সোমবার, ডিসেম্বর ০১, ২০১৪

গাড়ি চাপায় ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু : আগুনে পুরেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

অনিদ্রিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা পরিবহন শ্রমিদের ধর্মঘট


রাশেদুন নবী রাশেদ, ইবি : গাড়ি চাপায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) তৌহিদুর রহমান টিটু নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইটে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে ফুসে উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের প্রায় সব বাসে আগুন দিয়েছে তারা। প্রশাসন ভবনসহ প্রায় সব ভবনে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। ভাংচরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতি আশংকা করা হচ্ছে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালালে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁেধ। এ সময় ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। ক্যাম্পাস অনিদ্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষনা। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রোববার বেলা ১২টার দিকে তৌহিদুর রহমান টিটু ক্যাম্পাস থেকে ঝিনাইদহ যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়াকরা গাড়ি সাগর পরিবহনে (কুষ্টিয়া জ-১১-০০৪২) উঠে। পরে সে ওই গাড়ি থেকে নেমে আরেকটি গাড়িতে ওঠার জন্য চলা শুরু করলে পিছন থেকে রাজ মটরস (ঝিনাইদহ ব-১১-০০১) তাকে ধাক্কা দেয়। এসময় তৌহিদের গলা পাশের গাড়ির জানালার কাচে আটকে গিয়ে গলার বেশিরভাগ অংশ কেটে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তৌহিদের সহপাঠিরা জানান, ‘রোববার ৩০৬ নং কোর্সের টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ছিল। তৌহিদসহ আমরা পরীক্ষা দেবার পর ১২টার গাড়ি ধরার জন্য ডায়না চত্তরে এসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করি। এসময় তৌহিদ একটি গাড়ি থেকে আরেকটি গাড়িতে উঠতে গেলে পিছনের একটি গাড়ির ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তৌহিদকে যে গাড়ি ধাক্কা দেয় ওই গাড়িটি সামনের একটি গাড়িকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল। সাথে সাথেই টিটু মারা যায়। এদিকে ঘটনার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা মেইন গেইট ও কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাংচুর শুরু করে। পরে খবর পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সব শিক্ষার্থীরা এসে বিক্ষোভে যোগ দিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহতায় রুপ নেয়। কিন্তু নিহত টিটুর লাশ ক্যাম্পাসে প্রায় ৩ঘন্টা অবহেলায়
পড়ে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কোন ভুমিকা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববমর্তী এলাকার বহিরাগতরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারন শিক্ষার্থীদেও উস্কে দেয়। এতে সাধারন শিক্ষার্থীরা  মেইন গেইটের পাশে থাকা ক্যাম্পাসের ভাড়া করা গাড়ী সহ মেডিকেল ভবনের পাশে বাসস্ট্যান্ডে থাকা বাসগুলোতেও আগুন দেয়। ফলে ক্যাম্পাসের ভাড়া করা প্রায় ৩০টি বাস (সব বাস) পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাংলোর ভিতরে ঢুকে কিছু বাস অক্ষত থাকে। এক পর্যায়ে তারা ক্যাম্পাসের প্রশাসন ভবন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবন, অনুষদ ভবন, আইন অনুষদ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবন, টিএসসিসিসহ প্রায় সব ভবনে ভাংচুর চালায়। পরে তারা লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে ও কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পৌনে দুইটার দিকে শির্ক্ষাথীরা আবারো ভাংচুরের চেষ্টা চালালে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়। পুলিশ এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা চালালে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের ব্যপক সংঘর্ষ বাঁেধ। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. টি এম লোকমান হাকিমের নির্দেশে পুলিশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর গুলি, রাবার বুলেট, লাঠি চার্জ শুরু করে। এসময় ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদেও মধ্যে সজল, আকাশ, মিথুন, নাইম, তৌহিদ, জহির ও মেহেদিসহ প্রায় ৩০ শিক্ষার্থী। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সজল নামের এক শিক্ষার্থীকে পুলিশ ধওে নিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে। এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জরুরী সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রদের হল ও আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীদেও হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ও ভাড়াকরা ৩০টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং ১০টি গাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে গুলি ছোড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন-আমারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ২০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছি। ছাত্রদেও সাথে সংঘর্ষে আমাদেও ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক বলেন, টিটু আমার খুব প্রিয় ও মেধাবী ছাত্র ছিলো। সে এভাবে আমাদের কাদিঁয়ে চলে যাবে কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। তার মৃত্যুতে আমরা বাকরুদ্ধ। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের ভাড়া করা প্রায় প্রত্যেক বাসের চালাকসহ হেলপাররা খুবই রুঢ় স্বভাবের। তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থী কাউকেও পাত্তা দেয়না। ক্যাম্পাস সুষ্ঠুভাবে চালানো জন্য নিজস্ব বাসের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার প্রিয় ছাত্রের নিহতের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান তিনি। প্রো-ভিসি প্রফেসর  ড. মো. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘নিহত শিক্ষার্থীর জন্য আমরা শোকাহত। কিন্ত কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দখলে নেয় বলে জেনেছি। বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়কো ধক্ষংসের জন্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। আমরা বিষয়গুলো কঠোর ভাবে খতিয়ে দেখবো।’ এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন- অনাকাঙ্খিত এ ঘটনায় যে পরিস্থিতি দাড়িয়েছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় অনিদ্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হল। আর নিহত ছাত্রের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার শোকাহত। এঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন কওে এ ঘটনার নেপথ্যে যারা রয়েছে তাদের ব্যাপাওে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।” অন্যদিকে, বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও বিচারের দাবিতে কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতি, মোটর শ্রমিক ইউনিয়নসহ জেলার পাঁচ শ্রমিক সংগঠন অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট আহবান করেছে। রবিবার দুপুর থেকে কুষ্টিয়ার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এদিকে ধর্মঘটের ফলে কুষ্টিয়ার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে দুরপাল¬ার পরিবহনের যাত্রীরা সহ হাজার হাজার যাত্রী বিপাকে পড়েছে। অন্যদিকে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর রেলগেট আটকিয়ে এবং শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করে রাখে মোটরশ্রমিকের সদস্যরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন