বুধবার, অক্টোবর ০৯, ২০১৩

বিএনপির জন্ম হলো হত্যা ও খুনের রাজনীতির মধ্য দিয়ে : ঝিনাইদহের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

শাহনেওয়াজ খান সুমন, ঝিনাইদহ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোট ভাতের অধিকার নিশ্চিত করে আর বিএনপি-জামায়াত করে মানুষ খুনের রাজনীতি। সন্ত্রাস, দুর্নীতি আর দুঃশাসন ছাড়া বিএনপি কিছুই দিতে পারে না। আসলে বিএনপির জন্ম হলো হত্যা ও খুনের রাজনীতির মধ্য দিয়ে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলাই তাদের চরিত্র। বিএনপি ক্ষমতায় এলে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে লালন-পালন করে। তাই দেশের সম্মান অক্ষুণœ রাখতে আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়ী করার আহ্বান জানান তিনি। মঙ্গলবার বিকেলে ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।গত নির্বাচন আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করায় ঝিনাইদহবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এক সময় ঝিনাইদহ সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিলো। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা সেই সন্ত্রাস মুক্ত করেছি। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে অত্যাচার, নির্যাতন, মানুষের অশান্তি। বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে লুটপাট। আবার টাকা পাচার। তাদের সন্তানরা বিদেশে টাকা পাচার করে, আবার বিশ্বের কাছে সেটা ধরা পড়ে আমাদের দেশের মান-সম্মান ধূলায় লুটিয়ে দেয়। তারা ক্ষমতায় আসলে দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়।২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের নিশ্চয় ২০০৪ সালের কথা মনে আছে। ওইদিন গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ওনার কেবিনেটের মন্ত্রী এবং তার বড় ছেলে। আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে গেছি কিন্তু হারিয়েছি আইভি রহমানকে। হারিয়েছি আরো
২২জন নেতাকর্মীকে। সেই ক্ষত আজো আমাকে পোড়ায়।ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই এমপির সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এ্যাড. সাহারা খাতুন, আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর, সংসদ সদস্য বিএম মোজ্জাম্মেল হক, শেখ হেলাল, শফিকুল ইসলাম অপু, আব্দুল মান্নান, শফিকুল আজম খান চঞ্চল, নুরজাহান বেগম এমপি, জেলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী রেজা রাজু, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস, পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাচ আলী, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। বিশাল এ জনসভাটি পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি ক্ষেত্রে আমরা গ্রাম থেকে গ্রামে উন্নয়ন পৌঁছে দিয়েছি। আমরা গ্রামের সেবা করি, উন্নয়ন করি। আজকে কৃষকরা ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। তিনি বলেন, এখন বিনা জামানতে বেকাররা ঋণ পান। ৯০ লাখ বেকারের চাকুরির ব্যবস্থা করেছি। কর্মসংস্থানের জন্য বিনা জামানতে ১ লাখ টাকা ঋণও পান বেকাররা। এর আগে একই মাঠে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ১২টি প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন ও ৪টি প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবন, ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ, ঝিনাইদহ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ওরাল স্যালাইন ফ্যাক্টরি, শিশু একাডেমি কমপ্লেক্স, সরকারি কেসি কলেজের নবনির্মিত চারতলা ভবন, ঝিনাইদহ পৌরসভার সম্প্রসারিত ভবন ও পোস্ট অফিস ভবন উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের নতুন একাডেমিক ভবন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শৈলকূপা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল কলেজ ও ঝিনাইদহ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সমাবেশে হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ লোকজন সমাবেশস্থলে সমবেত হন। দুপুর সোয়া ২টায় চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গোল চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ‘প্রেরণা ৭১’ এরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ মাঠে অবতরণ করেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝিনাইদহে এসেছিলেন নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিতে। সেই নির্বাচনে এখানকার ৪ টি আসনের সবকটিতেই জয় পান আওয়ামীলীগ প্রার্থীরা। প্রায় ৫ বছর পর যখন তিনি আবারো এলেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলায় তখন সামনে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন। তাই গত নির্বাচনের মত এবারও আওয়ামীলীগের পাশে থাকতে এখানকার মানুষদের আহবান জানান তিনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন