রবিবার, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৪

কুষ্টিয়া চিনিকলে উদ্বোধনী যাত্রায় মেশিন নষ্ট : চাষীদের মাঝে হতাশা

স্টাফ রিপোটার : ৫০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে কুষ্টিয়া সুগার মিলে ২০১৪-১৫ আখ মাড়াই মৌসুম উদ্বোধনের শুরুতেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। উদ্বোধনের সময় হটাৎ করেই এ যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে কর্তৃপক্ষ মিল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। আগে থেকে ক্রয়কৃত শত শত মন আখ মিলে অবস্থিত কেনকরিয়ার আশেপাশে যততত্র ফেলে রাখা হয়েছে।  আর এতে করে চাষীদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। এদিকে এ ব্যাপারে জানতে তৎক্ষনিক মিলের কোন কর্মকর্তাকে না পাওয়া গেলেও মিলের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানালেন ষ্টটাট দেওয়ার চাবিতে গোলমাল হয়েছে। অন্যদিকে মাড়াই মৌসুম শুরুর আগে যন্ত্রপাতি পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করাতে উপস্থিত সরকারী কর্মকর্তা ও সরকার দলীয় নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ আখ নিক্ষেপর মধ্য দিয়ে মাড়াই মৌসুম উদ্বোধন করতে গেলে মেশিন বন্ধ অবস্থায় তিনি মিলের কেনকেরিয়ারে আখ নিক্ষেপ করেন। এদিকে মাড়াই মৌসুম উদ্বোধন হওয়ার সাথে সাথে এমন বিপর্যয়ে কর্মরত সাধারণ শ্রমিককর্মচারীসহ আখচাষীরা উদ্বেগ উৎকন্ঠায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। মেশিনে এমন সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে শত শত মন আখ শুকিয়ে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন চাষীরা। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলা কারণে এমনটি হয়েছে তাই সাধারণ জনগনের মধ্যে মারাত্বক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মিলটিতে দীর্ঘদিন যাবত সিবিএ নেতাদের লুটপাটের রাজত্ব চলছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাধারণ শ্রমিক ও আখচাষীদের নিকট থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে গতকাল শনিবার দুপুর ১২ টায় মিলের ব্যবস্থাপনা
পরিচালক প্রকৌশলী আহসান সিদ্দিক জানান, মিলটি ৫০ বছরের পুরনো। মিলের ৩নং বয়লারের একটি টিউব সমস্যা দেখা দিয়েছে ৩/৪ ঘন্টার মধ্যে মিল চালু করা সম্ভব হবে। 
অপরদিকে কুষ্টিয়া সুগার মিল ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ২৩ কোটি টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ২৭ কোটি টাকা লোকসানে পড়ে। চলতি আখমাড়াই মৌসুমে কুষ্টিয়া সুগার মিল ৬ হাজার ৩ শত মেঃটন চিনি উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা নির্ধারন করে। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ২০১৪-১৫ আখ মাড়াই মৌসুমের জন্য ৯০হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৭হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ধার্য করা হয়েছে। 
উল্লেক্ষ্য কুষ্টিয়ার জেলার সর্ব বৃহৎ এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান বেহাল দশার মধ্য পড়েছে। চিনি কলের গোডাউনে তিন মৌসুমের প্রায় ৮হাজার মেট্রিক টনের ৩০ কোটি টাকার চিনি মজুদ রেখে চলতি বছরের মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন হয়। গত তিন মৌসুমের উৎপাদিত চিনির সিংহভাগ এখন অবিক্রিত অবস্থায় গোডাউনে পড়ে রয়েছে। যার অধিকাংশ খাওয়ার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। বাজারে প্যাকেটজাত চিনির মুল্য কম হওয়াতে এই চিনি বিক্রি হচ্ছে না। মিল কর্তৃপক্ষ চিনি বিক্রির জন্য কয়েক দফা চিনির মুল্য কমানোর পরেও মিলের চিনি বিক্রি হচ্ছে না। এদিকে চিনি বিক্রি না হওয়ায় গতবার মৌসুমে চাষীদের পাওনা পরিশোধে মিল কর্তৃপক্ষকে বিপাকে পড়তে হয়েছিল। কুষ্টিয়া চিনি কলের গোডাউনে গত তিন মৌসুমের উৎপাদিত চিনির মধ্য ৭হাজার ৯৩ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত পড়ে আছে যার বর্তমান ৩৭টাকা কেজি রেটে বাজার মুল্য ২৯কোটি ৩৪লাখ ৪১হাজার টাকা। কুষ্টিয়াবাসীর প্রত্যাশা সকল অবস্থাপনা মিল কর্মকর্তা ও সিবিএ নেতাদের দূর্ণীতি দূর করে এই প্রতিষ্ঠন টাকে রক্ষা করতে সকল কর্তৃপক্ষ সচেষ্ঠ হবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন