ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ॥ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ক্ষোভ, অভিমান আর লজ্জায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন শিক্ষকরা। হামলার ব্যাপারে কোন বিচার দাবি করতেও তারা নারাজ। আহত শিক্ষকদের বক্তব্য আমরা আলৱাহর কাছে বিচার দিয়েছি। দুনিয়ার কেউ হামলাকারীদের বিচার করতে পারবে না। ১৯ নভেম্বর শিক্ষকদের উপর প্রথম দফায় হামলার জড়িতদের বিচার করলে তারা দ্বিতীয়বার
শিক্ষকদের গায়ে হাত উঠাতে সাহস পেত না। এদিকে শিক্ষকদের উপর
ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল ক্যাম্পাসের পরিসি'তি ছিলো থমথমে। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী
ক্যাম্পাসে আসলেও আন্দোলনকারী শিক্ষকরা কেউই ক্যাম্পাসে আসেননি। তবে ভিসিপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ কিছু বিভাগে
ক্লাস নিয়েছেন। এদিকে প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টা স্বপদে বহাল
থাকা অবস্তায় নিরাপত্তাহীন ক্যাম্পাসে
না আসার ঘোষণা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জিয়া পরিষদ
এবং গ্রীণ ফোরামের শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতি নেতৃবৃন্দ
ভিসিকে ৭ দিনের মধ্যে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শাসি-মুলক ব্যবস্তা গ্রহণের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
সূত্র মতে,
শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় গতকাল ক্যাম্পাস পরিসি'তি ছিলো থমথমে। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা
ছিলো বিমর্ষ। হতাশা, ক্ষোভ আর লজ্জায় বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জিয়া পরিষদ
ও গ্রীণ ফোরামের শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে আসেননি। ফলে অধিকাংশ বিভাগের তালাই খোলা হয়নি। দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাস পরে
ক্লাস-পরীক্ষার আসায় শতশত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসলেও ক্লাস না হওয়ায় তারা হতাশ হয়ে
ফিরে যায়। তবে ভিসিপন্থী শাপলা ফোরামের কিছু শিক্ষক কয়েকটি বিভাগে ক্লাস নিয়েছেন। কয়েক বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে এক ক্লাসে বসিয়ে ভিসিকে দেখানো হয়েছে শিক্ষার্থীরা
সতস্পুর্ত ভাবে ক্লাস করছেন। আবার শাপলা ফোরামের
কিছু শিক্ষককে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের পিটিয়ে ক্যাম্পাস সচল করার ক্রেডিট নিতে দেখা
গেছে।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের
সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. রুহুল কে এম সালেহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। শিক্ষকদের মারধর করা হচ্ছে। প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া
হচ্ছে। অথচ এর কোন বিচার নেই। তাই এর বিচার আল্লাহর কাছে দিয়ে দিয়েছি। আর্লাহই এর বিচার
করবে।’
জিয়া পরিষদের
সভাপতি প্রফেসর ড. আলীনুর রহমান বলেন-‘ক্যাম্পাসে
শিক্ষকদের কোন নিরাপত্তা নেই। প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টার
উপসি'তি ও ইন্ধনে যেখানে শিক্ষকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা হয় সেখানে
অন-ত: শিক্ষক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। যতক্ষণ পর্যন- প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টা স্বপদে বহাল আছেন ততক্ষণ পর্যন- শিক্ষকরা
ক্যাম্পাসে যাবেন না।’
গ্রীণ ফোরামের
সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. আ ছ ম তরিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন-‘বার বার শিক্ষকদের উপর হামলা হলেও প্রশাসন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে
কোন ব্যাবস্তা নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগীতায় শিক্ষকদের উপর হামলা হয়েছে। যতদিন শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হবে ততদিন শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে যাবেন না।’
বঙ্গবন্ধু পরিষদের
সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ইতিপূর্বে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় বিচার না হওয়ায় ছাত্রলীগ আবার হামলা চালিয়েছে। আমরা মনে করি প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার ইন্ধনে ছাত্রলীগ এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টা স্বপদে বহাল থাকা অবস'ায় কোন শিক্ষক ক্যাম্পাসে যাবেন না। তিনি বলেন সন্ধায় শিক্ষকদের
সবগুলো সংগঠনের সাথে বৈঠক আছে। বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচী
নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে বেলা ২টার সময় ইবির কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় সংবাদ সম্মেলন
করে ছাত্রলীগ শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। ইবি ছাত্রলীগের
সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন ছাত্রলীগের
ইতিহাস, ঐতিহ্য
এবং সুনাম ক্ষুন্ন করতে বিভিন্ন পত্রিকায় উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মুলত সাধারণ
শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষার দাবিতে শিক্ষকদের উপর চড়াও হয়েছে। ছাত্রলীগ
নেতাকর্মীরা অভিভাবকের ভুমিকা পালন করে শিক্ষকদেরকে উদ্ধার করেছে বলে ছাত্রলীগ নেতারা
দাবি করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন