মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৩

দৌলতপুর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত

 দৌলতপুর সংবাদদাতা : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। উপজেলার ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঔষধ সংকট, রোগীদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন সহ প্রয়োজনীয় ৩৪ জন চিকিৎসকের স্থলে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে নামে মাত্র চলছে দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৭ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। ফলে প্রতিদিন শতশত রোগী চিকিৎসা নিতে এসে সঠিক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডাঃ নাজিম উদ্দিন জানালেন, হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজ, মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কীমের মাতৃসেবা ও সিজার, ইনডোর, আউটডোরের দিবারাত্রি দায়িত্বপালন মাত্র ৩ জন ডাক্তার দিয়ে অসম্ভব।  প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএ) সহ ২০ জন এবং উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪ জন সহ সর্বমোট ৩৪ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে জুনিয়র কনসাল্টেন্ট (গাইনী) ডাঃ সফর আলী ও সানিয়া সুলতানাকে বদলি করায় বর্তমানে টিএইচএ সহ মাত্র ৪ জন চিকিৎসক এখানে কর্মরত আছেন। আর ১৪ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চিকিৎসক শুণ্য অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে, এ উপজেলার প্রায় ৭ লক্ষাধিক মানুষ সরকারের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধুমাত্র জরুরী বিভাগে সামান্য কাটাছেড়া রোগীর সেবা দেওয়া ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভাগ্য ভাল হলে হয়ত কোন চিকিৎসকের দর্শন মিলে। কেননা ডাক্তার সংকটের কারণে বর্হিবিভাগে সকাল ৯ টার পরিবর্তে বেলা ১২ টার আগে কোন ডাক্তার পাওয়া যায়না। তাছাড়া সামান্য জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের অভাবে মেডিকেল এ্যাসিস্টেন্টর
া রোগী কে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল বা রাজশাহী মেডিকেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি প্রায় একযুগ ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ইসিজি মেশিনটি ও ৫/৬ বছর ধরে নষ্ট। সংরক্ষণ ও মেরামতের নামে অর্থ ব্যয় হলেও তা অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। অক্সিজেন না থাকায় মুমুর্ষ রোগীরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অ-স্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে রোগীরা আরো বেশী অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। রোগীদের খাবার পরিবেশনে লক্ষ্য করা গেছে শুভঙ্করের ফাঁকি। রোগীদের প্রতিদিন একবেলা মাছ ও একবেলা মাংশ দেবার শর্ত থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছেনা। গরু বা খাশির মাংশের বদলে ব্রয়লার মুরগীর মাংশ এবং রুই মাছের বদলে পাঙ্গাস বা সিলভার কার্প মাছ দেয়া হচ্ছে। হাসপতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা জানায়, আমরা গরীব মানুষ যা দেয়, ইচ্ছা না থাকলেও তাই খাচ্ছি। ্একাধিক ঘনিষ্টসুত্র জানায়, সরকারীভাবে হাসপাতালে ৩৬ ধরণের ঔষধের সরবরাহ থাকলেও রোগীদের প্যারাসিটামল, এন্টাসিড ও মেট্রোনিডাজল সহ মাত্র ১০/১২ ধরণের ঔষধ দেয়া হয়। সরবরাহ থাকা সত্বেও দামী ঔষধগুলো রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সম্প্রতি বদলি হয়ে একাধিক চিকিৎসক জানান, টিএইচএ ডাঃ সালেহ আহমেদ এখানে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে যোগদান করার পর থেকে এখানে চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি নিয়মিত দায়িত্ব পালন না করে ৩ কিলোমিটার দুরে তার নিজস্ব ক্লিনিকে বসে রোগী দেখতে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিমাসে ১৪ দিন ১৪ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করার কথা থাকলেও তিনি পরিদর্শন না করে পরিদর্শন বাবদ বরাদ্ধ সরকারী কোষাগার থেকে তুলে নিচ্ছেন। তার কথামত না চলার কারণে তিনি আমাদের মত সাধারণ চিকিৎসকদের বিভিন্ন ধরনের চাপ সুষ্টি করে অন্যত্র বদলি হতে বাধ্য করেন। চলতি মাসের শুরুতে বদলি হওয়া জুনিয়র কনসাল্টেন্ট (গাইনী) ডাঃ সফর আলী জানান, ডিএসএফ প্রকল্পের আওতায় গর্ভবতী মায়েদের সিজার করা বাবদ আমার প্রাপ্ত অংশ থেকে টিএইচএ সালেহ আহমেদ কমিশন দাবী করলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করায় তাকে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বদলি করা হয়েছে। হাসপাতালের ঘনিষ্ট সুত্রগুলো জানায়, টিএইচএ সালেহ আহমেদের বাড়ি দৌলতপুরে হওয়ায় কারণে ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না। তাছাড়া স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা হওয়ার সুবাদে তিনি অবাধে সকল অপকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে টিএইচএ ডাঃ সালেহ আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন