শুক্রবার, জানুয়ারী ১৮, ২০১৩

কুমারখালীতে ৩০ বছর ধরে রেল কোয়ার্টার দখল করে চলছে আওয়ামী লীগের অফিস

দখলকৃত কোয়ার্টারের বাইরে আওয়ামী লীগের দলীয়
এবং একপাশে তরুন স্মৃতি সংঘের সাইনবোর্ড।
অফিসের ভিতরে বঙ্গবন্ধু ও দলীয় প্রধানের ছবি।
স্টাফ রিপোর্টার : কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর চড়াইকোল রেল স্টেশনের সরকারী কোয়ার্টার দখল করে প্রায় ৩০ বছর ধরে চলছে আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসের কার্যক্রম। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম সাংসদ আবুল হোসেন তরুন ১৯৮৫ সালে রেল কোয়ার্টারটি দখল করে নন্দলালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস উদ্বোধন করেন। তার ইন্তেকালের পর ১৯৯৮ সালে অফিসের পেছন দিকে ‘তরুন স্মৃতি সংঘ’র সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়, যা কোন দিক দিয়েই লোক জনের চোখে পড়তো না। সাইনবোর্ড পেছনের দিকে থাকলেও সেখানে ওপেন সিক্রেট ভাবেই চলছিল আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম। সম্প্রতি তিন সপ্তাহ আগে অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে নতুন করে উদ্বোধন হোলো অফিসটি। আওয়ামী লীগের থানা সভাপতি আব্দুল মান্নান খান ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান অরুনসহ থানা আওয়ামী লীগের পোর্টফোলিওধারী অন্যান্য নেতৃবৃন্দ আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অফিস পূনউদ্বোধনের কাজ সম্পন্ন করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দলীয়নেত্রী শেখ হাসিনার ছবি এবং নৌকা প্রতীক সম্বলিত ‘তরুন স্মৃতি সংঘ’ ও ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নন্দলালপুর ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়’র দু’টি সাইনবোর্ড পাশাপাশি মহাসড়কের দিকে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এতদিন কিছুটা রাখঢাক থাকলেও রেলের সরকারী কোয়ার্টার দখল করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় অফিস এখন চলছে প্রকাশ্যে ধুমধাম সহকারে। এর মাত্র ৪শ’ গজ দূরেই রয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জাফর গ্র“পের অপর একটি অফিস, সেটা গড়ে উঠেছে সড়ক বিভাগের জমি দখল করে। জানা যায়, প্রথম মুসলমান বাঙ্গালী সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতি বিজড়িত চড়াইকোল স্টেশনটি দীর্ঘ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। দু’টি লোকাল ট্রেন এখানে থামলেও টিকেট বিক্রির ব্যাবস্থা নেই। স্থানীয় এক ভাড়াটেকে দিয়ে চালানো হচ্ছে ঘন্টা পেটানোর কাজ। স্টেশন মাস্টারসহ রেলের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এখান থেকে ডেপুটেশনে পাঠানোর ফলে স্টেশনের সমস্ত স্থাপনা সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় আছে। স্টেশনের প্লাটফর্ম ও যাত্রি ছাউনি দখল করে প্রতি বুধবার নিয়মিত বসছে পুরাতন সাইকেলের হাট। রেল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪ টি কোয়ারর্টারই এখন ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীদের দখলে। স্থাপনা ছাড়াও ইতোমধ্যে অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে চড়াইকোল স্টেশনের জমির একটি বিরাট অংশ। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মিরাই রেলের সম্পত্তি ভোগ দখল চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। চুরি হয়ে যাচ্ছে স্টেশনের দরজা-জানলা ও লৌহ সামগ্রী। স্টেশন সংলগ্ন রেলের জমিতে প্রতি বুধবার বসে অবৈধ পশুহাট। একই কায়দায় মাস্তানরা ভোগদখল করছে কুমারখালি স্টেশনের চারটি কোয়ার্টার ও প্রচুর পরিমান জমি। এ বিষয়ে ইতোপূর্বে পত্রিকান্তরে একাধিকবার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও কুম্ভকর্ণ কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙছে না। এভাবে রেল স্থাপনা দখল হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুধিসমাজ। সরকারী কোয়ার্টার দখল করে দলীয় অফিস ও ক্লাব বানানোর বৈধতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নন্দলালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি টিপু সুলতান বলেন, মরহুম সাংসদ আবুল হোসেন তরুনের স্মৃতি রক্ষার্থেই আমাদের যাবতীয় কার্যক্রম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন