শুক্রবার, মে ১৬, ২০১৪

কুষ্টিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনা

শ্রমিকদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হলেও বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা ফিরে পাবে

আব্দুম মুনিব ॥ বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা বলেছেন, রানা প্লাজা ট্রাজেডির মতো হৃদয় বিদারক ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে দিকে বাংলাদেশ সরকারকে নজর দিতে হবে। সেই সাথে পোশাক কারখানার কাঠামোগত উন্নয়ন ও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশকে আরো কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীর বড় বড় পোশাক ক্রেতারা বাংলাদেশের যেসব কারখানা থেকে পোশাক কিনে থাকেন সেগুলো পরিদর্শনের জন্য এই প্রথমবারের মতো ১০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের কাজের পরিবেশ উন্নয়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাও (আইএলও) প্রথমবারের মতো ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। তারা কমপক্ষে ৮০০ কারাখানার পরিবেশ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে চায়। তিনি এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ নয়। দরিদ্র কিছু লোক এখানে থাকতে পারে। সৃষ্টিকর্তা বাংলাদেশকে সবকিছু দিয়েছেন। বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বে সাথে তাল মেলাতে শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসে জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে তিনি এ কথা বলেন।
ড্যান মজীনা বলেন, আমি ভেড়ামারা বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখেছি। কিভাবে ভারত থেকে আদমানী করা বিদ্যুৎ ঈশ্বরদী এবং খুলনাতে যায়। আগামীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ, ভুটান এমনকি চীন থেকেও এক শতাংশ বিদ্যুৎ আমদানী করা যাবে সম্ভব বলে তিনি জানান। আর এই বিদ্যুৎ আমদানী হলে বাংলাদেশ এশিয়ার ব্যাঘ্রশক্তিতে পরিণত হবে। এ দেশকে এশিয়ার বাঘে পরিণত করতে হলে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ দেশে গ্যাস আছে, কয়লা আছে। এখানকার কৃষি ও খনিজ সম্পদ নিয়ে কাজ করতে হবে।’ ড্যান ডব্লিউ মজীনা বলেন, ‘আমি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলতে চাই। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। ওই বিনিয়োগ
বাংলাদেশেও আসছে। তবে এ ক্ষেত্রে ভাবতে হবে, লাভ যেখানে বেশি হবে বিনিয়োগও সেখানে যাবে। বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য নিজেকে অন্য দেশের মতো করতে হবে।মজীনা আরও বলেন, জিএসপি ইস্যু কোনো ইস্যু নয়। ইস্যু হচ্ছে, বস্ত্র খাতে যেন রানা প্লাজা বা তাজরীনের মতো দুর্ঘটনা না ঘটে। কারখানা যেন আন্তর্জাতিকমানের হয়। শ্রমিকেরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার পান।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘২০১১ সাল পর্যন্ত বস্ত্র কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের সংগঠন ছিল মাত্র একটি। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত তা বেড়ে শ্রমিক ইউনিয়ন হয়েছে ১৫০টি। জিএসপি-সুবিধা প্রত্যাহারের ফলে এটা নিশ্চিত হয়েছে। বস্ত্র খাতে বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমি দেখতে চাই, ‘‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশ’’ এক নম্বর ব্র্যান্ড হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। দেশের বর্তমান সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে এ রাষ্টদুত বলেন, যুক্তরাষ্ট ৬ জানুয়ারী ও ৩০ এপ্রিল যা বলেছে সেই অবস্থানেই রয়েছে।এরআগে সকালে তিনি চৌড়হাস ভার্মি কম্পোষ্ট পরিদর্শন করেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শিলাউদহ কুঠিবাড়ী এবং বাউল সম্রাপ ফকির লালন শাহ এর মাজার পরিদর্শন করেন ও বাউল শিল্পীদের লালন সঙ্গীত শোনেন।  এ সময় জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন, পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহমেদ,সিনিয়র তথ্য অফিসার মোঃ তৌহিদুজ্জামানসহ সরকারী কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন। রাষ্ট্রদূতের সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগের প্রধান মেরিনা ইয়াসমিন, কেলিনা ম্যাকানী, কালচারাল অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা বিলাল ফারুকী, কর্মকর্তা জেসন উইলিয়ামস, আবদুর রহমান ও লুবাইন মাসুম উপস্থিত ছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন