বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৭, ২০১৪

মুল অপহরনকারী হিল্লোল ও মানিক এখনো ধরা পড়েনি

বালিয়াকান্দি থানায় নারায়নগঞ্জের ঝুট ব্যবসায়ী অপহরনের ঘটনায় ১৮ জনের নামে মামলা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : ঢাকার নারায়নগঞ্জের ৩জন ঝুট ব্যবসায়ীকে সাড়ে ৫লক্ষ টাকা মুক্তিপনের দাবীতে অপহরণের ঘটনায় গত ২১ নভেম্বর ১৮জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪/৫জনকে আসামী করে বালিয়াকান্দি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার পীরপুর সরকারবাড়ী গ্রামের আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম মাষ্টারের ছেলে সোহাগ মিয়া।  মামলার এজাহারে প্রকাশ, নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর থানার র‌্যালী আবাসিক এলাকার মৃত ইয়াছিন আলীর ছেলে মোঃ আবিদ হোসেন ও নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার পীরপুর সরকারবাড়ী গ্রামের আলহাজ্ব নুরু ইসলামের ছেলে সোহাগ মিয়া ও রাজশাহী এলাকার আবুল কাশেম দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়নগঞ্জে ঝুট ও কাপড়ের ব্যবসা করে আসছিল। ব্যবসায়িক সুবাদে বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের পুষআমলা গ্রামের মানিক বিশ্বাসের সাথে পরিচয় হওয়ার পর ৩২ হাজার টাকার কাপড় বাঁকীতে বিক্রি করে। তার নিকট পাওনা টাকা চাইলে তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে ঘোরাতে থাকে। একপর্যায়ে সে তাদেরকে বাড়ীতে এসে টাকাগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়। তারই প্রস্তাবে রাজী হয়ে গত ১৬ নভেম্বর সকাল ৭টার দিকে নারায়নগঞ্জ থেকে বাসযোগে রওনা হয়ে সাড়ে ৩টার দিকে রাজবাড়ী বাসষ্ট্যান্ডে নামে। সেখান থেকে মানিক ও হিল্লোল তাদেরকে অটোবাইক যোগে রাজবাড়ী ফার্মে রুদ্ধ মিষ্টান্ত ভান্ডারে নিয়া ৩জনকে ভাত খাইয়ে আরেকটি অটোবাইক যোগে বালিয়াকান্দি থানার একটি অজ্ঞাতবাড়ীতে নিয়ে আসে তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা। ওইবাড়ীতে একটি অপরিচিত হিন্দু মহিলা চানাচুর, বিস্কুট ও চা খেতে দেয়। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার সময় ওইবাড়ীতে পিস্তল , রাইফেলসহ বিভিন্ন অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ২২-২৩জন লোক এসে মানিকের সামনে ৩জনের নিকট ৫লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করে। দাবীকৃত টাকা না দিলে মেরে ফেলাসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এরপর বাড়ীর অদুরে একটি ফাঁকা মাঠে নিয়ে মারপিট করে। সেখানে ব্যবসায়ীদেরকে রাত ৪টা পর্যন্ত আটক করে রেখে অজ্ঞাত একটি বাড়ীতে নিয়ে আটক করে রাখে। তখন তারা একেকজন, একেকজনকে মানিক, মাধব, হিল্লোল, অমল, সুশিল, নির্মল, প্রদীপ, ঝড়–, শ্যাম, সাধন, সৈকত, সুমন, অপু, প্রকাশ, জীবন বলে ডাকাডাকি করে। তাহারা সাধারনত দিনের বেলায় আটককৃতদেরকে উক্ত অজ্ঞাতস্থানে অজ্ঞাতবাড়ীতে আটক করে রাখে। তারা বিভিন্ন অজ্ঞাত মাঠে নিয়া তাদের দাবীকৃত টাকা চেয়ে মারপিটসহ মৃত্যুর ভয় দেখায়। গত ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় অপহৃত আবুল কাশেম প্রসাব করার কথা বলে সুকৌশলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওইদিন বিকালে সোহাগের মামাতো ভাই লিটন বিকাশ নং- ০১৭৪৮-৯৩৮৩৩৬ থেকে বিকাশ নং- ০১৮৬৪-৫১৮৭০৫ তে ১ হাজার টাকা পাঠাইলে উক্ত টাকা মানিক উঠিয়ে নেয়। সোহাগের স্ত্রী নাজমুন্নাহারের নিকট থেকে ২০ নভেম্বর রাত্রে নরসিংদী থেকে বিকাশ নং-০১৭১৩-৯৩৯৫১৪ হতে বিকাশ নং-০১৯৩৩-৬০০৯১১ এ ১০ হাজার টাকা হিল্লোল উঠিয়ে নেয়। ২০ নভেম্বর আবিদ হোসেন তাদেরকে বলে নারায়নগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের ১৫ হাজার টাকার একটি চেক তার নিকট আছে। চলেন উক্ত টাকা উঠিয়ে দেই। আবিদকে সঙ্গে নিয়ে অপহরনকারীরা প্রথমে বালিয়াকান্দি সোনালী ব্যাংকে এলে কর্তৃপক্ষ অস্বীকৃতি জানায়। পরে রাজবাড়ী সোনালী ব্যাংকে নিয়ে গেলে আবিদ হোসেন ব্যাংকে পুলিশ দেখে আতœচিৎকার দিলে অপহরনকারীরা পালিয়ে যায়। পরে আবিদ রাজবাড়ী থানার এস,আই মামুন কে তার সঙ্গীয় ফোর্সসহ পেয়ে অপহরনের বিষয়টি খুলে বলে। পরবর্তীতে আবিদের সাথে নিয়ে বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ ২১ নভেম্বর সকাল ১১টার সময় জঙ্গল ইউনিয়ন এলাকায় অবস্থান করে। অপহরনকারীরা সোহাগকে একটি পাকা রাস্তার উপর নিয়ে আসলে পুর্ব থেকে থানা পুলিশ ওৎপেতে থেকে জঙ্গল ইউনিয়নের গোয়ালডাঙ্গা স্লুইচগেট এলাকা থেকে থানা পুলিশ সোহাগকে উদ্ধার করে ও তরুন, বিজন, জীবন, প্রকাশকে গ্রেফতার করে। অপহরনকারীরা সোহাগের নিকট থেকে ২হাজার টাকা মুল্যের ওয়ালটন মোবাইল সেট, নগদ ২৫শত টাকা, আবিদের নিকট হতে ২৬শত টাকা মুল্যের ম্যাক্সিমার্স মোবাইল সেট, নগদ ১৫শত টাকা ছিনিয়ে নেয়।
বালিয়াকান্দি থানার মামলা নং- ৪, তারিখঃ ২১-১১-১৪ ইং। ধারা, ৩৪৩/৩৮৬/৩৮৭/৩০২/৩৭৯/৫০৬ (২)/৩৪ দ.বি। মামলাটি তদন্ত করছেন, থানার এস,আই জাহিদুল ইসলাম।
এ মামলার গ্রেফতারকৃত আসামী হলো, মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার দেবীনগর গ্রামের বিমল বিশ্বাসের ছেলে প্রকাশ বিশ্বাস (২২), নাকোল গ্রামের জীতেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ছেলে বিজন বিশ্বাস (৩০), একই গ্রামের তারাপদ ঘোষের ছেলে তরুন ঘোষ (৪২) ও জঙ্গল ইউনিয়নের জঙ্গল গ্রামের নৃপেন মন্ডলের ছেলে জীবন মন্ডল (২২) , জঙ্গল ইউনিয়নের বন্যতৈল গ্রামের নারায়ন সরকারের ছেলে শ্যামা প্রসাদ সরকার শ্যাম (৩৫) কে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশের কাছে গ্রেফতারের পর আসামী প্রকাশ জানায়, আটকরাখা বাড়ীটির মালিক পলাতক আসামী হিল্লোল বসুর। হিল্লোল বসু জঙ্গল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ক্ষিরোদ বরণ বসুর ভাতিজা।
তবে থানা পুলিশ প্রধান আসামী মানিক ও হিল্লোলকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন