বুধবার, ফেব্রুয়ারী ২৭, ২০১৩

কুষ্টিয়ায় ছাদ থেকে পড়ে ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু


আব্দুম মুনিব : কুষ্টিয়া আদ্বদীন হসপিটালের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান শাফিনা নার্সিং ইন্সটিটিউটের এক ছাত্রী প্রতিষ্ঠানের ৫ তলা ছাদ থেকে পড়ে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নার্সিং ইন্সটিটিউটের ছাত্রীরা কর্তৃপক্ষের উপর অভিযোগ করে বিক্ষোভ করেছে। ছাত্রীরা জানায়, নার্সিং ইন্সটিটিউটের হাউজ কিপার কমলা মল্লিক ও আবাসিক কম্পিউটার শিক্ষিকা লিপি দাসের অত্যাচারের কারণেই নিহত হয়েছেন সোনিয়া (২১)। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদোষী সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ৯ টায় শহরের ছয়রাস্তার মোড়ে আদ্বদীন প্রাইভেট হসপিটালের সাথে অবস্থিত শাফিনা নার্সিং ইন্সটিটিউটের ৫ তলার ছাদ থেকে পড়ে নিহত হন ওই ইন্সটিটিউটের তৃতীয়বর্ষের ছাত্রী সোনিয়া (২১)। নিহত ওই ছাত্রী ঝিনাইদহ জেলা শৈলকুপা থানার কদমতলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের কন্যা। তিনি গত তিন বছর যাবৎ ওই নার্সিং ইন্সটিটিউটে লেখাপড়া করতেন। বিষয়টি আত্মহত্যা না হত্যা নাকি দুঘর্টনা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি তদন্ত শাহ আলম। তিনি বলেন, বিষয়টি জটিল। তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে আসলে কি হয়েছিলো। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ অরবিন্দু পাল জানান, হাসপাতালে আসার পূর্বেই মেয়েটি মারা যায়। প্রাথমিক ভাবে দেখা গেছে মেয়েটি মাথায় আঘাতের কারণে মারা গেছে। নার্সিং ইন্সটিটিউটের ছাত্রীরা জানান, হাউজ কিপার কমলা মল্লিক ও আবাসিক কম্পিউটার শিক্ষক লিপি দাস অমানবিক নির্যাতন করে তাদের ওপর। শারিরিক এবং মানসিক নির্যাতন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। নার্সিং ইন্সটিটিউটের আবাসিক হলে মোবাইল ব্যাবহার নিষিদ্ধ তারপরও প্রয়োজনের তাগিদে কিছু কিছু ছাত্রী লুকিয়ে মোবাইল ব্যাবহার করতো। কিন্তু মোবাইল ব্যাবহারের বিষয়টি কর্তৃপক্ষ জানতে পারলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয় বলে জানায় ছাত্রীরা। গতকাল সকালে হঠাৎ ছাত্রী নিবাসের প্রতিটি ঘরে ঢুকে ওই দুইজন মেয়েদের ব্যাগ লাগেজ সহ ঘরের আসবাবপত্র তল্লাশীর নামে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে থাকে কারোর কাছে মোবাইল আছে কিনা? এসময় সোনিয়া জিকে কলোনী সংলগ্ন ছাত্রী নিবাসের ৫ তলার ছাদে মোবাইলে কথা বলছিলো। তল্লাশীর খবর চলে যাই ছাদে। এর পরই সে ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। সহপাঠিরা তাকে হাসপতালে নেয়ার পথে সোনিয়ার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে ওই আদ্বদীন প্রাইভেট হসপিটাল কর্তৃপক্ষ তাদের তালাবন্দী করে। তারা সেসময় ভিতরে ব্যাপক ভাংচুর করে এবং লেপ তোষকে অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তালা খুলে দেয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা জানায়, ইন্সটিটিউটের তাদের নূন্মতম স্বাধীনতা নেয় হাউজ কিপার তার ইচ্ছামত আমাদের যে ভাবে খুশি সে ভাবে চালান। এব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ রবিউল ইসলাম জানান , বিষয়টি জটিল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেই দোষী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন নার্সিং ইনস্টিটিউটে মোবাইল ফোন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও সোনিয়া সেই নিষেধ অমান্য করে কথা বলতে ছাদে ওঠে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ময়না তদন্ত শেষে নিহতের পরিবার সোনিয়ার লাশ নিজ বাস ভবনে নিয়ে গেছে। ছাত্রীনিবাস নামক জেলখানা মোবাইল আছে ধরা পরলে জরিমানা ৫ হাজার টাকা নার্স হওয়ার স্বপ্ন পূরন হল না সোনিয়ার সপ্ন থেকে গেলো তার বাবা মায়ের একটি বাধা যেন সব কিছু তছনছ করে দিলো। একারনেই কুষ্টিয়া শাফিনা নার্সিং ইন্সটিটিউটের ছাত্রীবাসটি জেলখানার সাথে তুলনা করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা। খেতে ঘুমাতে পড়ালেখা করতে এবং দৈনন্দিন সব কাজেই তাদের ওপর অত্যাচার হয়। ছাত্রীরা বলছেন, আদ্বদীন কর্তৃপক্ষের সামনে একের পর এক তাদের ওপর অত্যাচারের বর্ণনা পুলিশের কাছে করলেও নিরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলো আদ্বদীন কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, আমরা এখানে এসএসসি এবং এইচএসএস পরীক্ষায় পাশ করে অনেক টাকা খরচ করে ভর্তি হয়েছি কিন্তু একবিংশ শতাব্দির এ যুগে আমাদের আত্বীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগের জন্য নিজেদের কোন ব্যাবস্থা নাই। তারা জানায় আমাদের মোবাইল ব্যাবহার করতে দেওয়া হয় না। কেউ লুকিয়ে ব্যাবহার করলে তাকে জরিমানা হিসাবে ৫ হাজার টাকা গুনতে হয়। যদি কোন প্েরয়াজনে কর্তৃপক্ষে মাধ্যমে মোবাইলে কথা বলতে গেলে ৪ টাকা মিনিটে কথা বলতে হয়। এছাড়া বাড়ির থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগের জন্য কর্র্তৃপক্ষে কাছে কেউ মোবাইল করলে জরুরী কথা হলেও আমাদের জানানো হয় না। নার্সিং ইনস্টিটিউটে একটি সাদাকালো টেলিভিশন রয়েছে যা দেখতেও হাজার বাধ্যবার্ধকতা। ছাত্রীদের অভিযোগ ঢাকা থেকে পরিদর্শনে এসে তাদের ইন্টারনেট ব্যাবহারের কথা বললেও তাদের সেটা ব্যাবহার করতে দেওয় হয় না। ছাত্রীদের এই অভিযোগ নিয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ রবিউল ইসলাম জানান, আজ আমার এই প্রতিষ্ঠানে প্রথম উপস্থিতি। আমার কাছেও মনে হয়েছে এটি একটি জেলখানা। এই দিকে প্রতিষ্ঠানে বাইরে দাড়িয়েছিলেন মডেল থানার ওসি তদন্ত শাহ আলম বলেন আমার কাছেও তাই মনে হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন