বুধবার, ফেব্রুয়ারী ২৭, ২০১৩

র‌্যাগিং নিয়ে ইবিতে রাতভর ছাত্রশিবির-ছাত্রলীগ উত্তেজনা : ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর

রাশেদুন নবী রাশেদ : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-২০১৩ ইং শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ ¯œাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা ভর্তিচ্ছুদের র‌্যাগ দেয়াকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে গতকাল সোমবার রাতভর শিবির ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে এসময় ভর্তিচ্ছুদের মাঝে চরম আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা এক ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর করেছে। মারধরের ঘটনায় বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অজ্ঞাত ১০-১৫ জন নেতাকর্মীকে আসামী করে ইবি থানায় মামলা করেছে। অস্থিতিশীল পরিবেশ এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র মতে- গত সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের সভাপতি মেহেদি হাসানসহ কয়েকজন কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেটে ইবির ২০১২-২০১৩ ইং শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ ¯œাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা কয়েকজন ভর্তিচ্ছুকে র‌্যাগ দিচ্ছিলেন। এসময় শিবিরের দু’জন কর্মী ভর্তিচ্ছুদেরকে নিজেদের আত্মীয় বলে দাবি করে বাধা দিতে গেলে মেহেদি তাদেরকে চড় থাপ্পড় মারে। এদিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শিবির কর্মীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রশিবিরের ১০-১২ জন নেতাকর্মী দেশীয় ব্লকের ২০৯ নং কক্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য মশার কয়েল দিতে যায়। এসময় ওই রুমে কোন ভর্তিচ্ছু ছাত্র না দেখে শিবির কর্মীরা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নাই কেন এনিয়ে মেহেদীকে জিজ্ঞাসা করেন। ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী তার রুমে কোন ভর্তিচ্ছু থাকতে পারবে না বলে জানালে শিবির কর্মীদের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শিবিরের নেতাকর্মীরা মেহেদির উপর চড়াও হয়। এসময় মেহেদি প্রাণ বাঁচাতে হলের দোতলার করিডোর থেকে নিচে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় সে আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা নেয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে তার অবস্থা গুরুতর নয় বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান। এ খবরে রাত সোয়া ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগ ও শিবিরের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু হলের নিচে করিডোরে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। রাত ১টার দিকে বঙ্গবন্ধু হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান হলে এসে উভয় পক্ষকে সেখান থেকে সরিয়ে দেন। পরে রাত দেড়টার দিকে প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং ছাত্রউপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান এসে হল প্রভোস্টসহ উভয় পক্ষের সাথে বসে সমঝোতার চেষ্টা করেন। রাত ৩টার দিকে তাদের মধ্যে সমঝোতা করার পর হল প্রভোস্ট বাদী হয়ে এ বিষয়ে ইবি থানায় অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আহত ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্র না হয়েও দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ ভাবে ওই হলে অবস্থান করছিলেন। তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ছাগল চুরি, ভাসমান দোকানের প্লেট, টিউবওয়েল চুরিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ক্যাম্পাসে ফাঁও খাওয়ায় ওস্তাদ মেহেদীকে শিক্ষার্থীরা ‘ফাঁও মেহেদী’ নামেই জানে। এ বিষেয়ে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান বলেন, ‘শিবিরের কর্মীরা রুমে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ঢোকানোর কথা বলে আমার উপর অতির্কত হামলা করেছে।’ বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাজ্জাদুল আলম বলেন, হলের কয়েক ছাত্র ২০৯ নং কক্ষে ভর্তিচ্ছুদের জন্য মশার কয়েল দিতে গেলে সে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং দরজা বন্ধ করে দিতে বলে। এর প্রতিবাদ করলে তার সাথে কয়েকজনের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে সে দোতলা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। এঘটনার সাথে শিবিরের সম্পৃক্ততা নেই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে আমি এবং ছাত্র উপদেষ্টা ঘটনাস্থলে আসি। ভর্তিকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যেই আমরা তাদের উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দিয়েছি।’ ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় রাতে পৌনে ৩টার দিকে বঙ্গবন্ধু হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনকে আসামী করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একটি মামলা করেন। ইবি থানার ওসি শেখ আতিয়ার রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন