বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৩

ইবিতে ছাত্রলীগের হাতে ওসি লাঞ্ছিত ॥ গাড়ী চলাচল বন্ধ

ইবি প্রতিনিধি : ইবিতে সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষেধাজ্ঞা জারী থাকা সত্বেও তা ভঙ্গ করে গতকাল বুধবার ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। মিছিল শেষে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দিলে তারা পুলিশের উপর হামলা করে। এসময় ইবি থানার ওসি মনিরুজ্জামানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ক্যাডাররা। এদিকে চাকরি প্রত্যাশিরা পরিবহন কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়িগুলো কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ ছেড়ে ক্যাম্পাসে আসে নি। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দারিদ্র বিমোচনের জন্য বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড’ এভূষিত হওয়ায় ইবি শাখা ছাত্রলীগ ও প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে গতকাল বুধবার বেলা পৌনে ১২টায় ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল বের করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মিছিল শুরু করলে পুলিশ প্রথমে বাধা দেয়। এসময় তারা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মিছিল নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। মিছিলটি ডায়না চত্ত্বর, কলা অনুষদ এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এসে পৌছায়। এসময় নেতাকর্মীরা প্রশাসন ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ প্রশাসন ভবনে ভাংচুর হওয়ার আশাংকায় বাধা দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। তারা এসময় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ইবি থানার ওসি মো: মনিরুজ্জামানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এসময় পুলিশ ছাত্রলীগের উপর চড়াও হলে তারা ওই জায়গা থেকে সরে এসে প্রশাসন ভবনের সামনে সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ছাত্রলীগের আহক্ষায়ক শামীম হোসেন খান, যুগ্ম সম্পাদক আবুজর গিফারি গাফ্ফার, আনিচুজ্জামান লিটন, জাসদ ছাত্রলীগ নেতা সাইফুজ্জামান পটলা। সমাবেশে বক্তারা মিছিলে বাধা দেওয়া ও হামলার প্রতিবাদে ২৪ ঘন্টার মেধ্য ইবি থানার ওসি মো: মনিরুজ্জামানের পদত্যাগ দাবি করেন। হামলার ব্যাপারে ইবি থানার ওসি মা. মনিরুজ্জামান বলেন,‘ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশ ছিল তারা যেন ক্যাম্পাসে মিছিল-মিটিং না করতে পারে। সে জন্য প্রথমে তাদেরকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। পরে তারা প্রশাসন ভবনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এসময় তারা কয়েকজন পুলিশের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে।’  এদিকে আনন্দ মিছিলে বাধা ও নেতাকর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে বেলা পৌনে একটার দিকে প্রেসকর্নারে সংবাদ সম্মেলন করেছে ইবি শাখা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের আহক্ষায়ক শামীম হোসেন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী পুরষ্কৃত হওয়ার সংবাদে আমরা কাম্পাসে আনন্দ মিছিল বের করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ মিছিলে বাধা দিয়েছে এবং আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,‘ ছাত্রলীগ তাদের কর্মসূচির ব্যাপারে আমার কাছে কোনো অনুমতি নেয়নি। নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্ওে তারা ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনায় বসব। তারপর একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এদিকে চাকরি প্রত্যাশিরা ক্যাম্পাসে গাড়ি না আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে। এজন্য গতকাল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বহনকারী দুপুর ২টায় চতুর্থ শিফট ও বিকাল ৪টার পঞ্চম শিফটের কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসে নি। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন অফিসের সহকারী রেজিষ্ট্রার মো. কামরুল ইসলাম বলেন,‘ ক্যাম্পাসে গাড়ি আনলেই ভাংচুর করা হবে বলে গাড়ির ড্রাইভার ও পরিহন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে নিরাপত্তার অভাবে ড্রাইভাররা গাড়ি আনতে সাহস পাচ্ছে না।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন,‘ বিষয়টি ঊধর্ক্ষতন কর্তৃপক্ষকে জানান হয়েছে। আশা করি দ্রুত এ বিষয়ে সমাধান পাওয়া যাবে।’উল্লেখ্য, ইবি প্রশাসন গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী এক মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের সমাবেশ, মিছিল-মিটিং ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন