বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৭, ২০১৪

পানি পথে অবৈধভাবে মালেশিয়া যাওয়া

গাংনীর তেরাইল গ্রামের মামুনের লাশ ফেলা হয়েছে সাগরে। দালালদের হাতে জিম্মি ৩ জনের উপর চলছে নির্যাতন।



আক্তারুজ্জামান,মেহেরপুর : মা আমাকে বাঁচাও আমি বাঁচতে চাই। বাবা জমি বিক্রি করে হলেও দালালদের হাতে টাকা তুলে দাও। না হলে মামুনের মত আমাকেও মেরে ফেলে দেবে সাগরে। আমি ফিরে আসতে পারবনা। এভাবেই বাঁচার আকুতি করছে থাইল্যান্ডের কোন অজানা স্থানে নির্যাতিত কামিরুল ইসলামের ছেলে বেল্টু। এছাড়া নির্যাতিত আজিরুদ্দীন হাফিজুল ইসলাম ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে একই ভাবে আকুতি জানাচ্ছেন। গত ১০ অক্টোবর গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামের কালাম ড্রাইভারের ছেলে মামনুর রশিদ মামুন (২৬), হাবিবুর রহমানের ছেলে হাফিজুল ইসলাম, কামিরুল ইসলামের ছেলে বেল্টু ও আজিরুদ্দীন নামের ৪ জন পানি পথে অবৈধভাবে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে মালেশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। আজিরুদ্দীনের মেয়ে আদুরী খাতুন জানান, সংসারে একটু সচ্চলতা ও ঋণের জাল থেকে বেরিয়ে আসতে পরিবারের লোকজনের অন্তরালেই আমার বাবা পাড়ি জমাতে চেয়েছিল মালেশিয়াতে। কিন্তু এখন আমাদের পরিবারের সচ্চলতা তো দুরের কথা বাবার জীবন বাঁচাতে পারবো কিনা এখন সন্দেহ তৈরী হয়েছে। এদিকে মামনের মৃত্যুর খবর অপর সাথীদের কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়ার পর নিজ গ্রামে গ্রামবাসিরা গত রবিবার বিকালে মামুনের গায়েবানা জানাজা করেছে । মামুনের পিতা কালাম ড্রাইভার জানান, আমার ছেলে বিদ্যুতের ওয়্যারিং মিস্ত্রি হিসেবে এলাকায় কাজ করতো। হঠাৎ তেরাইল গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন ও হেমায়েতপুর গ্রামের দালালদের মাধ্যমে পানি পথে মালেশিয়াতে যায়।  মামুনের বড় বোন নাছরিন নাজমা খাতুন জানান, উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের জাহিদ হোসেন ও তেরাইল গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন তার ভাই মামুন কে নানা প্রলোভন দেখিয়ে মালোয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ট্রলারে তুলেছে। মুত্যুর আগে মোবাইল ফোনে পরিবারের সদস্যদের বলেছে আমি মালোয়েশিয়ায় পৌছানোর পর তেরাইল গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে জাহাঙ্গীরহোসেন হেমায়েতপুর গ্রামের জাহিদ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিবা। এর পর থেকে মামুনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ। মামুনের সাথে যাওয়া বেল্টু,আজিরুদ্দীন ও হাফিজুল ইসলাম তাদের মোবাইল ফোনে আমাদের জানায় মালেশিয়াতে পৌছানোর পর আমার সাথে ফোনে কথা বলার পর দালালদের হাতে টাকা দেওয়ার কথা বলার অপরাধে মামুনকে সাগরের মাঝে পিটিয়ে হত্যা করে তার লাশ সাগরে ফেলে দেয়া হয়েছে।  একই গ্রামের বেল্টু,আজিরুদ্দীন ও হাফিজুল ইসলাম কে জিম্মি করে থাইল্যান্ডের কোন এক নির্জন স্থানে জিম্মি করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ২ লাখ ৩০ হাজার করে মুক্তিপন দাবি করেছে দালাল চক্র।  ইতো মধ্যে ছেলেকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বেল্টুর অসহায় পিতা কামিরুল ইসলাম বিকাশের মাধ্যমে ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে দালাল চক্রকে।
আজিরুদ্দীনের মেয়ে আদুরী খাতুন জানান, তার পিতা কে দালালদের হাত থেকে মুক্ত করতে ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। দাবিকৃত টাকা না দিলে নির্যাতন করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে দালালরা। বেল্টুর পিতা কামিরুল ইসলাম আরো জানান, আমার ছেলে যখন আমাকে ফোন করছিল তখনও তার উপর নির্যাতন চলছিল। দালালদের হাত থেকে ছেলে বেল্টুকে বাঁচাতে গত রবিবার ২লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে দালালদের হাতে দিয়েছেন তিনি।
এদিকে গ্রামে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গ্রামে গেছেন এমন খবর শোনার পর ক্ষিপ্ত হয়েছেন বহু অপকর্মের হোতা আদম ব্যাপাারী দালাল জাহাঙ্গীর হোসেন।  মোবাইল ফোনে ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমার বিরুদ্ধে লিখলে একটু চিনতা ভাবনা করে লিখবেন। আমার নিজের ঢাকাতে ট্রেনিং সেন্টার আছে। সেখান থেকে বিদেশে লোক পাঠানো হয়ে থাকে। পানি পথে কোন লোক নিয়ে যায়নি। নির্যাতিতরা আপনার কাছে টাকা দেওয়ার কথা বলছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন আমি তেরাইল গ্রামের ছেলে এজন্য তারা আমার কাছে টাকা দেওয়ার কথা বলছে।
গাংনী থানার ওসি তদন্ত মোক্তার হোসেন জানান, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনী। অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন