রবিবার, জানুয়ারী ২০, ২০১৩

ঈদে মীলাদুন্নবীর কারবার

মো: সাইফুলাহ আল-খালিদ
আজকের দুনিয়ায় মুসলিম উম্মাহর অন্যতম উৎসব হলো ঈদে মীলাদুন্নবী। প্রতি বৎসর ১২ই বরিউল আউআল আমরা এই ঈদ পালন করে থাকি। এছাড়া কোনো কোনো দেশে মুসলমানগণ সারাবৎসরই বিভিন্ন উপলক্ষ্যে ‘মীলাদ মাহফিল’ করে থাকেন। ঈদে মীলাদুন্নবী নিয়ে অনেক কথা আছে। এর পক্ষে ও বিপক্ষে অন্তহীন বিতর্ক চলছে। আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের সামান্য জ্ঞানে মীলাদের জায়েয বা না-জায়েয হওয়ার বিষয়ে নতুন কিছু বলার নেই, বলার চেষ্টাও করছি না। আমি মূলত সুন্নাতের আলোকে ঈদে মীলাদুন্নবী সম্পর্কে আলোচনা করর। এখানে ঈদে মীলাদুন্নবী আলোচনার কারণ হলো, এ ক্ষেত্রে যে সকল খেলাফে-সুন্নাত কাজ সংঘঠিত হয় তার পিছনে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিসমূহের মধ্য থেকে একাধিক পদ্ধতি বিদ্যমান। যেমন, রাসূলুল্লাহ সা. ও তাঁর সাহাবীগণের কর্মের দিকে না তাকিয়ে শুধুমাত্র ফযীলতের আয়াত ও হাদীসের উপর নির্ভর করে ইবাদত তৈরি করা, জায়েয ও সুন্নাতের মধ্যে পার্থক্য না রাখা, উপকরণ ও ইবাদতের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে না পারা ইত্যাদি। আল্লাহ দয়া করে তাওফীক প্রদান করলে আমি ঈদে মীলাদুন্নবীর মধ্যে সুন্নাত কী কী এবং কী-ভাবে আমরা যথাসম্ভব সুন্নাত পদ্ধতিতে ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করতে পারি সে বিষয়ে আলোচনা করব। ঈদে
মীলাদুন্নবী আমাদের অতিপরিচিত অনুষ্ঠান হলেও আমরা অনেকেই শুধু একে বিদ‘আত বা বিদ‘আতে হাসানা বলেই জানি, এর বিস্তারিত ইতিহাস জানি না, এজন্য ঈদে মীলাদুন্নবীর সুন্নাত ও খেলাফে-সুন্নাত আলোচনার পূর্বে আমি এর ইতিহাস আলোচনা করতে চাচ্ছি।
পরিচিতি-
ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ : আনান্দ,খুশি। মীলাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ : জন্মসময়। এই অর্থে “মাওলিদ” শব্দটিও ব্যবহৃত হয়। আল্লামা ইবনু মানযূর লিখছেন, “লোকটির মীলাদ : যে সময়ে সে জন্মগ্রহণ করেছে সে সময়ের নাম।”স্বভাবতই মুসলমানেরা “মীলাদ” বা “মীলাদুন্নবী” বলতে শুধুমাত্র নবীজী সা. এর জন্মের সময়ের আলোচনা করা বা জন্ম কথা বলা বুঝান না। বরং তাঁরা “মীলাদুন্নবী” বলতে নবীজীর সা. জন্মের সময় বা জন্মদিনকে বিশেষ পদ্ধতিতে উদ্যাপন করাকেই বোঝান। তাঁর জন্ম উপলক্ষে কোনো আনন্দ প্রকাশ, তা তাঁর জন্মদিনেই হোক বা জন্ম উপলক্ষে অন্য কোনো দিনেই হোক, যেকোনো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর জন্ম পালন করাকে আমরা “মীলাদ” বলে বুঝি। মীলাদ অনুষ্ঠান যেহেতু রাসূলুল্লাহ সা. -এর জন্মদিন পালন কেন্দ্রিক, তাই প্রথমেই আমরা তাঁর জন্মদিন সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করব। কুরআন কারীমে রাসূলুল্লাহ সা. -এর “মীলাদ” অর্থাৎ তাঁর জন্ম, জন্ম সময় বা জন্ম উদ্যাপন বা পালন সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। কুরআন কারীমে পূর্ববতী কোনো কোনো নবীর জন্মের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে কোথাও কোনোভাবে কোনো দিন, তারিখ, মাস উল্লেখ করা হয়নি। অনুরূপভাবে, “মীলাদ” পালন করতে, অর্থাৎ কারো জন্ম উদ্যাপন করতে বা জন্ম উপলক্ষে আলোচনার মাজলিস করতে বা জন্ম উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশের কোনো নির্দেশ, উৎসাহ বা প্রেরণা দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র আল্লাহর মহিমা বর্ণনা ও শিক্ষা গ্রহণের জন্যই এসকল ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
ইতিহাস-
হিজরি চতুর্থ শতাব্দিতে কায়রোয় ফাতেমি খলিফাগণ এর প্রবর্তন করেন। তারা ছিল উবাইদি, তাদের সঙ্গে ফাতেমা রা. এর ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। তারা হচ্ছে জিন্দিক, তারা নিজদের ‘রাফেজি-শিয়া’ বলে, পরিচয় দিলেও অন্তরে কুফর পোষণ করে। তারা ছয়টি ‘ঈদে মিলাদ’ বা জন্ম উৎসব প্রবর্তণ করে। ১. ঈদে মীলাদুন্নবী, ২. ঈদে মিলাদে আলী, ৩. ঈদে মিলাদে ফাতেমা, ৪ ও ৫. ঈদে মিলাদে হাসান-হুসাইন, ৬. ঈদে মিলাদে খলিফাতুল হাজির, অর্থাৎ বর্তমান শাসকের জন্ম উৎসব। অতঃপর আফজল ইবনে আমির তা বাতিল ঘোষণা করেন। পাঁচশত চব্বিশ হিজরিতে পুনরায় ফাতেমি শাসক ‘আমের বি আহকামিল্লাহ’ (মানসুর বিন আহমদ) তা আবার চালু করেন। অথচ আফজালের বাতিল করায় মানুষ তা ভুলে গিয়েছিল। শপ্তম হিজরিতে ইরাকের ইরবাল শহরে বাদশাহ মুজাফ্ফর আবু সাঈদ কুকবুরি তা চালু করেন, আর সে থেকেই বর্তমান পর্যন্ত চলে আসছে। ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রচলন এর আগে কখনো ছিল না, না সাহাবাদের যুগে, না চার ইমামের যুগে। যারা এর সূচনা করেছে, তারা মূর্খ, তারা জিন্দিক। এটা বেদআত, এটা আল্লাহর ধর্মে নতুন আবিস্কার।
উদ্যাপনকারীদের যুক্তি খণ্ডন-
১. তারা দাবি করে ঈদে মীলাদুন্নবী উদ্যাপনের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উদ্দেশ্য।
উত্তর : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সম্মান করার নিয়ম হচ্ছে, তার অনুসরণ করা, তার আদেশ-নিষেধগুলো মেনে চলা এবং আল্লাহর জন্য তাকে মহব্বত করা ইত্যাদি। কিন্তু এর বাইরে বেদআত আবিস্কার করা, তার নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া ঘৃণ্য ও দুষণীয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সব চেয়ে বেশী মহব্বত করতেন সাহাবায়ে কেরাম। উরওয়া বিন সাকাফি বলেন, হে আমার বংশ, আমি রোম, পারস্য ও অন্যান্য বাদশাহের দরবারে গিয়েছি, কিন্তু মুহাম্মাদের সঙ্গী-সাথীগণের ন্যায় কাউকে আমি তাদের বাদশাহদের সম্মান করতে দেখিনি। আল্লাহর শপথ করে বলছি, অতি সম্মানের কারণে তারা মুহাম্মদের প্রতি পূর্ণ দৃষ্টি পর্যন্ত দেয় না। এদতসত্বেও তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম দিবসকে ঈদ কিংবা উৎসব হিসেবে পালন করেননি। যদি এটা তার প্রতি সম্মানের কোন নিদর্শন হত, তাহলে অবশ্যই তারা তা করতেন।
২. অনেকে এর বৈধতার পক্ষে বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশের আমল তুলে ধরেন।
উত্তর : কোন দেশ বা কোন মানুষের আমল দলিল হতে পারে না। দলিল হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যা প্রমাণিত তা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব ধরনের বেদআত থেকে নিষেধ করেছেন, ঈদে মীলাদুন্নবী যার একটি। দলিল বিরোধী মানুষের আমল গ্রহণযোগ্য নয়, যদিও তাদের সংখ্যা অধিক হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যদি তুমি যারা জমিনে আছে তাদের অধিকাংশের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে।’সূরা-আনআম-১১৭।
৩. অনেকে বলে থাকেন, ঈদে মীলাদুন্নবীর দ্বারা সমাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আলোচনা সবার অন্তরে বদ্ধমূল করা উদ্দেশ্য।
উত্তর : বৈধ পন্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জিকির দিনরাত ছব্বিশ ঘণ্টাই মানুষের অন্তরে হয়ে থাকে। যেমন, আজান, একামত, খুতবা, সালাত, তাশাহহুদ, দরূদ ও তার অনুসরণের মাধ্যমে, সুতরাং এর জন্য ঈদে মীলাদুন্নবী আবিস্কার করার কোন প্রয়োজন নেই।
৪. অনেকে বলে থাকেন ঈদে মীলাদুন্নবী বেদআতে হাসানা। এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আভির্ভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা হয়।
উত্তর : বেদআত পুরোটাই গোমরাহি, এর মধ্যে কোন জিনিস হাসান বা ভাল নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে আমাদের ধর্মে নতুন কিছু আবিস্কার করবে, তা প্রত্যাখ্যাত।’ (বুখারি, মুসলিম)
আমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ষষ্ঠ হিজরি পর্যন্ত কেন এ পদ্ধতিতে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা হল না? সাহাবা, তাবেয়ি বা তাদের পরবর্তী কেউ আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য এ পদ্ধতি আবিস্কার করেননি। তবে কি আমরা তাদের চেয়ে বেশী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আশেক ও মহব্বতকারী? না, কখনো না।
৫. অনেকে বলে থাকেন, ঈদে মীলাদুন্নবী যে আবিস্কার করেছেন, তিনি একজন ন্যায় পরায়ন বাদশাহ।
উত্তর : বেদআত যে ব্যক্তিই আবিস্কার করবে, তা প্রত্যাখ্যাত। আলেম, জাহেল বা জালেম, ন্যায়পরায়ন বলে কোন কথা নেই।
যে সব কারণে ঈদে মীলাদুন্নবী পরিত্যাজ্য ও পরিহার যোগ্য :
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে সেখানকার সব ঈদ বাতিল ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুসলমানদের ঈদ হচ্ছে দু’টি : ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। ২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেদআত থেকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, সকল বেদআতই হচ্ছে গোমরাহি। ৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহেলি যুগের সব বেদআতকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। ৪. ঈদে মীলাদুন্নবী ইসলামের শত্র“ রাফেজি সম্প্রদায় কর্তৃক আবিস্কৃত। তারা মসজিদে কবর বানায়, তাজিয়া তৈরি করে তারা বেদআতপন্থী। ৫. সাহাবায়ে কেরামের কেউ এ কাজ করেননি। অথচ আমাদের চেয়ে তাদের ঈমান পরিপূর্ণ, তারা আমাদের চেয়ে কুরআন-হাদিস বেশী বুঝতেন। সারকথা : সব ধরনের ঈদে মীলাদুন্নবী বেদআত ও গর্হিত। মুসলমানদের এর থেকে বেচে থাকা ও অন্যদের বিরত রাখা জরুরি। আরো জরুরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত জীবিত করা ও তা আকঁড়ে ধরা। যারা ঈদে মীলাদুন্নবী উদ্যাপন করে ও তার পক্ষ নেয়, তাদের দেখে বিভ্রান্ত হবে না। তারা বেদআতকে যে পরিমাণ গুরুত্ব দেয়, সুন্নতকে সে পরিমাণ গুরুত্ব দেয় না। বরং তাদের অনেকে সুন্নতের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই করে না। আর যাদের এমন স্বভাব তাদের অনুসরণ ও আনুগত্য করা যায় না, যদিও তাদের সংখ্যা অধিক হয়। অনুসরণ করতে হবে তাদের যারা সুন্নতের ওপর চলে, সাহাবাদের আনুগত্য করে, যদিও তাদের সংখ্যা কম হয়। কোন ব্যক্তি দেখে সত্য নির্নয় করা যায় না, বরং সত্যের মাধ্যমে ব্যক্তিকে বিবেচনা করতে হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা দীর্ঘজীবি হবে, তারা অনেক মতবিরোধ প্রত্যক্ষ করবে। আমার পরে তোমাদের উচিত হবে, আমার সুন্নত ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত আঁকড়ে ধরা। মাড়ির দাঁত দিয়ে তা আঁকড়ে ধর। খবরদার! আবিস্কৃত বস্তু থেকে সতর্ক থেক। (তা হচ্ছে বেদআত) কারণ, প্রত্যেক বেদআতই হচ্ছে গোমরাহি।’ এ হাদিসের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বলে দিয়েছেন, কাদের অনুসরণ করব আর কাদের অনুসরণ করব না। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আরো বলেছেন যে, যেসব কথা ও কর্ম তার সুন্নতের বিপরীত হবে, তা বেদআত, আর সব বেদআত হচ্ছে গোমরাহি। হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে ইসলামের সঠিক, সত্য ও সুন্দর পথে চলার তওফিক দীন।মীলাদুন্নবী উদযাপন হল সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজের একটি। বিশেষ করে যেখানে থাকে গানের আসর, মদের আডডা, নৃত্য। যেখানে একত্র হয় নারী ও পুরুষেরা। অনেক সময় এ ধরনের অনুষ্ঠান হয় কবর ও মাযারকেন্দ্রিক।
যদি মীলাদুন্নবীর এ অনুষ্ঠানে অশ্লীলতা, নাচ-গান, মদের আসর না-ও থাকে তবুও তা একটি মারাতœক খারাপ কাজ। কারণ এতে থাকে শিরক। নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি অপবাদ-তিনি দীনের পূর্ণতা দিয়ে যাননি- তা ছাড়া ইসলামী শরীয়ত পরিপূর্ণ নয় এধরনের ধারনা সৃষ্টি হয় এ সকল মীলাদ অনুষ্ঠান উদযাপন করার মাধ্যমে। আর এ মীলাদুন্নবী উদযাপন করা হয় ভিত্তিহীন ধারনা, জাল হাদীসের উপর ভিত্তি করে।
১- গান-বাজনা, বাদ্য যন্ত্রের ব্যবহার ও যুবক-যুবতীতের একত্র হওয়া।
২- আল্লাহর কিতাবের অবমাননা করা। যেমন তার কালামের তেলাওয়াত শোনার পরপরই বিভিন্ন গান-বাজনা শুরু করে দেয়া। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘আর রাসূলের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে যখন তারা তা শুনে, তুমি দেখবে তাদের চক্ষু অশ্র“তে ভেসে যাচ্ছে, কারণ তারা সত্য জেনেছে। তারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য দানকারীদের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করুন’। সূরা মায়েদা, আয়াত ৮৩
৩- মীলাদুন্নবীর রাতে কবর যিয়ারত করা হয়। মেয়েরা গোরস্থানে ভীর করে থাকে।
৪- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে অনেক কবিতা ও নাত পেশ করা হয়। যাতে শিরকী কথা-বার্তা থাকে। তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। নিজের অবস্থার উন্নতির জন্য তার কাছে আরজী জানানো হয়।
৫- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী। তিনি অন্যসব মানুষের মত নন। এ ধরনের বাতিল কথা বার্তা প্রচার করা হয় মীলাদ অনুষ্ঠানে। বরং আল্লাহ তাআলা আল কুরআনের বহু স্থানে বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হল তোমাদের মত একজন মানুষ। যেমন তিনি বলেন ঃ
‘তুমি বলে দাও, আমি একজন মানুষ তোমাদের মতই।’ সূরা কাহাফ, আয়াত ১১০
তিনি আল্লাহর একজন বান্দা ও রাসূল। যেমন আল্লাহ নিজে তার সম্পর্কে বলেন-আর যখন আল্লাহর বান্দা দাড়ান, তিনি তাঁকে ডাকেন।
তিনি আরো বলেন-‘তিনি তার বান্দার কাছে যা অহী করার তা অহী করেন।’ সূরা নাজম, আয়াত ১০
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলেছেন-‘আমি একজন বান্দা। তোমরা বলবে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’ তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য মানুষের মত একজন রক্ত মাংসের মানুষ। এ কথা বিশ্বাস না করা একটি কুফুরী।
৬- মীলাদ অনুষ্ঠানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মানে দাড়িয়ে যাওয়া। এটা একটি গর্হিত কাজ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর সম্মানে দাড়াতে নিষেধ করেছেন। অনেকে মনে করেন মীলাদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রূহ বা আতœা উপস্থিত হয়ে থাকে। তাই তার সম্মানে দাড়াতে হবে। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছে, তিনি এভাবে সম্মানার্থে দাড়াতে নিষেধ করেছেন।
সাহাবী আবু উমামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন লাঠিতে ভর করে আমাদের কাছে আসছিলেন। আমরা তাকে দেখে দাড়িয়ে গেলাম। তিনি বললেন-‘অনারব লোকেরা একজনের সম্মানার্থে অন্যজন যেমন দাড়িয়ে যায় তোমরা এ রকম দাড়াবে না।’ বর্ণনায় : আহমাদ, হাদীস নং ২১৬৭৭ ও আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২৩০
আনাস রা. বলেন, আমরা যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখতাম তখন দাড়াতাম না। কারণ তিনি এটাকে অপছন্দ করতেন। বর্ণনায়: আহমাদ, হাদীস নং ১১৯৩৬
তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-‘নিশ্চয় তুমি মৃত্যুবরণ করবে আর তারাও মৃত্যুবরণ করবে।’ সূরা যুমার, আয়াত ৩০
৭- এক সাথে সমস্বরে দরুদ পাঠ করা। এটা একটা কুসংস্কার। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তার সাহাবায়ে কেরাম কখনো এমনটি করেননি। তাদের পর কেহ এমন করেছে বলেও শোনা যায়নি।
৮- মীলাদুন্নবী বা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন পালন করা হল খৃষ্টানদের সাথে সামঞ্জস্য ও সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কাজ। খৃষ্টানেরা নবী ঈসা আ. এর জন্ম দিবস পালন করে। তাই এটা মুসলমানেরা অনুসরণ করতে পারে না। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন।
৯- বার রবিউল আওয়াল তারিখের রাত-কে শবে কদরের রাতের চেয়ে মর্যাদাবান বলে ধারনা করা, এ কথা প্রচার করা হয়। এটি একটি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা কথা।
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন পালন সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ঃ
কোন ব্যক্তির জন্ম দিবস পালন করা ইসলাম সম্মত নয়। এটা হল খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ সহ বিভিন্ন অমুসলিমদের রীতি। ইসলাম কারো জন্ম দিবস পালন অনুমোদন করে না, বরং তা নিষেধ করে।
এর প্রমাণসমুহ নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
(ক) দ্বীনে ইসলাম আজ পর্যন্ত অবিকৃত আছে এবং ইনশাআল্লাহ থাকবে। ইসলামে সকল হুকুম আহকাম, আচার-অনুষ্ঠান নির্ধারিত ও কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিবস বা মীলাদ পালনের কথা কোথাও নেই। এমনকি নবী প্রেমের নজীরবিহীর দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সাহাবায়ে কিরামদের মধ্যে কেহ এ ধরণের কাজ করেননি। তাই ঈদে-মীলাদ পালন করা বিদআত। আর বিদআত জঘন্য গুনাহের কাজ।
(খ) ইসলামে কম হলেও একলাখ চব্বিশ হাজার নবী, তারপর খুলাফায়ে রাশেদীন ও অসংখ্য সাহাবা, মনীষী আওলিয়ায়ে কিরাম জন্ম গ্রহণ করেছেন ও ইন্তেকাল করেছেন। যদি তাদের জন্ম বা মৃত্যুদিবস পালন ইসলামে সমর্থিত হয় বা সওয়াবের কাজ হত তাহলে বছরের কোন একটি দিন অবসর পাওয়া যাবে না, প্রতিদিন শত শত জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী পালন করতে হবে।
(গ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন পালনের প্রস্তাব সাহাবায়ে কেরাম রাঃ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। যেমন ইসলামী সন যখন চালু করা হয় তখন উমর রাঃ সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বৈঠকে বসলেন। কোন এক স্মরণীয় ঘটনার দিন থেকে একটা নতুন সন প্রবর্তন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল। কেহ কেহ প্রস্তাব করলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ থেকে সন গণনা শুরু করা যেতে পারে। উমর রাঃ এ প্রস্তাব বাতিল করে দিয়ে বললেন, এ পদ্ধতি খৃষ্টানদের। উমর রাঃ এর এ সিদ্ধান্তের সাথে সকল সাহাবায়ে কেরাম একমত পোষন করলেন। এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরত থেকে ইসলামী সন গণনা আরম্ভ করলেন।
(ঘ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাগন ছিলেন সত্যিকারার্থে নবী প্রেমিক ও তার অনুসারী। নবী প্রেমের বে-নজীর দৃষ্টান্ত তারাই স্থাপন করেছেন। তারা কখনো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিনে ঈদ বা অনুষ্ঠান পালন করেননি। যদি এটা করা ভাল হত ও মহব্বতের পরিচায়ক হত তবে তারা তা অবশ্যই করতেন। আর জন্মোৎসব পালন করার কালচার সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা ছিলনা তা বলা যায় না। কেননা তাদের সামনেই তো খৃষ্টানরা ঈসা আঃ এর জন্মদিন ( বড়দিন) উদযাপন করত।
(ঙ) জন্ম দিবস কেন্দ্রিক উৎসব, অনুষ্ঠান খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য অমুসলিমদের ধর্মীয় রীতি। যেমন বড়দিন, জন্মাষ্ঠমী, বৌদ্ধপূুর্ণিমা ইত্যাদি। তাই এটা মুসলিমদের জন্য পরিত্যাজ্য। বিধর্মীদের ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান যতই ভাল দেখাকনা কেন তা মুসলিমদের জন্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। এ কথার সমর্থনে কয়েকটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি - রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-“যে ব্যক্তি কোন জাতির সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে।”
আজানের প্রচলনের সময় কেউ কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে প্রস্তাব করলেন, সালাতের সময় হলে আগুন জ্বালানো যেতে পারে। কেউ প্রস্তাব করলেন ঘন্টাধনি করা যেতে পারে। কেউ বললেন বাঁশী বাজানো যেতে পারে। কিন্তু রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। বললেন আগুন জ্বালানো অগ্নি পুজারী পারসিকদের রীতি। ঘন্টা বাজানো খৃষ্টানদের ও বাঁশী বাজানো মুশরিকদের রীতি। মদীনার ইহুদীরা আশুরার দিনে একটি রোযা পালন করত। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন, যাতে তাদের সাথে সাদৃশ্যতা না হয়। হিজরী সনের প্রবর্তনের সময় অনেকে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন থেকে সন গণনার প্রস্তাব করেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়, খৃষ্টানদের অনুকরণ হওয়ার কারণে। (ইসলামী হাউজ/সুন্নাহ ট্রাষ্ট)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন