সোমবার, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৩

ঝিনাইদহে শহীদ মিনারের নামে ৪ মেঃ টন চাল আওয়ামীলীগ নেতার আত্মসাৎ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম বরাদ্দ দিয়েছিলেন ৪ মেঃ টন চাল। দীর্ঘ ৮ মাস পূর্বে জেলা আওয়ামীলীগ নেতা, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান সেই চাল তুলে বিক্রিও করেছেন। কিন্তু শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ওই টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।প্রকল্প সভাপতি আজিজুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি দ্রুতই কাজ শুরু করবেন বলে জানান। তিনি দাবি করেন, শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ ৪ মেঃ টন চাল বিক্রির টাকায় সম্পন্ন হবে না। তাই তিনি আরো সাহায্যের অপেক্ষায় আছেন। পেলে ভালো ভবে কাজটি সম্পন্ন করবেন। মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের স্কুলটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এলাকার মানুষের দাবি ছিল স্কুল প্রাঙ্গনে একটি শহীদ মিনার নির্মানের। কিন্তু আর্থিক কারণে সেটা করা যাচ্ছিল না। শিক্ষকরা আরো জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা সরকার দলীয় স্থানীয় সাংসদ শফিকুল ইসলাম অপুর নিকট শহীদ মিনার নির্মানে বরাদ্দ দাবি করেন। ২০১২ সালের শেষ সময়ে তিনি শহীদ মিনার নির্মানের জন্য ৪ মেঃ টন চাল বরাদ্দ দেন। বরাদ্দ  পাওয়ার পর তাদের বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি, জেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুর রহমান সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনকে সদস্য সচিব করে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি জমা দেন। এরপর সভাপতি আজিজুর রহমান সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে চাল উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। শিক্ষকরা একাধিকবার এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করলে প্রধান শিক্ষক জানিয়ে দিয়েছেন এটা সভাপতির বিষয়, তিনি বেশী কিছু জানেন না। আর ভয়ে তারা সভাপতির কাছে কোন প্রশ্ন করতে পারেননি। তারা ধরে নিয়েছেন টাকাগুলো আত্বসাত করা হলো।  এ ব্যাপারে হরিনাকুন্ডু প্রকল্প অফিসে ঁেখাজ নিয়ে জানাে গছে, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে সাংসদ শফিকুল ইসলাম হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য ৪ মেঃ টন করে ১২ মেঃ টন চাল বরাদ্ধ দেন। ২০১২ সালের নভেম্বর ও ২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসে দুই দফায় এই চাল উত্তোলন করেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা। মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় শহীদ মিনার নির্মান কাজ বাস্তবায়ন কমিটি ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর ২ মেঃ টন চাল উত্তোলন করেন। এরপর কাজের অগ্রগতি দেখিয়ে ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারী আরো দুই মেঃ টন চাল উত্তোলন করেছেন। এই চার মেঃ টন চাউলের সরকারী মুল্য এক লাখ ২৪ হাজার টাকা। সভাপতি চাল উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করেছেন, কিন্তু শহীদ মিনার নির্মাণে কোন কাজ করেন নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার প্রিয়নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সালেহা খাতুন মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ একই সময়ে চাল উত্তোলন করে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছেন। সালেহা খাতুন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোক্তার হোসেন জানান, তারা অনেক আগেই কাজটি সম্পন্ন করে ফেলেছেন। আর হরিণাকুণ্ডু প্রিয়নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোপাল চন্দ্র জানিয়েছেন তাদের কিছু বাড়তি খরচ হয়েছে। সেগুলো স্থানীয় ভাবে জোগাড় করে কাজটি সম্পন্ন করেছেন। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন জানান, চাল বিক্রির টাকা সভাপতির কাছে। তিনি কমিটির সদস্য সচিব মাত্র। এর বেশী তিনি কিছুই জানেন না। তবে সভাপতি দ্রুত কাজটি শুরু করবেন বলে তাদের জানিয়েছেন। আর হরিণাকুণ্ডু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিরঞ্জন চক্রবর্তী জানান, প্রকল্প সভাপতিকে তিনি বার বার তাগাদা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কাজটি শুরু করেননি। বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান। হরিনাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বসার জানান, চাল উত্তোলন করে কাজ না করলে সেটা কোন ভাবেই ছাড়া হবে না। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন