেয়ে প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা অব্যাহত দূর্নীতির কারণে ওএসডি হয়েছেন। এসব কারনে তার পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পরেছে পুরো ক্যাম্পাস।
সুত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম বিভাগের সাবেক এ শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়টিতে থাকাকালীন বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। দূর্নীতি, বিভাগে সময় না দেয়া, বিভাগীয় শিক্ষকদের সাথে বিরুপ আচরন, শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাক মেইল, পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের আশ্বাস দিয়ে ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে তার নামে। এসময় দৈনিক পত্রিকা (মানব জমিন, সমকাল, প্রথম আলো, যুগান্তর, আমার দেশ, ইত্তেফাক, নয়াদিগন্ত, ডেইলি স্টার, নিউ এজ, নিউ নেশন, ইনডিপেনন্ডেন্ট) ০২-১১-২০০৯ তারিখে শিক্ষক আফজাল হোসেনের বিভিন্ন অনৈতিক তৎপরতা ফলাও করে প্রচার করে। বিভাগের এক ছাত্রী সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষকরুপী পশু আফজাল হোসেনের দুশ্চরিত্র প্রকাশ করলে তার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীরা ফুসে ওঠে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তিনি ২০০৯ সালে পহেলা নভেম্বর বিভাগের সভাপতির পদ হতে অপসারিত হন। এছাড়াও শিক্ষক আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে সেসময় নানা অভিযোগে শিক্ষার্থীরা কয়েকবার আন্দোলন করেছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত প্রশাসকদের অপসারনের পর ড. আফজাল হোসেনকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদটি দখল করে এর সুবাদে দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সহকর্মীদের সাথে বিরুপ আচরনসহ নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। সপ্তাহের অধিকাংশ দিন ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করায় প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে তার প্রত্যক্ষ মদদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তারা দূর্নীতিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আয়াত আলী ও পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের গোলাম হোসেনকে দূর্নীতিতে জড়ানোর অভিযোগে ওএসডি করা হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে- আপাদমস্তক দূর্নীতিতে নিমজ্জিত ট্রেজারার আফজাল হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদে তারা এসব অনৈতিক কাজে জড়ায়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ের অধীনে দেশের সাড়ে ১৪শত ফাজিল কামিল মাদ্রাসা পরিচালিত হওয়ায় মাদ্রাসা শিক্ষকদের সাথে অবৈধ আর্থিক লেনদেনে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে এ ট্রেজারারের। সূত্রমতে- সম্প্রতি ফাজিল চুড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার দুই দিন আগে অবৈধভাবে দুটি পরীক্ষা কেন্দ্রের (পিরোজপুর ৫ ও পিরোজপুর ৬) অনুমোদন দিয়েছেন । এর বিনিময়ে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে এসব অনৈতিক অভিযোগ ছাড়াও প্রশাসনের রয়েছে নানা অভিযোগ। সম্প্রতি তিনি ট্রেজারার হিসেবে যোগদান করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেবার আশ্বাসে প্রার্থীদের কাছে মোটা অংকের টাকা সংগ্রহ করছেন বলে ক্যাম্পাসের শিক্ষক কর্মকর্তাসহ সবার মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর থেকেও জানা যায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের কথা। খোঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকদের অভিযোগ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত এ কর্তাব্যক্তির কারণে প্রশাসনিক কাজকর্ম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার নিজ দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান- তিনি সপ্তাহের অধিকাংশ কার্যদিবসে অনুপস্থিত থাকেন। এজন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। এসব অভিযোগের দায়ে বর্তমানে তিনি নিজের ফোন বন্ধ করে রেখেছেন এমন কি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই বলে ও জানা গেছে।
পদত্যাগ ও অর্থ কেলেঙ্কারী এসব বিষয়ে ট্রেজারার ড. আফজালের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এসব বিষয়ে কোন কথা বলবেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। এবং সাথে সাথে নানা অযুহাত ও ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রেখে দেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন