শুক্রবার, জানুয়ারী ১৮, ২০১৩

ইবিতে পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ছাত্রদলের উপর ছাত্রলীগের গুলি

শিক্ষক ডরমেটরিতে হামলা-ভাংচুর, তল্লাশী, ছাত্রদল সভাপতিসহ আটক ৮


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত ছাত্রদলের মিছিলে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। হামলায় ছাত্রদল প্রতিরোধ গড়ে তুললে ছাত্রলীগের সাথে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ঘন্টাব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে ইবি ছাত্রদলের সভাপতি, সাধারণ
সম্পাদকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৬০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত ইবি ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক সবুরে নিশান সৌরভকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগ সভাপতি পুলিশের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ছাত্রদল কর্মীদের উপর গুলি চালিয়েছে। এসময় অন্তত: ১২ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এম্বুলেন্স ও ১০টি গাড়ি ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে। এদিকে সংঘর্ষের পর ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় শিক্ষকদের কোয়াটারে আশ্রয় নিলে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা শিক্ষকদের কোয়াটারে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। পরে সেখান থেকে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ছাত্রদলের সভাপতি ওমর ফারুকসহ ৮ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন ভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি, জিয়া পরিষদ, গ্রীণ ফোরম, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠন। সূত্র মতে, গত ১২ জানুয়ারি শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রদল। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে থেকে শুরু করে প্রশাসন ভবনের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশ শেষে বেলা ১১ টার দিকে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা মেইন গেইট দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় পিছন দিক থেকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাদেরকে ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা মেইন গেইট দিয়ে পালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় গেইটে অবস্থান নেয় এবং ছাত্রলীগ মেইন গেইটে অবস্থান নেয়। এসময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা কুষ্টিয়া-খূলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এ্যাম্বুলেন্সসহ কয়েকটি গাড়ী ভাংচুর করে। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা পূনরায় সংগঠিত হয়ে তৃতীয় গেইট দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে মিছিল ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মিছিল বের করে। মিছিলটি প্রশাসন ভবনের কাছে এলে আগ্নে অস্ত্র, চাপাতি, রামদা, লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা আবারো ধাওয়া দেয়ার চেষ্টা করে। ছাত্রদল কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে প্রতিরোধ গড়ে তুললে উভয় দলের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষের সময় পুলিশ ছাত্রদলের দিকে কেন গুলি করছে না এমন অভিযোগে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা কয়েক পুলিশ সদস্যের উপর চড়াও হয়। উপর্যুপুরি কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ৪ পুলিশ সদস্যকে আহত করে। এসময় ইবি ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এক পুলিশ সদস্যের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডার সজিবের হাতে তুলে দেয়। ইবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব সেই অস্ত্র দিয়ে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের উপর চার রাউন্ড গুলি চালায়। সংঘর্ষের সময় অন্তত: ১২ রাউন্ড গুলি ও দুটি ককটেল বিস্ফোরনের শব্দ শুনা যায়। আধা ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ ক্যাডারদের যৌথ হামলার মুখে ছাত্রদল কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিছু ছাত্রদল কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় গেট দিয়ে পালিয়ে গেলেও ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় মমতাজ ভবনে আশ্রয় নেয়। সংঘর্ষের সময় প্রাশাসন ভবনের পাশে রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি বাস নির্বিচারে ভাংচুরের শিকার হয়। ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায়র মমতাজ ভবনে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে ইবি ছাত্রদলের সভাপতি ওমর ফারুক, সাধারন সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, সহ সভাপতি মুহাইমেনুল ইসলাম সোহাগ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের, আনিছুল ইসলাম, ফারুক হোসেন, সাব্বির, রিপন, রঞ্জু, সৌরভ, ইলিয়াছ, সাহেদ, রাসেল, রাকিব, বোরহান, জাহাঙ্গীর, সোহান, শাহিন, তুহিন, আরিফ, জিল্লু, মেহেদি, উজ্জল, লিটনসহ অন্তুত ৪৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। আহতদেরকে নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুরুতর আহত ইবি ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক সবুরে নিশান সৌরভকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। গুরুতর আহতদেরকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষে ছাত্রলীগের সহ সভাপতি তৌফিকুর রহমান হিটলার, টিটু, কাশেম, লেলিন, বঙ্গবন্ধু হল শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সবুজ, ছাত্রলীগের বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পিকুল, হালিমসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। পরে বিকাল ৩ টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে স্পেশাল পুলিশ ফোর্স এসে মমতাজ ভবনে আশ্রয় নেয়া ছাত্রদলের ৮ জন নেতা-কর্মীকে বের করে আটক করে। এসময় পুলিশ তাদেরকে পিটিয়ে আহত করেছেন বলে প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান। আটককৃত ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা হলেন ইবি ছাত্রদল সভাপতি ওমর ফারুক, আমীরুল, মনির, রিপন, মাহতাব, আনিছ, আরিফ। পুলিশ তল্লাসির নামে শিক্ষকদের বিভিন্ন কক্ষে ভাংচুর চালিয়েছে বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আক্তারুল ইসলাম জিল্লু, ছাত্রউপদেষ্টা টি এম লোকমান হাকিম, শাপলা ফোরামের সভাপতি মাহবুবুল আরফিন পুলিশের সাথে থেকে শিক্ষকদের বিভিন্ন কক্ষে ভাংচুর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় রুম ভেঙ্গে তল্লাশি চালানো হলো। তল্লাশি চলাকালে শিক্ষকদের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা আতংকিত হয়ে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. আলীনুর রহমান বলেন-‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার বাসার তালা ভেঙ্গে নির্বিচারে ভাংচুর করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তা নিরব থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। একজন শিক্ষক হিসেবে এর চেয়ে লজ্জার আর কোন ঘটনা হতে পারেনা।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কনস্টেবল কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, “পেটের দায়ে মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার কাজ করি। অথচ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আজ আমাদেরকেই বেধরক পিটিয়ে আহত করল এবং আমাদেরই অস্ত্র কেড়ে নিয়ে গুলি করল। ফলে আমাদেরই এখন নিরাপত্তা নেই এবং চাকরি হারানোর ভয়ে এখন আমাদেরকে বোবা কান্না কাদঁতে হচ্ছে।” ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, “ছাত্রদল আমাদের উপর হামলা চালালে আমরা প্রতিহত করেছি। পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।” ছাত্রদল সাধারন সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ বলেন, “শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশ করলে ছাত্রলীগ আমাদের উপর হামলা করে। আমরা তার প্রতিরোধ করি। কিন্তু ছাত্রলীগ পুলিশের বন্দুক কেড়ে নিয়ে আমাদের উপর গুলি করে এবং পুলিশও আমাদের উপর আক্রমন করে। এতে আমাদের অন্তত ৪০-৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। পুলিশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে ছাত্রদল সভাপতিসহ ৮ জনকে আটক করেছে। আটককৃতদেরকে রাত ৮টার মধ্যে ছেড়ে না দিলে শনিবার থেকে সর্বাত্মক ছাত্রধর্মঘট ডাকা হবে।’
প্রক্টর ড. আক্তারুল ইসলাম জিল্লু বলেন, “ক্যাম্পাসে মিছিল মিটিং নিষিদ্ধ থাকলেও ছাত্রদল তা অমান্য করে মিছিল করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যেকোন ধরনের হামলা ঠেকানোর জন্য আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করলেও তারা আমাদেরকে আগ্রাহ্য করে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটায়।”
এব্যাপারে ইবি থানার ওসি শেখ আতিয়ার রহমানের সাথে যোগাযোগ করতে বার বার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন