শুক্রবার, জানুয়ারী ১৮, ২০১৩

দৌলতপুরে কৃষি ঋণের ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জালিয়াত দালাল চক্র

দৌলতপুর প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর কৃষি ব্যাংক (তারাগুনিয়া) শাখা থেকে কৃষি ঋণের নামে জাল ও ভুয়া দলিলের মাধ্যমে ঋণ দেখিয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ঐ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী ও দালাল জালিয়াত চক্র। এমনকি পাগলের নামেও ঋণ উত্তোলন করেছে চক্রটি। এ কাজে ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী সরাসরি জড়িত থাকার ফলে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেনা। যার ফলে প্রকৃত কৃষক ঋণ প্রপ্তিতে পোহাচ্ছে ভোগান্তি। অনুসন্ধানে জানাগেছে ২০১২ সালের ৩১ ডিসের পর্যন্ত কৃষি ব্যাংক দৌলতপুর শাখায় প্রায় ৪২ কোটি ৪৬ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা বিভিন্ন ঋণ অনাদায়ী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ২৫ কোটি ৬৮ লক্ষ ২ হাজার টাকার কৃষিঋণ। কৃষি ব্যাংকের এই শাখায় জমি জমা বা স্থাপনার ভুয়া দলিল পত্র মর্টগেজ দেখিয়ে জালিয়াত চক্র প্রায় প্রতিদিনই ব্যাংক ঋণ নিচ্ছে। যে কারণে অনাদায়ী ঋণের পরিমান আরো বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন। যে সব জায়গা বা স্থাপনার দলিল মর্টগেজ নেওয়া হয়েছে সে সব স্থানে সংশিষ্ট ব্যাংকের নিকট
দায়বদ্ধতার সাইনবোর্ড না থাকায় একই জমি ও স্থাপনা দেখিয়ে বারবার ঋণ নেবার সুযোগ সৃষ্টি করে রাখা হচ্ছে। এর ফলেই ঘটছে বিপত্তি। ফলে, একই দলিল ও খারিজ পড়চা খাজনার দাখিলা দেখিয়ে একাধিক নামে ঋণ নিচ্ছে সুযোগ সন্ধানী এক শ্রেনীর জালিয়াত চক্র। প্রাপ্ত তথ্যে জানাযায়, তারাগুনিয়া কৃষি ব্যাংক'র ফিল্ড সুপার ভাইজার আমিরুল ইসলাম, রুহুল আমিন ও হাবিবুর রহমান সহ সংশিষ্ট ইউনিয়ন ফিল্ড সুপার ভাইজাররা ঋণ গ্রহিতাদের কাছ থেকে প্রতি এক লক্ষ টাকার ঋনের বিপরীতে ১০-১৫ হাজার টাকা উৎকোচের বিনিময়ে ভুয়া দলিল ও খারিজের কাগজপত্র মর্টগেজ দেখিয়ে ঋণ পাশ করিয়ে দিচ্ছে। একাজে ইউনিয়ন ভুমি অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা অর্থের বিনিময়ে ভুয়া খারিজ, দাখিলা, পড়চা সরবরাহ করে ঋণ গ্রহিতা জালিয়াত চক্র ও একাজে নিয়োজিত দালালদের সহায়তা করছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। এ কাজে জড়িত থাকার দায়ে হোগলবাড়িয়া ইউনিয়ন ভুমি উপ-সহকারী মজিবুল হক পিন্টু কে বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেছে কর্তৃপক্ষ। তার পরও জালিয়াত চক্রের কার্যক্রম থেমে নেই। তারা ভুয়া দলিল পড়চা ও সংশিষ্ট ইউ,পি চোরম্যানদের ভুয়া ওয়ারিশ সনদ পত্র ও ভুয়া ভোটার আইডি কার্ড জমা দিয়ে ব্যাংক সুপার ভাইজারদের সহযোগিতায় বিভিন্ন লোকের নামে ভুয়া ঋণ উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে ভুয়া ঋণের ফাঁদে পড়ছে এলাকার সাধারন নিরীহ লোকজন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এই ব্যাংকের সুপার ভাইজার রুহুল আমিন ঘটনার কথা স্বীকার করে জানান, অনেক তদবিরের কারণে এ রকম কাজ করতে হয়। একাধিক সুত্র জানায়, সবচেয়ে বেশী ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি বদলী হওয়া ব্যাংক ব্যবস্থাপক রেজাউল হকের মাধ্যমে। তার সময়ে ব্যাংকের দালাল নামে পরিচিত ঘোড়ামারা গ্রামের সামছুল এবং ব্যাংকের কয়েকজন সুপারভাইজার সহ তারাগুনিয়া ও আশে পাশের এলাকার ৮/১০ জন দালাল সিন্ডিকেট গঠন করে ঐ ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ভুয়া ঋণের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে। একাধিক ঘনিষ্ঠ সুত্র জানায়, যদি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দেয় অথবা কোন অডিট আসে তখন কৃষি ব্যাংক'র ঋণ জালিয়াতকারী ফিল্ড সুপার ভাইজাররা ও কিছু দালাল নিজেদের অর্থে ঋণের সুদের কিছু অংশ পরিশোধ করে ঐ সকল ঋণ আবার হালনাগাদ করে রাখে। কায়ামারী গ্রামের কৃষক শামীম রেজা জানান, কৃষি ব্যাংকে ঋণ নিতে গেলে দালালদের দাপটে সেখানে ঋণ নেয়া প্রায় অসম্ভব। যদিও কখনো ঋণ পাওয়া যায় তবে, তার অর্ধেক টাকা দালাল ও সুপার ভাইজারদের দিয়ে আসতে হয়। টাকা না দিলে এই কাগজ, ঐ কাগজ নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে ফসলের মৌসুম শেষ হয়ে যায়। অভিযোগে জানাযায়, হোগলবাড়িয়া ইউনিযনের কায়ামারী গ্রামের মৃত আব্দুল হান্নানের ছেলে আবুল কালাম দীর্ঘ ৪/৫ বছর ধরে সৌদি আরবে অবস্থান করছে। অথচ তার নাম ও দলিলপত্রে ভুয়া ছবি ব্যবহার করে ব্যাংক সুপার ভাইজার ও জালিয়াত চক্র লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে। কোলদিয়াড় গ্রামের ইটভাটা মালিক আবুল কালাম আজাদ একই মর্টগেজ দেখিয়ে তিনটি গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে দালাল ও ব্যাংক কর্মচারীদের সহায়তায় ১৫ লক্ষ টাকা ঋণ উত্তোলন করেছেন। এছাড়াও জয়রামপুর গ্রামের মৃত মহম্মদ আলী মালিথার ছেলে মইরুদ্দিন, কায়ামারী গ্রামের লোকমান মন্ডলের ছেলে আ: মান্নান, ইসরাইল হোসেনের ছেলে সামছুজ্জামান সেন্টু, নাজিম উদ্দিন মালিথার ছেলে খোকন আহমেদ, আবু জাফর মালিথার ছেলে টিপু এবং মিঠু, কামরুজ্জামানের ছেলে রোকন উজ্জামান, আস্তুল মালিথার ছেলে নবীর উদ্দিন সহ একাধিক ব্যাক্তির নামে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকার ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে ব্যাংকের কতিপয় সুপার ভাইজার, দালাল ও জালিয়াত চক্র। কায়ামারী গ্রামের হামিদ মন্ডলের ছেলে মানসিক রোগী লুৎফর পাগলের নামে ৩০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ তার পরিবারের লোকজন কিছুই জানেন না। সোনাইকুন্ডি গ্রামের আইয়ুব আলীর নামে দুটি ঋণ পাশ করা হয়েছে প্রথমে ২০ হাজার এবং পরে ৮০ হাজার টাকা। ভুক্তভোগীরা জানান, এই ব্যাংকটিতে একই নাম ও কাগজ ব্যবহার করে একাধিক ঋণ উত্তেলনের ঘটনা অহরহ ঘটলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কৃষি ব্যাংক দৌলতপুর শাখার (তারাগুনিয়া) ব্যবস্থাপক খাদেমূল ইসলাম জানান, তিনি শুনেছেন এই শাখার কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী দালাল শ্রেণীর সহায়তায় ঋণ সংক্রান্ত অনিয়ম করেছেন। এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি কৌশলী জবাবে বলেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন