বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ২৭, ২০১৪

ইবি’র ভিসি অফিসে আবারও বহিরাগত চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রলীগের তালা॥ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ প্রশাসন

রাশেদুন নবী রাশেদ, ইবি প্রতিনিধি- আবারো চাকরির দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অফিসে তালা ঝুলে ও ক্যাম্পাসের গাড়ী চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চাকরি প্রত্যাশী বহিরাগত ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডাররা। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১০টায় এ ঘটনা ঘটে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তালা ভেঙ্গে দিয়ে চাকরি প্রত্যাশিদের চাকরীর আশ্বাসে দিলে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে গত বছরও তারা একই দাবিতে ভিসি অফিসে একাধিকবার তালা লাগানো ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। বহিরাগতদের অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বারবার এসব আইন লঙ্ঘন করে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি।প্রতক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, একবার নয় দুইবার নয় তিনের অধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অফিসে তালা ও ভাংচুর চালিয়েছে বহিরাগত চাকরী প্রত্যাশী ছাত্রলীগ ক্যাডররা। গতকালও তার ধারাবাহিকতায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও চাকরি প্রত্যাশী আশিকুর রহমান জাপান, তৌফিকুর রহমান হিটলার, মাহমুদ হাসান লেলিন,মিজানুর রহমান টিটু, কাসেম, শিমুল ও মাসুদসহ ৭/৮ জন নেতাকর্মী ভিসি অফিসে এসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস থেকে চলে যেতে বলে। এসময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস থেকে বের হতে অস্বীকৃতি জানালে ছাত্রলীগ নেতারা তাদের অফিস থেকে জোর করে রেব করিয়ে দেয়। পরে তারা ভিসি অফিসের এক কর্মচারীর কাছ থেকে চাবি নিয়ে অফিসের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিসি অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, অফিসে ঢুকেই ছাত্রলীগ নেতারা আমাদেরকে অফিস থেকে রেব হয়ে যেতে বলেন এবং চাকরি না দেওয়ার কারনে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অকথ্য ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। তিনি আরও জানান, ঘটনার সময় ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার টিএসসিসিতে একটি সেমিনারে ছিলেন। পরে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মো.শাহিনুর রহমান, প্রক্টর প্রফেসর ড.জাহাঙ্গীর হোসেন, ছাত্র-উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান, ইবি থানার ওসি শরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে পৌছান। এসময় প্রশাসনের নির্দেশে তালা ভেঙ্গে ফেলা হয়।এদিকে ছাত্রলীগ নেতারা অফিসে তালা লাাগনোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গাড়ি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। তাদের বাধার মুখে বেলা ১২টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো গাড়ি ক্যাম্পাসে ছেড়ে যেতে পারেনি। দুপুর দুইটার গাড়ি প্রায় দেড় ঘন্টা বিলম্বে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিকাল ৩ টার দিকে ভিসি অফিসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি ও চাকরি প্রত্যাশীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে চাকরি প্রত্যাশিদের দাবির বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এবং তাদেরকে এ বিষয়ে আশ্বস্থ করা হয়। বৈঠক থেকে প্রশাসন ভবন থেকে বেরিয়ে এসে চাকরি প্রত্যাশিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করে দেয়। এভাবে চাকরী প্রত্যাশী বহিরাগত ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডাররা বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার আইন লঙ্ঘন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন এসকল অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে অদৌ কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে দিলে অল্পদিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়বে বলে ধারনা করছেন সচেতন শিক্ষক মহল।ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও চাকরি প্রত্যাশি আশিকুর রহমান জাপান বলেন, ‘অ্যাডহক ভিত্তিতে শৈলক’পা থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদকের এক আত্মীয়কে বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে লিপিকুশলী পদে চাকরি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ ছাত্রলীগের অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিগত সময়ে একাধিকবার চাকরির ব্যাপারে আশ্বাস দিলেও এখনও তা পুরণ করেনি। তাই আমরা ক্ষুব্ধ হয়েই ভিসি অফিসে তালা দিয়েছি।’ এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি শুনে তাৎক্ষনিক ভিসির কার্যালয়ে গিয়ে তালা খোলার ব্যবস্থা করি। একটা গুজবের দরুন সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিলো, পরে তাদেরকে নিয়ে বসে বিষয়টির সমাধান করা হয়েছে।’ উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ মার্চ চাকরির দাবিতে চাকরি প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা ভিসি অফিসের অর্ভ্যথনা কক্ষে ভাংচুর চালায়। ওই ঘটনার ৫ দিন পরেই ৩০ মার্চে তারা একই দাবিতে আবার ভিসি অফিসে ভাংচুর চালায়। ওই বছরের ৭ নভেম্বর তারা একই দাবিতে ভিসি অফিস ভাংচুর করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন