শুক্রবার, জানুয়ারী ২৫, ২০১৩

শিক্ষকের মূল্যায়ন : মনে পড়ে সারাক্ষণ

ছাত্র জীবনে আমার এক সহপাঠি একটা মজার গল্প বলেছিলো। একবার এক বিয়ে বাড়িতে কণ্যা পক্ষের এক মুরুব্বী বাড়ির চ্যাংড়াদের ডেকে বললেন “আরে ভদ্র লোকের ছেলেরা বরযাত্রী হয়ে এসেছে তাদের খানা পিনার ব্যবস্থা করা হয়েছে তো?” উত্তরে কণে পক্ষের লোকেরা বল্লো জি জি মোরলজি খানাপিনা সব দেওয়া হয়েছে। মোড়লজি আবার জিজ্ঞাসা করলেন কি দিয়েছিস? এবার সবাই এক সাথে বলে উঠলো “এক খানা করে রুটি আর দুটো করে কাঠালের রুয়া দেয়া হয়েছে।” এতে মোড়ল রেগে জেয়ে বললেন, “আরে গাঁধার গাঁধারা! এই কি কোন খানা হলোরে- দে আর আধখানা করে রুটি আর একটা করে কাঁঠালের রুয়া, বরযাত্রিরা খেতে থাক বসে বসে।”
৩৭ বছর আগের শোনা গল্পটি একটু কাজে লেগে গেলো। বাস্তবে এর একটু সাদও পেলাম। গল্পটি মনে পড়লো আমাদের একটি প্রাপ্তির খবর পেয়ে। তবে ঐ গল্পের সাথে একটু পার্থক্য আছে। বরযাত্রীরা পড়ে যা পেলেন তা পূর্বের প্রাপ্তির অর্ধেক। আর আমরা যা পেলাম তা পূর্বের প্রাপ্তির ৪ গুন বেশি।
একটু আগেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে খবরটি জানলাম। চাকুরি জাতীয় করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোটের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার নাকি তাদের বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে সন্তুষ্ট করেছেন। আর বর্ধিত বাড়ি ভাড়া নাকি পূর্বের প্রাপ্তির ৪ গুন বেশি দিয়েছেন। অর্থাৎ পূর্বের বাড়ি ভাড়া ১০০ টাকার পরিবর্তে এখন পাওয়া যাবে ৫শত টাকা করে।
এ যেন ঐ আপ্যায়নকারীর মতো মিনি পিরিচের উপর ছোট ছোট দু’খানা বিস্কুট পরিবেশন করেই বললেন সবটুকোই খেয়ে ফেলবেন কিন্তু। না হলে খুবই মাইন্ড করবো।
সহকার্মী শিক্ষক বন্ধু জুনায়েদ ফকির বলেছিলেন, সরকারের দেয়া বাড়ি ভাড়ায় পোড়াদহ ষ্টেশনের যাত্রীদের বাড়ি ভাড়াও পোজে না (মেটে না)। ঐ ষ্টেশনে রাত যাপনের জন্য পাটি ভাড়া পাওয়া যায়। প্রতিটি পাটির জন্য ভাড়া দিতে হয় প্রতি রাতে ৫ টাকা। তাহলে প্রতি মাসে ভাড়ার পরিমান দাঁড়ায় ১৫০ টাকা। অর্থাৎ পাটি ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে আরও গুনতে হবে ৫০ টাকা। তাই খাবারের টাকায় টান পড়বে বিধায় নিজ স্ত্রীকে পড়ের বাড়িতে ঝি এর কাজে পাঠানো যায় কি না ভাবলেন, আর একটু আগাম করে ভাবলেন, স্ত্রী সেখানে যা খাবার পাবে তার সাথে আর একটু চেয়ে নিতে পাড়লেই কোন মোতে দু’জনের পেট চলবে এবং রাতে পাটি ভাড়া করে ষ্টেশনে থাকবে।
যে দেশে শিক্ষকের মর্যাদা নেই- মূল্যায়ন হয় না, রোগে চিকিৎসা নেই, আবাসনের ব্যবস্থা হয় না- সে দেশের ষ্টেশনের আলোয় ভাড়ার পাটিতে বসে শিক্ষক আবৃতি করবে “তালেব মাষ্টার কবিতা”
শিক্ষা বোর্ডের বিল নাই
হয়তো এবারের টাকা আসতে আসতে শেষ হবে আয়ু। তাই
শত ছিন্ন জামাটি কাঁধে ফেলে এখনও পাঠ শালায় যাই
ক্ষীণকণ্ঠে পড়ায়ঃ
হে মোর চিত্ত পূন্য তীর্থে জাগরে ধীরে
এই ভারতের মহা মানবের সাগর তীরে....
মনে মনে বলি:
যদিই ফোটে একদিন আমার এই সব সূর্যমুখীর কলি
ইতিহাস সবই লিখে রেখেছে। রাখবে-
কিন্তু এই তালেব মাষ্টারের কথাকি লেখা থাকবে?
আমি যেন সেই হতভাগা বাড়িওয়ালা
আলো দিয়ে বেড়াই পথে পথে কিন্তু
নিজের জীবনই অন্ধকার মালা।
[গল্প লেখক: সুপ্ত সাগর]

1 টি মন্তব্য: